ঈদের ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের আগমন হতাশাজনক

4927_1163911013234_3104546_n

জমির উদ্দিন:

পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে এবার পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। হরতাল, যানবাহনে হামলা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার ঈদের ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন বিগত সময়ের তুলনায় অনেক কম হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ঈদের ছুটিতে যেখানে বান্দরবানে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটত, সেখানে এ বছর তা ২-৩ হাজারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া অনেকে ঈদের আগে হোটেলে রুম বুকিং দিলেও ঈদের পর হরতালের ঘোষণার কারণে সকল বুকিং বাতিল হয়ে গেছে।

পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা ও আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলা ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। বান্দরবান শহরের অন্যতম আবাসিক হোটেল ফোর স্টার এর মালিক মানিক চৌধুরী জানান, তাঁর মালিকানায় ফোর স্টার ছাড়াও বাস স্টেশন এলাকায় থ্রি স্টার নামে আরো একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। বিগত ঈদ মৌসুমে এ দুটি হোটেলে অনেক আগে থেকেই রুম বুকিং হয়ে যেত। কোনো রুম খালি থাকতো না। এমনকি ডাবল সীটের রুমে ৬-৭ জন লোক গাদাগাদি করে থাকত। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁর হোটেল ব্যবসায় ধস নামে। এতে তিনি আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হন। তিনি বলেন, তাঁর মালিনাকানাধীন দুটি হোটেলই এবার ঈদের ছুটিতে বোর্ডারের আগমন হতাশাজনক। এখনও অনেক রুমই খালি। ঈদে বাড়তি লোকজনের আগমন হবে আশা করে রুমকে নতুন করে সাজানো হলেও লোকজন আসেননি বলা চলে। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হন। তিনি বলেন, এবার ঈদের ছুটিতে আগে কিছু রুম বুকিং দেওয়া হলেও ঈদের পর হরতালের ঘোষণায় ওইসব বুকিং বাতিল করে দেয় সংশ্লিষ্টরা। তিনি আরো বলেন, চলতি বছর বান্দরবানে পর্যটকের আগমন আশংকাজনকহারে কমে গেছে। হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁর দুটি হোটেলে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। একই অবস্থা বান্দরবান শহরের অন্যান্য হোটেলেও। এমনকি পর্যটন করপোরেশনের মেঘলা পর্যটন মোটেলেও এবার ব্যবসায় ধস নামে।

বান্দরবান জেলা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, বিগত বছরগুলোতে যে পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটত বান্দরবানে এবার তার দশ ভাগের একভাগও পর্যটক আসেনি। হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভীত-সন্ত্রস্ত ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বান্দরবানে বেড়াতে এসে হরতালে আটকা পড়ার ভয়ে লোকজন এবার অফুরন্ত সম্ভাবনাময় বান্দরবানে আসছে না। তিনি জানান, ঈদের আগে হোটেল-মোটেলগুলোতে অগ্রিম রুম বুকিং দিলেও ঈদের পরে দুটি হরতাল ঘোষণা জেনে সেসব রুম বুকিং বাতিল করে দেয়। এতে করে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

এদিকে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বান্দরবান ইতিমধ্যে পর্যটনের সম্ভাবনাময় জেলা হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি ও সুনাম অর্জন করেছে। ফলে দিন দিন বান্দরবানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়ছে। কিন্তু চলতি বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতালের কারণে বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামে। তিনি রাজনৈতিক দল, হরতাল আহ্বানকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পর্যটন এলাকা হিসেবে বান্দরবানকে হরতালের আওতামুক্ত রাখলে বান্দরবানের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটবে। তিনি আরো বলেন, বিশেষ বিবেচনায় অনেক কিছুকেই হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়। দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও আর্থিক সমৃদ্ধির সাথে যুক্ত পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটনের সম্ভাবনাময় বান্দরবান জেলাকেও হরতালসহ সকল সহিংসা ঘটনামুক্ত রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে পর্যটন শিল্পে ধস নামায় কেবল যে হোটেল-মোটেলে ব্যবসায় ধস নেমেছে তা নয়। পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে ভাড়ায় চালিত মাইক্রো, জিপ, টেক্সি, মাইন্দ্রসহ যানবাহন খাত নতুন আশা নিয়ে বান্দরবানে গড়ে ওঠে। এ খাতের সাথে হাজার হাজার শ্রমিক জড়িয়ে আছেন। এসব পরিবারের আয়ের উৎস যানবাহন ভাড়া হতে হলেও এবার পর্যটন খাতে ধস নামায়, পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ায় তারাও হতাশা। অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। একইভাবে খাবার হোটেল, স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রেতারাও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত পর্যটকরা এখানে বেড়াতে এসে হোটেল-মোটেলে থাকা, খাওয়া ও বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে বান্দরবানের আর্থিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আশংকাজনকহারে পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ায় বান্দরবানের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন