কক্সবাজার শহরে হোটেল ব্যবসার আড়ালে চলছে পতিতাবৃত্তি ও মাদক ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার:
কক্সবাজার শহরের হোটেল গুলোতে পতিতার আড়ালে চলছে মাদকের ব্যবসা। এনিয়ে শহরের সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ১৮ নভেম্বর সকালে শহরের ফজল মাকের্টস্থ জিলানী হোটেলে ইয়াবা লেনদেন নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা নিয়ে ভিন্ন মন্তব্য করেন হাসপাতাল সড়কের বিশিষ্টজন রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান হতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এসে হোটেলে থাকে। ইয়াবা লেনদেন হওয়ার সময় উভয় পক্ষের মাঝে হৈচৈ সৃষ্টি হয়। গভীর রাতে পতিতাদের চিৎকারসহ ইয়াবা লেনদেনের ঘটনা নিত্য নতুন কিছু না। তিনি আরো বলেন, তারই মাঝে আমাদের সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এ অপকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনও যথাযত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

জানাগেছে, পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অভিযুক্ত হোটেল কর্তৃপক্ষরা বীরর্দপে অবাধে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এতে শহরের সচেতন মহল বাধা সৃষ্টি করলে হোটেল কর্তৃপক্ষ উল্টো নানা হুমকি দেয়। এ অপকর্ম দমন করতে গিয়ে হুমকি আর পুলিশের অবহেলায় শহরবাসী অসহায় হয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত হোটেল গুলো কতিপয় অসৎ পুলিশকে টাকা দিয়ে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছে একটি চক্র।

অন্যদিকে শহরের যুব সমাজ এ অনৈতিক কাজে জড়িত হয়ে পড়ালেখার বিপরীতে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, হোটেল কর্মচারী আতাউল্লাহ, জাহাঙ্গীর, সেলিম, মাদুসহ একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে শহরের বিভিন্ন হোটেলে পতিতা থেকে শুরু করে ইয়াবাসহ নানা জাতের মাদক সরবরাহ করে আসছে। এদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ ফিরোজ জানিয়েছেন, জিলানী হোটেল কর্মচারী আতাউল্লাহ, এবং আল ফয়সাল হোটেলের কর্মচারী জাহাঙ্গীরকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। যদি এদের আটক করা যায় তাহলে শহরের কিছুটা এ অপকর্ম কমে যাবে।

এ ব্যবসা নিয়ে হোটেল জিলানীর ম্যানেজার নামধারী আতা উল্লাহ’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, শহর পুলিশ ফাঁড়িতে টাকা দিয়ে এ ব্যবসা করে আসছি। কাকে এ টাকা দেয়া হয় তা জানতে চাইলে বলেন, থানার ক্যাশিয়ার শিমুল, ডিবির ক্যাশিয়ার রঞ্জন এবং শহর পুলিশ ফাঁড়ির হাবিলদার আকতারকে। সব পুলিশ মিলে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মত দিতে হয়।

একইভাবে কথা বললেন, হোটেল আল ফয়সালের ম্যানেজার নামধারী জাহাঙ্গীর। তবে তিনি আরো বলেন, পুলিশ পরিচয় দিয়ে অনেকেই হোটেলে আসে। তাদের টাকার সাথে পতিতাও দিতে হয়। না হলে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলগুলোর নিচে অবস্থিত পানের দোকানদাররা বলেন, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা চলাকালে চোখে পড়ার মত ছেলে মেয়ে হোটেলে যাওয়া আসা করে। তারা আরো বলেন, পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যায়। পরে টাকার বিনিময়ে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে অপরাধীরা দিনদিন পার পেয়ে যাচ্ছে টাকার কারণে। পরবর্তী এ অপকর্মের জন্য তাদের কোন ধরণের ভয় ভীতি থাকে না বরং অবাধে করতে পারে।

শহরের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, উল্লেখিত হোটেল গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নারী হত্যাসহ বিভিন্ন অপকর্ম চলে আসছে যা প্রশাসন অবগত রয়েছে। তবে আরেক ব্যবসায়ী জানান, পুলিশ আসার আগেই অপরাধীরা পালিয়ে যায়। যার কারণে অভিযুক্তদের ধরতে পারছে না পুলিশ।

এনিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার মোহাম্মদ কাইয়ুম উদ্দিন জানিয়েছেন, বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তবে অভিযুক্ত অপরাধীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত থাকবে।

এদিকে এ অপকর্ম থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য এবং যুব সমাজকে রক্ষা করার স্বার্থে কক্সবাজার সচেতন মহল পুলিশ প্রশাসনের প্রতি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন