“গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত দেড় বছরে জেএসএস(মূলের) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ১৫জন করে এবং রাঙামাটিতে ১২জন নিহত হয়েছে।”

গত ১৮ মাসে জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪২জনকে খুন করেছে- সিএইচটিআরএফের তথ্য

fec-image

নিহত ৪২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব হত্যাকাণ্ডে  শাসকদল আওয়ামী লীগের ৯জন, ৮জন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারী- বেসরকারী ব্যক্তি, ১৪জন জেএসএস(সংস্কারপন্থী গ্রুপ), এমএনপি ৫ জন, জেএসএস মূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১জন এবং ৪জন সাধারণ উপজাতি।

শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জ্যোতিপ্রিয় বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(জেএসএস) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪২জন খুন হয়েছে।

মোট ২৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারা এই ৪২জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন(সিএইচটিআরএফ) কর্তৃক প্রণীত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত দেড় বছরে জেএসএস(মূলের) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ১৫জন করে এবং রাঙামাটিতে ১২জন নিহত হয়েছে।

নিহত ৪২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব হত্যাকাণ্ডে  শাসকদল আওয়ামী লীগের ৯জন, ৮জন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারী- বেসরকারী ব্যক্তি, ১৪জন জেএসএস(সংস্কারপন্থী গ্রুপ), এমএনপি ৫ জন, জেএসএস মূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১জন এবং ৪জন সাধারণ উপজাতি।

সিএইচটিআরএফের গবেষণায় আরো দেখা গেছে, খাগড়াছড়িতে নিহত ১৫ জনের মধ্যে জেএসএস সংস্কারপন্থী ৭জন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী ব্যক্তি ৮জন। বান্দরবানে নিহত ১৫ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪জন, জেএসএস সংস্কারপন্থী ৬জন, এমএনপি ২জন ও ৩জন সাধারণ উপজাতি। রাঙামাটিতে নিহত ১২ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫জন, ১জন জেএসএস সংস্কারপন্থী, ৩জন এমনএনপি, ১জন ইউপিডিএফ(গণতান্ত্রিক), জেএসএস (মূল) ১জন এবং ১জন সাধারণ উপজাতি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত বন্ধ হওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু সন্তু লারমার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ জেএসএস তার সকল অস্ত্র জমা দেয়নি এবং সকল সামরিক সদস্যদের অস্ত্র সমর্পন করায়নি।

সম্প্রতি একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, তারা এটি সীমিত রেখেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সন্তু লারমা তার সশস্ত্র শাখার মাধ্যমে জোরালো সামরিক তৎপরতা শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, উপরের পরিসংখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাবো, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হোক এটা সন্তু লারমা চান না। সেকারণে সরকারের সম্প্রীতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশীদার হতে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়েছে তারা তার রোষানলে পুড়েছে।

বিশেষ করে তার সশস্ত্র সন্ত্রাস, জাতির মুক্তির নামে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণের মতো সমাজবিরোধী কার্যক্রমে বিতৃষ্ণ হয়ে যেসকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য জেএসএস ছেড়ে সরকারী দল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদের উপর জেএসএস নির্যাতন চালিয়েছে। বিশেষ করে যারা দল ত্যাগ করে অন্য সংগঠনে যোগ দিয়েছে বা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে এসেছে তাদেরকে নির্মম পরিণতির শিকার হতে বাধ্য করেছে জেএসএস।

মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, জাতির মুক্তির জন্য আন্দোলনের কথা বলে জেএসএস নিজ জাতির লোকদের উপরই চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ ও সন্ত্রাসের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। কেননা যে ৪২জন খুন হয়েছে তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জেএসএস, জেএসএসের সন্ত্রাস, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন