আলীকদমে বনবিভাগের আটক ৪ জনকে ছেড়ে দিয়েছে বিজিবি

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
বান্দরবানের আলীকদমে তিন বন কর্মকর্তাসহ আটক চার জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির দাবি, শুক্রবার মাতামুহুরী রেঞ্জের সীমানা হতে ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের তৈরী করা টয়লেটের রিংস্লাভ বনকর্মীরা তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মাতামুহুরী রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার স্টাফদের নিয়ে রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ফেরার পথে বিজিবি তাদের আটক করে।

বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আটক ও মুচলেকার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেছেন আলীকদম ৫৭ বিজিবির অধিনায়ক মেজর রেজা।

জানা গেছে, আলীকদমে ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণ চলছে উপজেলার আনসারঘোনায়। বন বিভাগ দাবী করছে সে এলাকাটি তাদের। এ নিয়ে উভয় সরকারী সংস্থার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মামলা-মোকাদ্দমা চলছে। শুক্রবার আনসারঘোনায় রিংস্লাভ বসিয়ে একটি টয়লেট নির্মাণ করে বিজিবি। খবর পেয়ে বন বিভাগ বাধা দেয়। একপর্যায়ে মাতামুহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে বনকর্মীরা রিংস্লাভগুলো তুলে বাবুপাড়া বন ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

শুক্রবার দুপুরে রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মচারীরা ফেরার পথে মাতামুহুরী ব্রিজ থেকে বিজিবি তাদের আটক করে। আটককৃতরা হলেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ আলম, তৈন রেঞ্জ সদর বিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, মাতামুহুরী বিট কর্মকর্তা আব্দুল জলিল ও বনপ্রহরী হাসমত আলী।

আলীকদম ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মেজর মোঃ রেজাউল করিম বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেই ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের স্থাপনা নির্মাণ জরুরী। কিন্তু বন বিভাগ বিজিবির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কর্মকর্তাদের অন্যায়ভাবে আটকের পর তাদের শারীরিক নির্যাতন করে। আবার ছেড়ে দেওয়ার সময় ‘মুচলেকা’ নেয় যা খুবই দুঃখজনক।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আল-আমিন বলেন, বিজিবি কর্তৃক বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটকের বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বিজিবি ব্যাটালিয়ান অধিনায়ককে জানানো হয়। আলোচনার মাধ্যমে বিকেলে বন কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে ইউএনও জানান, আনসারঘোনার জায়গাটি বন বিভাগ ও বিজিবি দাবী করে আসছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তাবিত জায়গাটির সীমানা চ‎িহ্নিত করে বিজিবিকে এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

উল্লেখ্য, আলীকদমে গত ২৩ ডিসেম্বর ৫৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। সে সময় ব্যাটালিয়ন উদ্বোধন হলেও স্থাপনা তৈরী হয়নি। গত কয়েকমাস থেকে উপজেলা সদরের জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজকে অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেছে বিজিবি। তবে সম্প্রতি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিজিবির জওয়ানরা আনসারঘোনায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওই জায়গাটি ১৮৮০ সাল থেকে মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাভূক্ত বলে দাবী করছে বন বিভাগ। রিজার্ভ ফরেস্টের অভ্যন্তরে স্থাপনা নির্মাণ ও কার্যক্রম পরিচালনা ১৯২৭ সালের বন আইনে নিষিদ্ধ উল্লেখ করে বন বিভাগ বাধা প্রদান করে আসছে।

অন্যদিকে ৫৭ বিজিবি অধিনায়ক মেজর মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আনসারঘোনার জায়গাটি বিজিবির। সেখানে আমাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণস্থলে নির্মিত টয়লেটের রিংস্লাভ তুলে নেওয়ার পর আমরা কয়েকজনকে আটক করি। বিজিবির জায়গায় অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চুরির অভিযোগে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলাম। পরে বন বিভাগের লোক পরিচয় পেয়ে তাদের কাছ থেকে ‘লিখিত’ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন