গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

জোরালো কূটনীতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবেনা

fec-image

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের এখনও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি। আন্তর্জাতিক মহল চাপ না দিলে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সে জন্য বাংলাদেশকে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।

বুধবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপে ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি মনে করেন, মানবিক সংকট তৈরি করায় রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাসহ বিভিন্ন দেশ যেমন অবরোধ দিয়েছে, তেমনি অবরোধ আরোপ করলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যাকে বৈশ্বিক সংকট উল্লেখ করে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের একার সংকট নয়। এটি বৈশ্বিক সংকট। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না বিশ্ব। ভারত, চীন, জাপান চাইলে রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান সম্ভব। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকেও এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এই সংকট সমাধান করা সবার জন্য প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবার-পরিকল্পনা, শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করে আসছে। এত দিন ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। এ সমস্যার সমাধান বহুপক্ষীয় আলোচনা ও চাপ ছাড়া সম্ভব নয়।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দেশের সীমান্ত থাকলেও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুললেও মিয়ানমারের সঙ্গে তা গড়ার চেষ্টা করা হয়নি। মিয়ানমারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল।

এ গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে হবে।

নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমরা ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে যেতে পারি। আমরা বিষয়টি নিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেখানে বলেছিলাম, ফোরামের যেসব দেশ রয়েছে, তাদের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারি।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমরা চীনের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখনো ইতিবাচক কিছু পাইনি। তবে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। মিয়ানমার একটি পাইলট প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। মিয়ানমার আসিয়ানভুক্ত একটি দেশ। আমরা আসিয়ানের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি। তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। আসিয়ান দেশগুলোর মাধ্যমেও আমরা চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছি।’

সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুর; তারপর চীন, থাইল্যান্ড, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও ভারত। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে মিয়ানমারের।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদ করছে। আবার তারাই মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এটা আসলে তাদের দ্বৈত অবস্থান।

এ বৈঠকে দেশের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে কথা বলেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ কার্যালয়ের সিনিয়র প্রটেকশন অফিসার সুভাস ওস্টে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য তাঁরা কাজ করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন