বাঁকখালীতে নদী রক্ষায় স্মারকলিপি, দখল থামছেই না
কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী দিয়ে আশির দশকের যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করত চট্টগ্রাম পর্যন্ত। নদীর কস্তুরাঘাট থেকে জাহাজ চলত টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলাতেও। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দখল, দূষণ ও নদীসংলগ্ন প্যারাবন উজাড়ের মাধ্যমে এ নদীকে হত্যা করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে নদীর বুকে সৃজিত প্যারাবন আগুনে ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে হাজারো অবৈধ স্থাপনা। দখল উচ্ছেদ ও দূষণমুক্ত করে নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিলেও এখনো তার বাস্তবায়ন হয়নি। থেমে নেই প্যারাবন উজাড় করে প্লট বানিয়ে পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ। এসব বন্ধে প্রশাসন নীরব। তাই নদী বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আজ সোমবার বিকেলে পাঠানো স্মারকলিপিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখা এসব কথা তুলে ধরে। জেলা প্রশাসকের কাছে ওই স্মারকলিপি তুলে দেন বাপা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলামসহ অনেকে। জেলা প্রশাসক জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে নদীতে বিদ্যমান সব দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দূষণের উৎস বন্ধের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নদী ও নদীর তীর ভিন্ন উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট আরেক আদেশে কক্সবাজার পৌরসভাকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনোটাও মানা হচ্ছে না। বর্তমানে বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি নদীর বুকে সৃজিত প্যারাবন কেটে সেখানে প্লট বানিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করছে প্রভাবশালী মহল। প্লটে এখনো জোয়ারের পানি উঠছে এবং সেখানে কেটে ফেলা প্যারাবনের গাছ স্পষ্ট দৃশ্যমান আছে।
স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ, নদীর তীর ও নদী সংলগ্ন প্যারাবন দখল ও দূষণমুক্ত করা, প্যারাবন দখল করে তৈরি স্থাপনা উচ্ছেদ করে পুনরায় বনায়ন, দখলদারদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা ইত্যাদি।
ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে এখনো বাঁকখালী নদীর প্যারাবন উজাড় করে প্লট বানিয়ে শত শত পাকা ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ প্যারাবন আগুনে ধ্বংস করে বিরানভূমি ইটের দেয়াল তুলে ঘিরে রাখছে। নদীর তলদেশ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে বনভূমির তলা ভরাট করা হচ্ছে। গত তিন-চার মাসে অন্তত ৩০০ একরের প্যারাবনের অন্তত ৫০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছ উজাড় করে শতাধিক পাকা ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। তাতে ১০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল নষ্ট হয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অন্যদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট করছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে। আন্দোলন–সংগ্রাম এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি করেও নদীর দখল তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
কলিম উল্লাহ বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দখল হচ্ছে শহরের নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায়।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁকখালী নদী দখল তৎপরতা বন্ধ, বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও নদীরক্ষা কমিটি। ইতিমধ্যে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।