আলীকদমে এডিপি’র প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ

আলীকদম প্রতিনিধি:

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় গৃহীত ৭৯ টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অর্থবছর শেষ হলেও অনেক প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাত করা হয়।

প্রকল্প বাছাই, প্রস্তুতকরণ ও অনুমোদন পদ্ধতিতে মানা হয়নি স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশিকা। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের আখের গোছাতে ভুয়া ও মনগড়া প্রকল্প গ্রহণ করেন। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এনিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করে তদন্ত দাবি করেছেন। তবে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দুর্নীতি হয়নি বলে দাবী করেন ইউএনও এবং উপজেলা প্রকৌশলী।

বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলার চারজন ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত অভিযোগে প্রকাশ, গত ২০১৭-১৭ অর্থবছরে আলীকদম উপজেলায় এডিপির সাধারণ খাতে ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ৫০টি প্রকল্প এবং বিশেষ খাতে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ২৯ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প বাছাই, প্রস্তুতকরণ ও অনুমোদন পদ্ধতিতে মানা হয়নি ‘উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল নির্দেশিকা। প্রকল্প বাছাই কমিটিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামত নেয়া হয়নি।

অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন ১নং আলীকদম ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, ২নং চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান, ৩নং নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা ও ৪নং কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো। তারা সকলেই বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান।

স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনায় বলা আছে, ‘ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আহবান করে তাঁদের উপস্থিতিতে প্রণীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরীক্ষা ও বাছাই করবেন। কমিটি প্রকল্পগুলো বাছাই চূড়ান্ত করে উপজেলা পরিষদ সভায় পেশ করবে’।

ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেন, ‘অর্থবছর শেষ হলেও এসব প্রকল্পের বেশীর ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্প বাছাইয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামত নেওয়া হয়নি। নিয়মানুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে উপ-বরাদ্দের চিঠি দেয়া হয়নি। এডিপির অর্থবরাদ্দের বিষয় গোপন করা হয়। অর্থ বছরের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশনামতে মনগড়া প্রকল্প নিয়ে আত্মসাতের সুযোগ করা হয়। অস্তিত্বহীন সংগঠনের নামেও প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, এক ইউনিয়নের মেম্বারকে অন্য ইউনিয়নের প্রকল্পের কমিটির ‘পিআইসি’ করা হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ তৈরি করছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। একই অভিযোগ অন্য তিনজন ইউপি চেয়ারম্যানদেরও।

নয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফোগ্য মার্মা ও কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপং ম্রো বলেন, সরকার প্রধানের অভিপ্রায়ে আলীকদমের দুইটি ইউনিয়নকে বিভাজন করে ৩নং নয়াপাড়া ও ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়ন গঠিত হয়। নবগঠিত এ দুই ইউনিয়নের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন অগ্রাধিকার প্রকল্প গ্রহণের কথা। নবগঠিত ইউনিয়ন দুইটিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে বিমাতা সুলভ আচরণ করে উপজেলা পরিষদ।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী হেলালুর রহমান বলেন, এডিপির অর্থে এমন সুন্দর করে অতীতে আলীকদমে কোন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয়নি। নির্দেশিকা মেনে সব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো দুর্নীতি হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের কোন অভিযোগ আমার জানা নেই। নানা কারণে কিছু প্রকল্প দেরীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে শীঘ্রই সব প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন