লামায় কুতুব মেম্বারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ঠেকিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার কুতুবের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মুখে গরু ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে লামা থানায় ও নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন নেজাম উদ্দিন মানিক নামের একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু ঘটনার ২০ দিন পার হলেও সন্ত্রাসী মেম্বার কুতুব উদ্দিনের লাগামে টান দেয়নি কেউ।
বিলম্বে প্রাপ্ত অভিযোগে প্রকাশ, গত ২২ জুন রাতে লামা থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় মিরিঞ্জা রুয়াজা মুরুং পাড়ার রাস্তা থেকে গরু ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন মানিক ও তার ৩ জন সহযোগীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সদস্য কুতুব উদ্দিন প্রকাশ কুতুব মেম্বারের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী। এ সময় সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী মানিক ও তার সঙ্গীয় তিনজনকেসহ ৭টি গরু আটক করে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১৪নম্বর এলাকায় নিয়ে যায়।
২৩ জুন গভীর রাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গরু ব্যবসায়ী মানিক ও তার লোকজনকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে কুতুব মেম্বারের টর্চার সেল হিসেবে খ্যাত একটি কক্ষে জিম্মি করে রাখে। এ সময় কুতুব মেম্বার অস্ত্র ঠেকিয়ে মানিক ও তার সঙ্গের লোকজনকে ৩ লক্ষ টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারা এত টাকা দিতে পারবেনা বলে অপারগতা জানালে মানিকের ৭টি গরু রেখে দিয়ে তাদেরকে মারধর করতে উদ্যত হয় কুতুব মেম্বার।
ব্যবসায়ী মানিক অভিযোগ করেন, কুতুব মেম্বার অস্ত্র ঠেকিয়ে বারবার তাদেরকে হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তারা ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে কুতুব মেম্বারের কবল থেকে নিস্তার পান।
ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন মানিকের বাড়ি আলীকদম উপজেলার বাজার পাড়া গ্রামে। তিনি মরহুম ডা. আব্দুস ছোবহানের ছেলে। মানিকের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, ‘আমার সঙ্গে থাকা অন্যান্যদের নির্যাতনের কবল থেকে বাঁচতে এবং প্রাণ রক্ষার্থে আমি টাকা দিতে বাধ্য হই।’
লামার মানবাধিকার কর্মী রুহুল আমিন জানান, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ সাপেরঘেরা, ত্রিশঢেবা, ১৪নং এলাকাকে নরককুণ্ড বানিয়েছে অস্ত্রধারী কুতুব মেম্বার। ওই ইউনিয়নে অস্ত্রবাজ এই মেম্বারের সশস্ত্র সন্ত্রাসের কাছে ছোটখাটো ব্যবসায়ীসহ সকলেই তার কাছে জিম্মি। সে রাজনীতির ছত্রছায়ায় এ ধরণের অপরাধ করে বেড়াচ্ছে।
অস্ত্রের মুখে গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে যান আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি ঘটনাটি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে অবহিত করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন মানিক ঘটনার কয়েকদিন পর লামা থানা ও সেনা জোনে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ৩ জুলাই ইয়াংছা আর্মি ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কুতুব মেম্বারকে ডাকা হয়েছিল। যথাসময়ে আমরা আর্মি ক্যাম্পে গেলেও অস্ত্রধারী কুতুব মেম্বার হাজির হয়নি। তাই আমরা চলে এসেছি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অস্ত্রধারী কুতুব মেম্বারকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউপি মেম্বার কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওইদিন রাতে স্থানীয় লোকজন কিছু গরু আটক করে তার অফিসে নিয়ে আসেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন ফোন দিলে আমি গরুগুলো ছেড়ে দেই। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি।’