কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে ৯ মেম্বারের সংবাদ সম্মেলন

ramu pic k kop 10.04.17
রামু প্রতিনিধি :
রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণ, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, বিচারের টাকা আত্মসাৎ, বিচারপ্রার্থীসহ ইউপি সদস্যদের নাজেহাল ও নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ইউনিয়নের ৯ জন মেম্বার।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রামু চৌমুহনীতে এ সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য হাবিব উল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ১,২,৩নং ওয়ার্ড মহিলা সদস্য ছেনুআরা বেগম, ৪,৫,৬নং ওয়ার্ড মহিলা সদস্য ডা. নেবু রানী শর্মা, ১নং ওয়ার্ড সদস্য জহির উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মো. নুরুল আমিন, ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আবদুল্লাহ, ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মেহের আলী, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য বদরুল হুদা, ৯নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল আলম।

এ সব অভিযোগে কাউয়াখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের অপসারণ চেয়ে  কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, চেয়ারম্যান দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে জনস্বার্থ সংরক্ষণে আইনী প্রতিকারের আবেদন জানিয়েছে ওই  ইউপি সদস্যরা।

সাংবাদিক সম্মেলনে ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ লিখিত বক্তব্যে বলেন, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চলতি মেয়াদে ভিজিডি উপকারভোগীদের কাছ থেকে আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়েছে। পরিষদের সভা না করে, ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে হস্তান্তরিত সম্পত্তির ৪ লক্ষ ৪ হাজার ৩৯০ টাকা ও বাজার নিলামের ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৩৩ টাকা দূর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের এলজিএসপি-২ এর ১৫ লক্ষ ৩২ হাজার মধ্যে সেলাই মেশিন বাবদ ৮৫ হাজার টাকা ও গভীর নলকূপ বাবদ ৮৭ হাজার টাকাসহ ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ইউনিয়ন পরিষদের মহল্লাদার আবদুল মন্নানকে কোটেশন দাতা দেখিয়ে নিজেই উত্তোলন করে নিয়েছেন।

এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সভায় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে, ইউনিয়নের হোল্ডিং নাম্বার প্লেট বিতরণের ৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। চেয়ারম্যান বিচার করবেন বলে, গ্রাম আদালতের বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিন’শ টাকা ননজুডিসিয়াল অলিখিত স্ট্যাম্পে দস্তখত নিয়েও র্দীঘ দিনে বিচার কাজ শেষ করেননা। পরে বিচার প্রার্থীরা দস্তখতকৃত স্ট্যাম্প ও টাকা ফেরত চাইলে উল্টো বিচারপ্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন। এছাড়া জন্ম সনদে দেড় হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা, ওয়ারিশ সনদ, ভূমিহীন সনদ, মৃত্যু সনদ ও প্রত্যয়ন পত্রে ২শ থেকে ৫ শত টাকা করে আদায় করে নিজেই পকেটস্থ করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে ইউপি সদস্যরা বলেন, নিজের দূর্নীতি ও আত্মসাতের কাজ চালু রাখতে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বোর্ড গঠন করার জন্য কোন সভা করেননি। বর্তমান সরকারের ভিশন বাস্তবায়নের লক্ষে ডিজিটাল কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন গড়ার জন্যে নিয়মিত মাসিক সভা, বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠান, সুন্দর দৃষ্টিনন্দন কাজের স্বার্থে সিটিজেন চার্টার পদ্ধতি অনুসরন করেন না চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ। ইউপি সদস্যরা অভিযোগ তুলে আরো বলেন, চেয়ারম্যান প্রায় সময় বলেন ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বারদের কোন কাজ নাই, সব কাজ চেয়ারম্যানের। এক কোটি সাতাশ লক্ষ টাকা ব্যয় করে চেয়ারম্যান হয়েছি। এই টাকা তুলতে হবে।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের কয়েকবার নির্বাচিত মেম্বার ৪,৫,৬নং ওয়ার্ড মহিলা সদস্য ডা. নেবু রানী শর্মা বলেন, কাউয়ারখোপে আশংকাজনক হারে বেড়েছে বাল্য বিয়ে। বেশি টাকা নিয়ে জন্ম সনদ প্রদান করে রাতের আঁধারে বাল্য বিয়ে করাচ্ছেন চেয়ারম্যান নিজেই। তিনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছেন। নেবু রাণী অভিযোগ করেন, কোন মহিলা বিচারপ্রার্থী হলে বিচার করবেন বলে নিজের সাথে ২ ঘন্টা একা থাকার খারাপ প্রস্তাব দেন। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের অসম্মান করেন বলে ও তিনি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদকে অকার্যকর, স্বেচ্ছাচারি ও দূর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জনস্বার্থ সংরক্ষণে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের অপসারণ ও আইনুগব্যস্থার দাবী জানান সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ৯ জন ইউপি সদস্য।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন