সোলার প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ, ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ১২০ পরিবার উচ্ছেদ আতঙ্কে
রাঙামাটি কাপ্তাইয়ের দুর্গম ব্রিকফিল্ড এলাকায় সোলার প্লান্ট স্থাপনের উদ্যােগ গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে, সেখানে দীর্ঘ ৭৯ বছর যাবৎ বসবাসকারী ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ১২০টি পরিবারে মধ্যে উচ্ছেদের আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাঙামাটির কাপ্তাই ৪নং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ব্রিকফিল্ড এলাকা।
এলাকাটি তিনপাশে পাহাড় একদিকে কর্ণফুলী নদী রয়েছে। সেখানে ১৯৪৫ সাল হতে ভূমিহীন, অসহায় ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বসবাস করে আসছে। এখান থেকে ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দীর্ঘ বছর যাবৎ বসবাস করার সুবাধে ব্রিকফিল্ড এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে মসজিদ, মক্তব, সরকারি স্কুল, কবরস্থান অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপসানালয়সহ শত বছরের পুরোন গাছপালা। পিডিবি ব্রিকফিল্ড এলাকায় সোলার প্লান্ট স্থাপন করবে বলে ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
ইতিমধ্যে শতবছরের জাতীয় গাছপাল কর্তন করার জন্য লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় এলাকায় ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ১২০টি পরিবার উচ্ছেদের আতঙ্কে আছেন।
তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ও প্রয়াত নুরুল ইসলাম, রফিক আহমদ, হারিস আহমেদ, সিরাজুল ইসলামের পরিবারকে উচ্ছেদ নয়, বসবাসের জন্য জায়গা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বিষটি জানার পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছে।
লিখিত আবেদনে জানা যায়, ব্রিকফিল্ড এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে অসহায় গরীব, দুস্থ, ভূমিহীন, হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। বসবাসকারী সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের পক্ষে। তাদের উচ্ছেদ করা হলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তাই তাদের ব্রিকফিল্ড এলাকার আশপাশে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করে দেয়ার জন্য জোর সুপারিশ করা হয়।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, আমরা সরকারে সোলার প্লান্ট হোক তা চাই। কিন্ত আমাদের উচ্ছেদ না করে মাথা গোঁজার ঠাই করে দেয়া হোক।
তারা জানান, কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উচ্ছেদের বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। আমাদের লাগানো গাছসহ বিভিন্ন গাছে লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা হলে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মক্তবে পড়ুয়া ছোটছোট শিশু-কিশোরদে কীঅবস্থা হবে। তাই, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চায়।
ইতিমধ্যে কাপ্তাইয়ের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইস্রাফিল হোসেন ব্রিকফিল্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, দেশের জন্য যুদ্ধ করে ৪ মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে। এখনো একজন মুক্তিযোদ্ধা অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তাই তাদের উচ্ছেদ কতটুকু যুক্তিযুক্ত। বিষয়টি সুবিবেচনা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উচ্ছেদ আতঙ্কের ঘটনা শুনে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এছাড়া ইতিমধ্যে কয়েটি প্রশাসনিক বিভাগ হতে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
কাপ্তাই ৪নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, সরকারিভাবে সোলার প্লান্ট করবে ঠিক আছে। তবে বসবাসকারী উচ্ছেদ করে নয়। এদের তো কোন উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হয়নি। সুতরাং আতঙ্কের কিছু নেই।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বর্তমানে ব্রিকফিল্ড এলাকায় নবায়ন যোগ্য জ্বালানী নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ব্রিকফিল্ড ৩৪.৭৭ একর জায়গা রয়েছে। পূর্বের বিভিন্ন স্থাপনা যেমন পিডিবি সুইপার কলোনি, প্রাইমারী স্কুল, মসজিদ, কবরস্থানসহ ইত্যাদি বাদ দিয়ে ২৩.০৬ একর খালি জায়গায় ৭.৬ মেগাওয়াট সোলার প্লান্ট তৈরির করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এটি স্থাপিত হলে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে ১০% বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
এদিকে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহ এক প্রশ্নের জবাবে জানান, সরকার বিউবো অভ্যন্তরে ব্রিকফিল্ড এলাকায় সোলার প্লান্ট প্রকল্প করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা তা বাস্তবায়ন করব। তবে কাউকে উচ্ছেদ করে নয়। এখনো কাউকে উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
কিছু অতি উৎসাহী জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্টা-পাল্টা লিখে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও জানান কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহ।