আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৮তম বর্ষপূতি
ফাতেমা জান্নাত মুমু:
আজ ২রা ডিসেম্বর । পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ বছর পূর্তি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালিন চীপ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লা সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু লারমা । চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে তৎকালিন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ শান্তিবাহিনী দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যরা। পরিচিতি লাভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস নামে। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হলেও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। চুক্তি মানা না মানা নিয়ে বেড়ে যায় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত। নতুন করে সৃষ্টি হয় পাহাড়িদের তিনটি সশস্ত্র গ্রুপ। উপদলীয় সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় চুক্তির সকল অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারী চুক্তি অনুযায়ী খাগড়াছড়ি ষ্টেডিয়ামে শান্তিবাহিনীর ৭৩৯ সদস্যের প্রথম দলটি সন্তু লারমার নেতৃত্বে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট অস্ত্রসমর্পন করেছিল। পরবর্তীতে ১৬ ও ২২ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ৪ দফায় শান্তিবাহিনী মোট ১৯৪৭ জন অস্ত্র সমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত ১৮ বছরে প্রত্যাগত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের পূর্নবাসন, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন সংশোধন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় গঠন করে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে।
কিন্তু আঞ্চলিক পরিষদসহ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে আলাদা ভোটার তালিকা করতে না পারায় ও ভুমি কমিশন কাজ করতে না পারায়, পার্বত্য চুক্তির ২৪ টি গুরুত্বপূর্ণধারা এখনো বাস্তবায়িত হতে পারেনি। চুক্তি অনুযায়ী জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন না হওয়ায় ১৯৯৯ সালের ১২ মে থেকে সন্তু লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদে এখনো অর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদ বহাল রয়েছে।
এদিকে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ বছর পর চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেন জনসংহতি সমিতির নেতারা এই চুক্তির অধিকাংশ শর্ত সরকার বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ তাদের।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজিব চাকমা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। বস্তুত ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। ফলে পাবত্যাঞ্চলের গণমানুষের শাসনতান্ত্রিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হয়নি। অর্জিত হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান।
অন্যদিকে আর সরকার দল বলছে তারা চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন করেছে। বাকী ধারাগুলোও অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে।
এ ব্যাপারে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর জানান, সরকার পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে যে লক্ষ্য নিয়ে চুক্তি করা হয়েছে তা পুনাঙ্গ বাস্তবায়নে একটু সময় লাগতে পারে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কোন কারপন্য করেনি। তাদের যে অভিযোগ ভ’মি নিয়ে, তার কাজও এগিয়ে গেছে। সংসদে উঠলেই ভ’মি জটিলতার বিষয়ও শেষ হয়ে যাবে।
রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় জানান, চুক্তির বাস্তবায়ন বিষয়নি পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে পার্বত্যা চুক্তির বাস্তবায়নের মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা ভ’মি। ভ’মি আইন সংশোধনের কথা থাকলেও তা হয়নি। তাই পার্বত্য ভুমি কমিশনও অকার্যকর হয়ে আছে। ভ’মি আইন সংশোধন হলে সব সমস্যা সমাধাণ হতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন নেতা এ্যাডভোকেট আবছার আলী জানান, পার্বত্যাঞ্চলে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত বাঙালীদের অভিযোগ সরকার সন্তু লারমার সাথে পার্বত্য চুক্তি করে পাহাড়ে বাঙালীদের অধিকার বঞ্চিত করেছে। পার্বত্য এলাকায় শান্তির জন্য শান্তিচুক্তি করা হলেও এখনো পর্যন্ত পার্বত্যাঅঞ্চলে শান্তি ফিরে আসেনি। সরকার পার্বত্য চুক্তি নিয়ে কি উদযোগ নেয় তা দেখার অপেক্ষায় আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ।