এমপিওভুক্ত করার দাবি

কাপ্তাইয়ের হরিনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়: বিনা বেতনে শিক্ষকরা পড়ান ছাত্রদের

fec-image

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার দূর্গম হরিণছড়া অসহায় গ্রাম-পাড়াবাসীর অর্থদিয়ে বিনা বেতনে চলে উচ্চ বিদ্যালয়। কাপ্তাই ৪ নম্বর ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডে বেচারাম কার্বারী পাড়ায় অবস্থিত হরিণছড়া উচচ বিদ্যালয়। স্থানীয় পাহাড়ী পল্লীর গ্রামবাসীর আয়োজনে ২০২২সালে টিনের ছাদ ও বেড়া দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।

দূর্গম হরিণছড়া এলাকায় প্রাইমারী স্কুল থাকলেও নেই কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ঐ এলাকা হতে কাপ্তাই আসার দূরত্ব প্রায় ১৫ কি. মি.। আসতে হয় উঁচু -নীচু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নদীতে পথে। প্রাইমারী পাশ করে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়া লেখা করার সদিচ্ছা থাকলেও দূরত্ব কারনে তা হয়ে উঠে না। অনেকে প্রাইমারী পাশ করার পর ঝরে পড়ে। ২৯ জন শিক্ষার্থী এবং ৬ জন শিক্ষক ১ জন অফিস সহায়ক দিয়ে শুরু হয় স্কুলের পাঠদান।

চলতি বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী হতে ১০ম শ্রেণী পযন্ত পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। হরিণছড়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিশির কান্তি তনচঞ্চ্যা জানান, স্কুলটি এমপিওভূক্ত হয় নাই, তাই আমরা এলাকার শিক্ষা বিস্তারের কথা চিন্তা করে বিনা বেতনে এখানে শিক্ষকতা করছি।

এখানকার অধিকাংশ জনগোষ্ঠী গরীব তাই মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা যৎসামান্য যা বেতন দেয়, তা দিয়ে আমরা চেয়ার টেবিল এবং প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য খরচ বহন করি। স্কুলটি এমপিও ভুক্তকরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বসন্ত কুমার কার্বারী জানান, দূর্গম এ জনপদে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে কোন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই এই এলাকার ছেলে মেয়েরা ৫ম শ্রেণী পর অনেকদূরে গিয়ে বাসাভাড়া নিয়ে বা হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করে আসছেন। আবার আর্থিক অনটনের কারনে অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর পড়ালেখা করেন না। তাই আমরা এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করি। যেখানে এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের কোন বেতন আমরা দিতে পারি নাই।

তিনি আরও জানান, হরিনছড়া মুখ, ভাঙামুড়া, পাংখোয়া পাড়া, বেচারাম কার্বারী পাড়া, নবীন মেম্বার পাড়া হতে প্রায় ৪/৫ কি. মি. পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসেন পড়তে। তাই সরকারি সাহায্য ছাড়া আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই।

৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, এখানে সরকারি দুইটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখানে কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো না। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আমরা অনেক দিন ধরে চেষ্টার ফলে ২০২৩ সালের জানু্য়ারি থেকে এখানে বিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করেছি। দূর্গম অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে এই বিদ্যালয়টি এমপিও করার উদ্যোগ গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানাই।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে জানান, অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূর্গম এলাকায় যাতে শিক্ষা কার্যক্রম আরোও প্রসারিত হতে পারে সেই বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। তাই কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে যাতে এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হতে পারে সেই জন্য সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, ছাত্র, শিক্ষক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন