পার্বত্য চট্টগ্রাম, খ্রিস্টান মিশনারি ও বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ-২
ড. ফে র দৌ স আ হ ম দ কো রে শী
আমাদের আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান মিশনারিরা ইতিমধ্যে ১৫ হাজার পাহাড়িকে খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলেছে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানে এখন ১৪৯টি এনজিও কাজ করছে।
আমাদের স্বাধীনতার সময় এই সমগ্র পার্বত্য এলাকায় ১৫ হাজার দূরে থাক, এক ডজন খ্রিস্টান ছিল কিনা সন্দেহ। বিষয়টা নিছক ধর্মপ্রচার হলে কিছু বলার ছিল না। খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের ধর্মকথা শুনিয়ে যদি কিছু মানুষ মহামতি যিশুর শিক্ষায় দীক্ষিত হন, তাতে মানবজাতির অকল্যাণ হওয়ার কোন কারণ দেখি না। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্যত্র।
প্রথমত, খ্রিস্টীয়করণের এ প্রক্রিয়াটা নিছক ধর্মপ্রচার নয়। এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী ‘রাজনৈতিক’ এজেন্ডা। তদুপরি যে প্রক্রিয়ায় খ্রিস্টীয়করণ করা হয়, তাতে ন্যায়-অন্যায়ের কোন বাছবিচার থাকে না। দরিদ্র, অজ্ঞ ও পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোকে সেবার নামে কাছে টেনে, কিছু বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা বা নগদ সাহায্যের টোপ দিয়ে ধর্মান্তরিত করার চেয়ে বড় অধর্ম আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু যে বিপুলসংখ্যক এনজিও পার্বত্য জেলাগুলোতে কাজ করছে বলে আইনমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, তারা সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষে সেই ‘কাজ’ই করছে।
দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়ায় দেশের মূল জনসমষ্টি থেকে ‘টার্গেট গ্রপ’ গুলোকে আলাদা করে ফেলার প্রয়াস চলতে থাকে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য নাগরিকের সঙ্গে তাদের একটা বৈরী অবস্থান সৃষ্টির কাজও চালানো হয় সুকৌশলে। দেশের কথিত ‘সুশীল সমাজ’-এর একাংশ ও কিছু সংগঠন এ কাজে লোকাল এজেন্ট বা কোলাবরেটর হিসেবে কাজ করে।
‘আদিবাসী’ আন্দোলনের পেছনে
এই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ ‘আদিবাসী’ আন্দোলন। আগেই বলেছি, বাংলাদেশে ‘আদিবাসী’ অভিধার প্রথম দাবিদার বাংলার কৃষক। যাদের পূর্বপুরুষরা কমপক্ষে ৫ হাজার বছর আগে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার এই অববাহিকায় কৃষি-সভ্যতারেউন্মেষ ঘটিয়েছে এবং এই মাটি কামড়ে পড়ে থেকে প্রজেক্টের পর প্রজেক্ট এই মাটিতেই মিশে গেছে। যুগে যুগে তাদের সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্য অনেক জাতি-উপজাতি-খণ্ডজাতি। সে কারণেই আজকের বাঙালি পৃথিবীর ‘অতি-শংকর’ মানবগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম। সন্তু লারমার পূর্বপুরুষরা যদি আরও আগে এদেশে আসতেন, তাহলে তারাও এতদিনে এই ‘এক দেহে লীন’ হয়ে যেতেন।
আদিবাসীকে অবশ্যই আদিবাসী বলতে হবে। কিন্তু সন্তু লারমা চাকমা সম্প্রদায়কে ‘আদিবাসী’ বা ধনড়ৎরমরহধষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন কেন? চাকমা সম্প্র্রদায় বাংলাদেশ অঞ্চলে আগত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে নবাগত। অপরদিকে এই জনগোষ্ঠী সমাজ-সংস্কৃতির অগ্রযাত্রার পরিমাপে একটি সুসভ্য মানবগোষ্ঠী। যারা মাত্র কয়েকশ’ বছর আগে আজকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমতলভূমিতে এসে বসতি স্থাপন করে। একপর্যায়ে তারা সমতল চট্টগ্রামে রাজত্বও করেছে।
বস্তুত ‘আদিবাসী’ কেবল একটি শব্দমাত্র নয়। গোত্রীয় পদবিও নয়। কাদের আদিবাসী বলা হবে সে বিষয়টি জাতিসংঘ সনদে বিশদভাবে সংজ্ঞায়িত আছে। মূলত আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যবিড়ম্বিত আদি অধিবাসীদের বিষয়টি মাথায় রেখেই এ ধরনের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার কথা ভাবা হয়েছে। যারা সুপ্রাচীনকাল থেকে ওই সব এলাকার বাসিন্দা ছিল এবং বিশ্বজনীন ধর্মবিশ্বাস ও জ্ঞানচর্চার বাইরে থেকে নিজ নিজ গণ্ডিতে বৃত্তবন্দি থেকেছে হাজার হাজার বছর। বাইরের শক্তিমান, প্রাগ্রসর ও অস্ত্রবলে বলীয়ান জনগোষ্ঠীর অন্যায়-অত্যাচারে যাদের জাতিগত অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। সেজন্যই জাতিসংঘ সনদে (১৬৯) তাদের জন্য এবং অনুরূপ জাতিসত্তাগুলোর কিছু রক্ষাকবচ রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে, সেখানকার প্রধান তিন জনগোষ্ঠী- চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়কে সেভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।
তারপরও তাদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করার জন্য এত প্রচেষ্টা কেন? বিশেষ করে ড্যানিডার মতো কিছু বড় এনজিও এ নিয়ে এত চাপ সৃষ্টি করছে কেন?
