কক্সবাজারে আয়োজন শূন্য বর্ষবরণে হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা

fec-image

ইংরেজি বর্ষবরণ ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ মানেই কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ভিড়। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নতুন বছর বরণে বিশেষ কোন আয়োজন না থাকায় আশানুরূপ পর্যটক নেই। এনিয়ে হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এর পরেও যারা নতুন বছর বরণে ভ্রমণে এসেছে তাদের নিরাপত্তায় জোরদার রয়েছে প্রশাসন।

সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে পুরনো বছর ২০২৩ কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ২০২৪ সালকে স্বাগত জানানোর দৃশ্য দেখতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় অন্যান্য বছরের মত লাখো পর্যটকের ভিড় নেই। কারণ হিসেবে জানা যায়, রাজনৈতিক অস্তিরতা এবং এই বছর সমুদ্র সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে কিংবা হোটেল-মোটেলে বিশেষ কোন আয়োজন না থাকায় আশানুরূপ পর্যটক নেই। অথচ অন্যান্য বছর এদিনে লাখো পর্যটক সমাগমে মুখরিত থাকতো বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে টানা দেড় মাস পর্যটকশূন্য ছিল কক্সবাজার। এ কারণে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়েছিল। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর থেকে পাঁচদিনের ছুটিতে ব্যবসা কিছুটা চাঙা হলেও পরে আবার পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে সমুদ্র সৈকত।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, ইংরেজি বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটবে। কিন্তু এ বছর ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ রোববারে হওয়ায় সরকারি ছুটি না থাকার পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কড়া নির্দেশ আউটডোর-ইনডোরে কোন বিশেষ সাংস্কৃতিক আয়োজন নেই। অন্যদিকে সন্ধ্যা ৬ টার সৈকতের উন্মুক্ত স্থানসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ আয়োজনও বন্ধ রাখতে প্রশাসনের নির্দেশনা রয়েছে। এতে পর্যটক সমাগমে ভাটার টান পড়েছে। তবে এত কিছুর মাঝেও কিছু পর্যটক চলে এসেছে ইংরেজি বর্ষ বরণে। তারা বলছেন আয়োজন না থাকলেও সমুদ্র সৈকতে নতুন বছরের সূর্যোদয় দেখতে এই নগরীতে ছুটে এসেছে। তারা নিরাপত্তা নিয়েও সন্তুষ্ট।

রুবিনা আক্তার নামে এক নারী পর্যটক জানান, প্রতি বছর ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উৎযাপনে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসতেন। এবারেও ঠিক তাই এসেছেন। তবে এসেই হতাশ যখন জানতে পারলেন সমুদ্র সৈকতে কোন আয়োজন নেই। এর পরেও মন খারাপ নেই। বিশাল সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালকে বিদায় জানিয়েছে।

বন্ধুদের সাথে নিয়ে আসা আরেক পর্যটক সাইফুল ইসলাম বাপ্পী জানান, আয়োজন না থাকলেও সমুদ্র সৈকত’ই হচ্ছে বড় আয়োজন। তাই সাগরে গোসল করে ২০২৩ সালের সব কষ্ট, গ্লানি ও দুঃখ মুছে নতুন বছর ২০২৪ সালকে বরণ করতে এসেছেন। রাজনৈতিক অস্তিরতা থাকলেও সমুদ্র সৈকত এলাকায় নিরাপত্তা দেখে সন্তুষ্ট।

এদিকে থার্টি ফাস্ট নাইটে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম না ঘটায় হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ ও কটেজ মালিক সমিতি’র সদস্য আব্দুর রহমান জানান, রোববার পর্যন্ত সাড়ে সোয়া পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল কক্ষের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। এতে ৪০ থেকে ৫০ হাজারের বেশী পর্যটক সমাগম ঘটার কথা নয়। এতে হোটেল ব্যবসায় মারাত্বকভাবে ক্ষতি হয়েছে।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা জানান, প্রশাসন চাইলে নিরাপত্তা জোরদার রেখে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ উৎযাপন করতে পারত। এতে শুধু কক্সবাজারের অর্থনীতি নয় দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হতো। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা সারা বছর আশায় বুক বেঁধেছিল এই দিনে বড় ব্যবসা হবে। কিন্তু সবাই হাতাশ।

এদিকে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও হয়রানি রোধে সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর। তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুরো সমুদ্র সৈকত এলাকা সিসিটিভি ও ড্রোন ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সমুদ্র সৈকত এলাকায় দিন এবং সারারাত টহল জোরদার থাকবে। পর্যটকদের বিন্দুমাত্র হয়রানি করলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

আয়োজনের প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারের ইংরেজি নববর্ষে আউটডোরে কোন প্রোগ্রাম হবেনা। ওপেন গান বাজনা ও আতশবাজি ফুটানো যাবেনা। সন্ধ্যার মধ্যে সব প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে। যে যার হোটেলের ইনডোরে প্রোগ্রাম করতে পারবে। তবে পর্যটক আসতে কোন বাধা নেই। আশা করা যায় আয়োজন না থাকলেও ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, থার্টি ফার্স্ট নাইট, পর্যটক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন