ঢাকায় খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর “রাধামন-ধনপুদি” পরিবেশনায় মুগ্ধ সবাই
চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় লোক কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত গীতি-নৃত্য-নাট্য রাধামন-ধনপুদি’র অনুষ্ঠান রাজধানী ঢাকায় খুব সুন্দর ও সাবলীলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে রাজধানী ঢাকায় সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলায়তনে প্রথম পর্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভার পরপরে এ চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় লোক কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত গীতি-নৃত্য-নাট্য রাধামন-ধনপুদি’র অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে ঢাকায় বসবাসরত সংস্কৃতিপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। গানের তালে, নাচের তালে আর নাটকের অভিনয়ের তালে তালে দর্শকদের করতালি, হলভর্তি দর্শকদের সাড়া এককথায় অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছেন খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউটের শিল্পী ও কলাকৌশলীরা।
এ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক জিতেন চাকমা।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য শতরুপা চাকমা, এডিশনাল ডিআইজি বিধান ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, চাকমা সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় লোককাহিনী অবলম্বনে নির্মিত প্রথম গীতি নৃত্য নাট্য রাধামন-ধনপুদি বর্ণনা চাকমা সমাজের জনপ্রিয় তিনটি গীতধারা হচ্ছে গেংগুলি, উভোগীত, টেঙাভাঙ্গা গীত। এই তিনটি গীতিধারার সমন্বয়ে কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে রাধামন ধনপুদির বিভিন্ন কাহিনী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথম পর্বে উভোগীতের সুরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-প্রকৃতি, মানুষের জীবনধারা এবং তাদের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে চাকমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গীতি ধারা গেংখুলির বাশীর সুরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের প্রধান পেশা জুমচাষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আচার লোকবিশ্বাস রয়েছে সেগুলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই গেংখুলি শিল্পীরা আজ বিলুপ্তপ্রায়। আমরা এখানে রান্দাল্যে এবং রমনী মোহন গেংথুলির সুরে কোরিওগ্রাফি করেছি। আমাদের তৃতীয় পর্বটি সাজানো হয়েছে রাধামন- ধনপুদির চিরায়ত প্রেমকাহিনী, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ঘিলেখেলার বিভিন্ন আঙ্গিক এবং এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বিঝুকে কেন্দ্র করে যে বৈচিত্র্যময় উৎসব পালন করা হয় সেগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
এ “গীতি-নৃত্য-নাট্য” রাধামন-ধনপুদি লোক-কাহিনীতে মোট ৪৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ে অভিনয় শিল্পী, নৃত্যত্যশিল্পী ও কলাকুশলী নিয়ে গঠন করা হয়েছে।এই গীতি-নৃত্য-নাট্যটির সার্বিক পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন কেএনএসআই’র উপ-পরিচালক জিতেন চাকমা। অভিনয়, নাট্য শিল্পী ও কলাকুশলীরা হলেন কেএনএসআই’র নাট্য প্রশিক্ষক কৌশল চাকমা, নাটকের নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শোভন দেওয়ান (টিটু)।এছাড়াও বিভিন্ন দৃশ্যে সম্প্রদায়ভিত্তিক নৃত্য নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন রিয়া চাকমা, সাচিং মং মারমা এবং ধীনা ত্রিপুরা ও কংসাই মগ, পান্ডুলিপি রচনা করেছেন তরুণ লেখক বিপর্শী চাকমা।সংগীত পরিচালনা ছিলেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুব্রত চাকমা, অডিও রেকর্ডিং ও সম্পাদনায় ছিলেন রিংকু চাকমা, গেংখুলী শিল্পী ছিলেন রমনী মোহন গেংখুলী, কণ্ঠশিল্পী সুব্রত চাকমা, ধর্মরত্না চাকমা ও রমনী মোহন গেংথুলী, বাঁশিতে ছিলেন সায়ন,সিলিং চাকমা, ভিডিও ধারণ ও সম্পাদনায় ছিলেন আরে মং মারমা, কেএনএসআই’র কম্পিটার প্রশিক্ষক এল্টু চাকমা।
অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী মিলে এ গীতি-নৃত্য-নাট্যের মোট ৪৭ জন সদস্য ও কলেকৌশলী নিয়ে সাজানো হয়েছে। তারা হলেন শোভন দেওয়ান টিটু, কৌশল চাকমা, ধীনা ত্রিপুরা, কংসাই মগ, রিয়া চাকমা, সাচিং মং মারমা, প্রেমেন্দু বিকাশ চাকমা (হিল্টন), হেলি চাকমা, রুবিনা চাকমা, রুপিয়া চাকমা, পারমিতা চাকমা, রেশমি চাকমা, প্রমিজ চাকমা, সমর বিজয় চাকমা, খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, বিলি চাকমা, অর্নব চাকমা, করমেন চাকমা, অনুরুপা ত্রিপুরা, গুমুপ্রু মগ, পাইচাই মারমা, চিংম্রাসাং চৌধুরী, নিসাপ্রু মারমা, নুনুপ্রু চৌধুরী, মেমাচিং মারমা, এডিসন মারমা, উক্রাসিং মারমা, বিলি ত্রিপুরা, অপর্ণা ত্রিপুরা, পলিয়ন ত্রিপুরা, নীলা ত্রিপুরা, উজ্জ্বল ত্রিপুরা, হরিতোষ ত্রিপুরা, খোমরা ত্রিপুরা, ললিতা ত্রিপুরা, শ্রাবণী ত্রিপুরা, মিথিলা ত্রিপুরা, বর্ণনা ত্রিপুরা প্রমুখ।