এর কারণ এই যে, তাদের একবার ‘আদিবাসী’ নামে অভিহিত করা গেলে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার ‘এবরিজিন’দের জাতিগত বিলুপ্তি ঠেকানোর জন্য যেসব বিশেষ সুরক্ষা ও সুবিধা জাতিসংঘ নির্ধারণ করেছে সেগুলো দাবি করা যাবে। যেমনটি করা হয়েছে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের ক্ষেত্রে। যার পরিণতি আমাদের চোখের সামনে। বাংলাদেশের জন্য তা নিশ্চিতরূপেই নানাবিধ জটিল সমস্যার উদ্ভব ঘটাবে। এ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে অনেকবার লেখালেখি করেছি। কিন্তু অতীতের সরকার এবং সংশি¬ষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের নিদ্রাভঙ্গ হয়নি। সামান্য কিছু বিদেশী দান-খয়রাত পাওয়ার জন্য তারা এসব বিদেশী সংস্থাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধ বিচরণের সুযোগ দিয়েছেন। যে সুযোগ কোন দেশীয় সেবা সংস্থাকে দেয়া হয়নি। দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে একটা স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে, সেজন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সরকার সম্প্র্রতি এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে তাদের স্বকীয়তার স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এই কাজটি শুরুতেই করা হলে বিষয়টি নিয়ে এতটা পানি ঘোলা করার সুযোগ থাকত না।
প্রকৃত অর্থে আদিবাসী না হলে কেবল কারও বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি বা চাপের মুখে কোন জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করার কোন সুযোগ এখন নেই। এই বাস্তবতা সংশি¬ষ্ট সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।
ফিরে আসছে কুখ্যাত ‘কুপল্যান্ড প্লান’?
এই উপমহাদেশ থেকে বৃটিশের বিদায় ঘণ্টা বাজার পর শেষ মরণ-কামড় হিসেবে চেষ্টা হয়েছিল বর্তমান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, আমাদের তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দক্ষিণাংশ এবং মিয়ানমারের সন্নিহিত অঞ্চল নিয়ে একটি ‘ক্রাউন কলোনি’ গঠন করার। প্রস্তাব করা হয়েছিল : এই অঞ্চলটি উপমহাদেশের স্বাধীনতার আলোচনার বাইরে থাকবে এবং সরাসরি ব্রিটিশ শাসনে থেকে যাবে। চল্লিশের দশকে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায়, ভাইসরয়ের দফতরে এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ব্রিটিশ আমলা রিজিনাল্ড কুপল্যান্ড এই পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন। এজন্য একে ‘কুপল্যান্ড প্লান’ নামে অভিহিত করা হয়। তবে এর পেছনে আসল কুশীলব ছিল খ্রিস্টান চার্চ সম্প্র্রদায়। তাদের সূদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলটিকে আরও কিছুকাল সরাসরি ব্রিটিশ শাসনে রেখে সেখানে খ্রিস্টীয়করণের কাজটি সম্পন্ন করা। অতঃপর সেখানে একটি ‘খ্রিস্টান রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা করা। বলা বাহুল্য তাদের হিসাব-নিকাশ ঠিকই ছিল। এলাকাটিকে আরও পঞ্চাশ বছর ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ শাসনে রাখা গেলে এতদিনে তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতেই পারত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আজকের পরিস্থিতির দিকে তাকালে তা অনুধাবন করা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে আজ যেসব ‘তৎপরতা’ চলছে তা দৃষ্টে প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি ‘কুপল্যান্ড প্লান’ এখনও বেঁচে আছে?
পূর্ব তিমুরের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের তুলনা
পশ্চিমের প্রচার মাধ্যম ও কিছু ‘বিশেষজ্ঞ’ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লেখালেখিতে প্রায়ই এখানকার পরিস্থিতিকে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। ইন্দোনেশিয়ার তিমুর দ্বীপের পূর্বাংশে ছিল কিছু পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী যারা ছিল অবহেলিত, ধর্মবিশ্বাসে এনিমিস্ট বা প্রকৃতি পূজারি। ইন্দোনেশিয়া মুসলমানপ্রধান দেশ হলেও এই পাহাড়ঘেরা অঞ্চলটিতে ইসলাম প্রচারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সেই সুযোগ নিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্রিস্টান চার্চ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো তারা সফলভাবে এখানকার প্রকৃতিপূজারি মানুষগুলোকে ব্যাপকভাবে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়। তারপর শুরু হয়ে যায় আসল কাজ। এলাকাটিকে মূল ইন্দোনেশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার আন্দোলন। এর পেছনে অবশ্য একটি বিরাট বৈষয়িক স্বার্থও যুক্ত হয়Ñ দ্বীপটির দক্ষিণের সমুদ্রগর্ভের তেলসম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা। অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিমের কিছু দেশ সেই লক্ষ্য সামনে রেখে সহায়তা দিয়েছে বিদ্রোহীদের। একপর্যায়ে বিদ্রোহীদের নেতাকে দেয়া হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার। তারপর সেখানে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন। গণভোট এবং সবশেষে একটি নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্রের অবধারিত অভ্যুদয়। স্বাধীন ‘পূর্ব তিমুর’।
এ থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘পূর্ব তিমুর’-এর সঙ্গে একপর্যায়ে রেখে লেখালেখি ও প্রচারণার অর্থ বোধগম্য।
এই প্রচারণা চলছে দীর্ঘকাল ধরেই। একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। আশির দশকের মাঝামাঝি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটি বিভাগে পিএইচডি গবেষণাপত্রের একটি প্রস্তাবনা জমা পড়ে ‘genocide in Chitagong Hill Tracts and East Timor’ শিরোনামে। সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক (যিনি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত) প্রস্তাবনাটি মানসম্মত নয় বলে নাকচ করে দেন এবং আমাকে সামনে পেয়ে বললেন, ‘আপনার দেশের ব্যাপার। ট্র্যাশ। পড়ে দেখতে পারেন।’ দেখলাম ড্রাফটের পাতায় পাতায় অসঙ্গতি এবং ভুল তথ্য। অধ্যাপকের বিরক্তির কারণ বুঝলাম।
স্পষ্টতই এটি ছিল কোন বিশেষ মহলের মদদে একটি উদ্দেশ্যমূলক উদ্যোগ। কিন্তু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ওই গবেষণা প্রস্তাব নাকচ করে দিলে কী হবে, ওই গবেষক আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা জমা দিয়ে কয়েক বছর পর সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার সেই ‘জেনোসাইড’ তত্ত্ব পুস্তকাকারে প্রকাশিতও হয়েছে। সামান্য রদবদল করে। এ থেকেই বোঝা যাবে এই বিষয়টির মূল কত গভীরে।
কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। পার্বত্য চট্টগ্রাম আর পূর্ব তিমুর এক কথা নয়।
প্রচারণা ও বাস্তবতা
দুনিয়াজুড়ে আজ বাংলাদেশের এই পার্বত্য অঞ্চলটিকে নিয়ে ভীষণ মাতামাতি চলছে। অসংখ্য ওয়েবসাইটে চলছে নানাবিধ প্রচারণা। যার কোন কোনটিতে কিছু সত্যতা থাকলেও অধিকাংশই ভয়ানক রকমে অতিরঞ্জিত, কোন কোনটি ডাহা মিথ্যা। ‘একটা মিথ্যাকে হাজারবার বলা হলে তা সত্যে পরিণত হয়’- সেই লক্ষ্য নিয়ে এসব কাজ চলছে বলে মনে হয়।
প্রচারণা চলছে একতরফা। জবাব দেয়ার কেউ নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যে প্রচারণা বিশ্বজুড়ে চলছে তার মূল প্রতিপাদ্য চারটি :
(১) বহিরাগত বাঙালি এবং সেনাবাহিনীর লোকেরা সেখানে নির্বিচার ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। সেখানকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে এটা করা হচ্ছে।
(২) সেখানে বাঙালি এবং সেনাবাহিনীর লোকেরা নিত্যদিন পাহাড়ি নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে।
(৩) সেখানে পাহাড়িদের জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে।
(৪) সেখানে এখন সেনা শাসন চলছে।
‘গণহত্যা’ প্রসঙ্গ
‘আড়াই লাখ চাকমাকে হত্যা’ করার গল্প : ৮০’র দশকের শেষদিকে একদিন বিবিসি বাংলা বিভাগে কাজ করছি। ইংরেজিতে পাঠানো সংবাদ কিছু কাটছাঁট করে বাংলায় অনুবাদের কাজ। একটু পরেই ট্রান্সমিশন। সামনে একটা আইটেম দেখে চমকে উঠলাম- ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবৎ আড়াই লাখ চাকমাকে বাঙালিরা হত্যা করেছে!’
তখন সম্ভবত পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের মোট সংখ্যাই ছিল আড়াই লাখ। আমাকেই ওটা সম্প্র্রচার করতে হবে! আর মাত্র ১০ মিনিট পর। ছুটে গেলাম পাশের রুমে, বিভাগীয় প্রধানের কাছে। পিটার ম্যানগোল্ড তখন বাংলা বিভাগের প্রধান। বললাম, ‘পিটার, এটা কোথা থেকে এসেছে? আড়াই লাখ চাকমা মেরে ফেললে তো সেখানে আর কোন চাকমা থাকে না। সমস্যাই খতম। তোমরা অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকায় যেমন করেছ।’
পিটার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সব্বোনাশ! হাতে একদম সময় নেই। হারি আপ্! ওটা বাদ দিয়ে তুমি অন্য কোন আইটেম দিয়ে ট্রান্সমিশন শেষ করো।’
ট্রান্সমিশন শেষ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সবাই বসলাম। পিটার আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘কিন্তু ওটা তো এসেছে খুব বড় জায়গা থেকে!’
জানলাম ওই দিনই সকালে বিবিসি বুশ হাউসের পাশের দালানে অবস্থিত একটি দূতাবাসে নেদারল্যান্ডস থেকে কয়েকজন এসেছিলেন একজন চাকমা ‘নেতা’কে সঙ্গে নিয়ে। তাদের প্রেস ব্রিফিং থেকেই এই ‘রিপোর্টে’র উৎপত্তি।
এভাবেই চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যার নিরন্তর প্রচারণা।
(আগামীবারে : পার্বত্য চট্টগ্রামে কতজন পাহাড়ি মুসলমান হয়েছেন? বৌদ্ধধর্ম কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে?)
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভূ-রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক
[email protected]
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশে আদিবাসী বিষয়ে আরো পড়ুন:
পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় দৃষ্টির মধ্যে রাখতে হবে
একটি স্থায়ী পার্বত্যনীতি সময়ের দাবী
আদিবাসী বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ
পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ১
পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২
পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ৩
পার্বত্য চট্টগ্রাম, খ্রিস্টান মিশনারি ও বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ-১
পার্বত্য চট্টগ্রাম, খ্রিস্টান মিশনারি ও বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ-২
পার্বত্য চট্টগ্রাম, খ্রিস্টান মিশনারি ও বৌদ্ধধর্মের ভবিষ্যৎ-৩
বাংলাদেশে তথাকথিত ‘আদিবাসী’ প্রচারণা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রশ্নসাপেক্ষ
উপজাতীয় নওমুসলিমদের ওপর খ্রিস্টান মিশনারিদের দৌরাত্ম্য
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা-বাঙ্গালী প্রত্যাহার ও খ্রিস্টান অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন
Dear sir.
I was interested to know about the hill tracts. Thnx for writing a informative topic for us. hope you will write more in future.
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া মিশনারীদের বের করে দিয়েছে । দক্ষিণ কোরিয়ার অর্ধেক জনগণ খৃষ্টান হওয়ার পর সরকারের টনক নড়ে । তারপর খৃষ্টান মিশনারী কার্যক্রমের উপর বিধি নিষেধ আড়োপ করে । কিন্তু আইনগত কারণে মিশনারীরা এনজিও-র লেবাস ধরে । তারপর দক্ষিণ কোরিয়া এনজিও কার্যক্রম বন্ধ করে । দক্ষিণ কোরিয়ার মিশনারী কার্যক্রম নিয়ে আমার কাছে একটা বই আছে । তারা মানুষকে ধর্মান্তরের উদ্দেশ্যে আসে না । তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ নিয়ে আছে । মিশনারী কাজের সাথে যারা যুক্ত তারা নিজেরাও ধার্মিক না । আামার নিজেরই মিশনারীদের সাথে কথাবার্তাই না তাদের কাজ করারও অভিজ্ঞতা আছে । ভারতের বেশ কিছু এলাকায় বেশ কিছু মিশনারী সংগঠণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । আমি মনে করি, বাংলা ভাষা-ভাষীদের এসব ব্যাপারে ভাবাই নয়, বাস্তবে এসব বন্ধের জন্য কাজে নেমে পড়তে হবে ।