হেলে পড়েছে ৩৩ হাজার কেবির বিদ্যুৎ লাইন: যান চলাচলে ঝুঁকি, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা

pekua-pic-04-10-2016-copy

পেকুয়া প্রতিনিধি:

নতুন লাইন স্থাপনের বছর না পেরুতেই হেলে পড়েছে পেকুয়ার সাব ষ্টেশনের সাথে সংযুক্ত হওয়া পল্লী বিদ্যুতের ৩৩ হাজার কেবির মেইন লাইনটি। এতে করে ব্যস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পেকুয়ায় স্থাপিত সাব ষ্টেশনে যুক্ত হওয়া ৩৩ হাজার কেবির মেইন লাইনের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে ৭ টি খুটি রাস্তার দিকে হেলে পড়েছে। সাব ষ্টেশনের অদূরে দক্ষিণ পার্শ্বে মেইন লাইনে এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে এ অবস্থায় পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় বাড়ছে মানুষের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা।

এদিকে পেকুয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজ করার সময় রাস্তার পাশ থেকে মাটি কাটার কারণে খুঁটি গুলো হেলে পড়েছে। লাইনটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও প্রাথমিকভাবে সংস্কার করে এ পর্যায়ে আনা হয়েছে। খালের পানি কমে গেলে ঠিকাদারের মাধ্যমে লাইনটি সংস্কার করা হবে বলেও জানান তারা।

তবে এ বিষয়ে রাস্তার সংস্কার কাজ করা ঢাকার ম্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং এর কর্মকর্তা ইমরুল শাহেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাস্তার সংস্কার কাজের সময় রাস্তার পাশ থেকে কোন প্রকার মাটি কাটা হয়নি বরং বাহির থেকে মাটি এনে রাস্তার এপ্রোসগুলো ভরাট করা হয়েছে।

জানাযায়, পেকুয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৪ সালের শেষের দিকে পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের হরিণাফাড়ি রাস্তার মাথায় আঞ্চলিক (এবিসি) মহাসড়কের পাশে সাব ষ্টেশন স্থাপন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কক্সবাজার জেলা গ্রীড সাব ষ্টেশন থেকে একলাইনে ঈদগাহ, চকরিয়া, মহেশখালী ও সর্বশেষ পেকুয়া সাব ষ্টেশনে যুক্ত হয় ৩৩ হাজার কেবির মেইন লাইনটি। কক্সবাজার থেকে আঞ্চলিক (এবিসি) মহাসড়কের পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সাব ষ্টেশনটি চালু হওয়ার পর থেকে পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন পেকুয়ার অধিবাসিরা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই মেইন লাইন হেলে পড়ায় লাইন স্থাপনের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানায়, পেকুয়ায় বর্তমানে ১৪ হাজারের অধিক গ্রাহক রয়েছে। পেকুয়া উপজেলায় বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৪ মেগাওয়াট। কিন্তু দৈনিক বরাদ্দ মেলে ২ থেকে আড়াই মেগাওয়াট।

আঞ্চলিক (এবিসি) মহাসড়কের সিএনজি চালক দিদার, টমটম চালক কবির হোসেন, লেগুনা চালক আব্বাস উদ্দিন জানান, মহাসড়কের হরিণাফাঁড়ি রাস্তার মাথার দক্ষিণে রাস্তার দিকে ৩৩ হাজার কেবির মেইন লাইন হেলে পড়ায় প্রতিনিয়ত আমাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করতে হয়। এতে হাজার হাজার যাত্রীর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তারা। তারা বলেন, বিদ্যুতের খুঁটিগুলো এমন বিপদজ্জনকভাবে হেলে পড়েছে যে যেকোন মুহুর্তে রাস্তার উপর আচড়ে পড়তে পারে।

সরেজমিনে পরির্দশনের সময় এ রাস্তায় যাতায়াতকারী বেশ কয়েকজন যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি কখন বিদ্যুতের লাইন আমাদের মাথার উপর পড়ে। তবুও নিরূপায় হয়ে যাতায়াত করতে হয়। তারা জানান, এ লাইনটি ভেঙ্গে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা। তারা বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ এ লাইনটি সংস্কার করে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

এ ব্যাপারে পেকুয়া পল্লী বিদ্যুতের ইনচার্জ খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজের সময় মাটি কাটার কারণে তাদের ৩৩ হাজার কেবির মেইন লাইনের ৫-৭ টি খুটি ঝুঁকে গেছে। প্রাথমিক কাজ শেষে বর্তমানে অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো জানান, খালের পানি কমলে খুব শিঘ্রই ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে পুরো লাইনটি সংস্কার করা হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম নূর মোহাম্মদ আজমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে আছি, এ বিষয়ে আমি কিভাবে বলতাম? তারচেযে বরং আপনি চকরিয়ার ডিজিএমের সাথে যোগাযোগ করুন।

এরপর চকরিয়া পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আবদুস সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত বর্ষায় বন্যার কারণে লাইনটি হেলে পড়েছিল কিন্তু প্রাথমিক সংস্কার করে আমরা ডেঞ্জেরাস পজিসন থেকে লাইনটিকে মুটামুটি মুক্ত করেছি। শুকনা মৌসুমে লাইনটি সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন