খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে শত শত রোহিঙ্গা নারী-শিশু: ৩ দিনের উপোস

মিয়ানমার সেনাদের গুলিতে আতঙ্কগ্রস্ত ৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সে দেশের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যকার যুদ্ধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী শতশত রোহিঙ্গা মুসলিম নারী-পুরুষ সীমান্তের নতুন আরো ৩০ কিলোমিটার পাহাড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে জড়ো হচ্ছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার সীমান্তের পর এবার নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি সীমান্তের এ দীর্ঘ পয়েন্টে খোলা আকাশের নিচে এসব শিশু ও নারী-পুরুষ বিপর্যস্ত অবস্থায় রাত যাপন করছে। ৩ দিনের উপোস অনেক শিশুকে নিয়ে মা-বাবা আহাজারী করছে আকাশের দিকে দু’ হাত তুলে। কান্নার আওয়াজে আকাশ ভারী হয়ে গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৫৫ কিলোমিটার এলাকা।

প্রতিটি মূর্হুতেই ছোট ছোট দলে রোহিঙ্গারা এখানে জড়ো হচ্ছে রোববার থেকেই। খবর পেয়ে স্থানীয় সেক্টর কমান্ডারকে সাথে নিয়ে বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার কর্ণেল এ এস আনিসুল হক ২৮ আগষ্ট দুপুরে পরিদর্শন করেছেন চাকঢালা-আশারতলী সীমান্ত পয়েন্টসমূহ। তিনি সীমান্তবাসীকে রোহিঙ্গা বিষয়ে সজাগ থাকার জন্যে আহবান জানান এ সময়।

এছাড়াও সীমান্তের ঘুমধুম-তুমরু পয়েন্টে অন্তত ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডে শিফ্টের ক্লাস চলাকালে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ- মিয়ানমার বাহিনীর গুলির আওয়াজের প্রেক্ষিতে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু আহমদ জানান,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের অন্তত ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডে শিফ্ট চলাকালে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল ২৮ আগস্ট সকাল ১০টার পরে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলার তুমরু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাজাবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি পাঠ চলাকালে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের এলাকায় মূর্হূমুহু গুলি ছুটে।

এ সব আওয়াজে শিক্ষার্থীরা ভয়ে এদিক ওদিক পালাতে থাকলে শিক্ষকরা অনুমতি নিয়েই দুপুর বেলা স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। অর্থাৎ ছুটি দিয়ে দেয়। তবে সন্ধ্যার পরে গুলাগুলির শব্দ বন্ধ থাকে এ পয়েন্টে
বলে তিনি জানতে পেরেছেন বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র থেকে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, রাখাইনে মানবিক বিপর্যয় চলছে।
তার ইউনিয়নের পাহাড়ি সীমান্তের নতুন ৩০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসে জিরো পয়েন্টে অমানবিক জীবন যাপন করছে। এদের মধ্যে শতশত শিশু ও নারী- পুরুষ কয়েকদিন ধরে অনাহারে কাতরাচ্ছে একমুঠো খাবারের জন্যে।

অপরদিকে সীমান্তের একাধিক গ্রামবাসী জানান, একদিকে মিয়ানমার নিরাপত্তা রক্ষীর গুলাগুলি ও নির্যাতন-অত্যাচারে অতিষ্ঠে আত্মরক্ষার জন্যে পালানোর চেষ্টা।

পক্ষান্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র অনুপ্রবেশ ঠেকানোর কঠোর অবস্থানের মাঝখানে ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকঢালা,আশারতলী,ফুলতলী, জামছড়ি সহ ৩০ কিলোমিটার এলাকার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে । যারা আতংকগ্রস্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে গহীন জঙ্গলে ও পাহাড়ের ঢালুতে বসে থেকে রাত যাপন করছেে গত রোববার থেকে। যা বিশ্ব বিবেকের এগিয়ে আসা উচিত বলেও দাবী জানান তারা।

ককসবাজারের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে: কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমরু সীমান্তের পর এবার চাকঢালা ও আশারতলীসহ পাহাড়ি বেশ এলাকায় রোহিঙ্গা শিশু ও নারী-পুরুষ মিয়ানমারে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছে।

বর্ডার র্গাড বাংলাদেশ বিজিবি’র জোয়ানরা এসব রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। বিজিবি জোয়ানরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা আগমন ঠেকাতে স্ট্যান্ডবাই রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন