বান্দরবানে বৈসাবি উপলক্ষে নানা আয়োজন

নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দরবান:

প্রতি বছরের ন্যায় পহেলা বৈশাখ আসছে। বাংলা নতুন বছরের নানা উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানে এখন থেকে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। নতুন বছর বরণে পাড়ায় পাড়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে উৎসব আয়োজনের। এই উপলক্ষে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট নানা কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালা নেয়া হয়েছে।

বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসবকে ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। মারমা ভাষায় সাংগ্রাই, ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিসু এবং চাকমা ভাষায় বিজু বলে। পাহাড়ি চার সম্প্রদায়ের প্রধান এই সামাজিক উৎসব সম্মলিতভাবে ‘বৈসাবি’ বলা হয়।

বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উৎসব শুরু হচ্ছে ৪ এপ্রিল থেকে। ওইদিন দুপুর আড়াইটায় ও পরদিন সকাল থেকে দিনব্যাপী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে ‘বর্ষবরণ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা’।

৬ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজন। বিষয়- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পহেলা বৈশাখ উদযাপন: লোকসংস্কৃতির অনন্য ধারা।

৯ এপ্রিল বিকাল ৫টায় ‘বর্ষবরণ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র বিতরণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘সম্প্রীতির বর্ষবরণ’ এবং ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকায় শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজে ডিসপ্লেতে ২য় স্থান অর্জনকারী শিল্পীদের সম্মানী বিতরণী অনুষ্ঠান।

১১ এপ্রিল সকাল ৮টায় টংকাবর্তী ইউনিয়নের সাকখয় পাড়া ব্রিকফিল্ড মাঠে ম্রোরাদের চাংক্রান উৎসব উপলক্ষে ম্রোরাদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি, ক্রীড়া ও লোকনৃত্য প্রতিযোগিতা এবং পিঠা উৎসব, পুরস্কার বিতরণী ও লোকসংগীত অনুষ্ঠান।

১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় শহরের বালাঘাটা বিলকিছ বেগম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসব উপলক্ষে ‘তঞ্চঙ্গ্যা জাতীয় ঘিলা খেলা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিষু উৎসব উদযাপন পরিচালনা কমিটি।

১৩ এপ্রিল সকাল ৮টায় রাজার মাঠে সাংগ্রাইং পোয়ে: বর্ণাঢ্য র‌্যালি, বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

১৪ এপ্রিল সকাল ৮টায় পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রাজার মাঠে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি উপস্থিত থাকবেন।

১৫ এপ্রিল বিকাল ৩টায় রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৬ এপ্রিল রোয়াংছড়ি অন্তহা ত্রিপুরা পাড়ায় সকাল ৯টায় ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব উপলক্ষে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ও গড়াইয়া লোকনৃত্য প্রতিযোগিতা এবং পিঠা উৎসব, পুরস্কার বিতরণী ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

১৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় কাপ্তাই উপজেলার নারাণগিরিমুখ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী এবং মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকাল ৩টায় রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎসব।

১৭ এপ্রিল সকাল ৯টায় রাজবিলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মারমাদের মাহা সাংগ্রাইং পোয়েঃ ও ১৩৮১ সাক্করই বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী, পিঠা উৎসব, মৈত্রী পানি বর্ষণ ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

১৮ এপ্রিল সকাল ১০টায় জামছড়ি পাড়ায় মারমাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী এবং মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

১৯ এপ্রিল সকাল ৯টায় রোয়াংছড়ি তারাছা ইউনিয়নের লংথাং পাড়ায় খুমীদের শুভ সাংক্রাইং ও লোকসাংস্কৃতিক উৎসব উপলক্ষে খুমীদের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী এবং পিঠা উৎসব ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এছাড়াও পহেলা বৈশাখে বাঙ্গালি সম্প্রদায় পালন করেন নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী ‘পহেলা বৈশাখ’। বর্ষ বরণের প্রতিটি আয়োজনই এই অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙ্গালিদের মিলন মেলায় পরিনত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবানে বৈসাবি আয়োজন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন