কক্সবাজারে খুনের মামলায় ২ আসামির যাবজ্জীবন

fec-image

কক্সবাজারে মাত্র ১ হাজার ৭শ টাকার জন্য ফরিদা বেগম (৪০) নামের এক নারীকে খুনের মামলায় ২ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করেছে আদালত। অর্থ অনাদায়ে আরও এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত।

আসামিরা হলেন, ফরিদপুর জেলার বেদেরগঞ্জ থানার আবুল খালাসী গ্রামের মো. হারুন ছেলে মো. ইসমাইল এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বড় মাছিরপুর গ্রামের ছিদ্দিক আহমেদের ছেলে মনির।

মঙ্গলবার (৩১ মে) কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রামু থানার মামলা নম্বর ১২/২০০১ (জিআর মামলা নম্বর : ৪৫/২০০১ এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৪৯/২০০১) শুনানি শেষ রায় ঘোষণা দেন বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন।

দণ্ডিত আসামি ২ জনই আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম।

ভিকটিম কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ীর মাঠে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দির মাদিমপুর গ্রামের মো. মুসলিমের স্ত্রী।

মামলার আরেক আসামি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার রোয়াচর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে শালু প্রকাশ চালু মৃত্যুবরণ করায় রায়ে তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

ভাঙ্গারী পণ্য কেনার জন্য একই এলাকায় ভাড়া বাসার বাসিন্দা, ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মো. ইসমাইলকে ১ হাজার ৭শ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন ফরিদা বেগম। ১৫ থেকে ১৬ দিন পরও মো. ইসমাইল তাকে ভাঙ্গারী পণ্য না দেওয়ায় ফরিদা বেগম ভাঙ্গারী পণ্য দেওয়ার জন্য ইসমাইলকে পিড়াপীড়ি করতে থাকে। এ অবস্থায় ভাঙ্গারী পণ্য দেওয়ার কথা বলে ২০০১ সালের ১৯ মার্চ ভোর ৫টার দিকে ফরিদা বেগমকে মো. ইসমাইল তার কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ীর মাঠের ভাড়াবাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে ফরিদা বেগমকে তার স্বজনেরা খোঁজখঁজি করে কোথাও না পাওয়ায় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মো. ইসমাইলকে সন্দেহজনকভাবে টেকনাফ থেকে আটক করে। মো. ইসমাইলকে আটক করার পর সে নিজে এবং মনির ও শালু প্রকাশ চালু নামক আরও ২ ব্যক্তি সহ ফরিদা বেগমকে ধরে নিয়ে যায়। পরে একইদিন সকাল ১১টার দিকে রামু উপজেলার পানেরছড়া ঢালার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে জঙ্গলের কাছে নিয়ে তাকে খুন করে বলে স্বীকার করে। খুন হওয়া ফরিদা বেগমের কাছে থাকা ৬ হাজার নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও খুনিরা লুট করে। মো ইসমাইলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উল্লেখিত স্থান থেকে ফরিদা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মো ফরিদুল আলম বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে ফৌজদারী দণ্ড বিধির ৩০২৩৪ ধারায় কক্সবাজারের রামু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর : ১২/২০০১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৪৫/২০০১ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৪৯/২০০১ ইংরেজি।

২০০২ সালের ৮ এপ্রিল মামলাটি বিচারের জন্য চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামি পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, জব্দ করা খুনের আলামত প্রদর্শন, সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, ফরেনসিক প্রতিবেদন যাচাই ও পর্যালোচনা, যুক্তিতর্ক শেষ হয়। পরে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন তিন জন আসামির মধ্যে ২ জন, যথাক্রমে মো. ইসমাইল ও মনিরকে ফৌজদারী দণ্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারা অনুযায়ী ঘটনার ২১ বছর পর উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন। অন্য আসামি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার রোয়াচর গ্রামের বাদশা মিয়ার পুত্র শালু প্রকাশ চালু মৃত্যুবরণ করায় রায়ে তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, কারাদণ্ড
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন