চকরিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্নার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ একটি বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট পরিহিত সশস্ত্র ৫ ব্যক্তি চেয়ারম্যানের ঘরে ঢুকে দু’জন গৃহকর্মীর হাত-পা বেঁধে তল্লাশির নামে ঘরের ভেতরে তছনছ করে। এ সময় চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত রুমের ভেতরে লকার ভেঙে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

শনিবার (‌১৪ অক্টোবর) রাত পৌনে ৮টার দিকে চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ঘটনাটি লিখে প্রকাশ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ ঘটনায় চেয়ারম্যান বাদী হয়ে ওইদিন রাতে চকরিয়া থানায় ১২ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এরই আগে শনিবার ভোর রাতে একটি সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে ১০-১২ জন দুষ্কৃতিকারী তার বাড়িতে ডুকে এ ঘটনা ঘটায়।

পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না দাবি করেন, সাদা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ১০-১২ জন দুষ্কৃতিকারী শনিবার ভোর রাতে বাড়িতে যান। তৎমধ্যে ৫ জন দুর্বৃত্ত বাড়িতে প্রবেশ করলেও অন্যরা ঘরের বাইরে অবস্থান নেয়। এটি ডাকাতি বা লুটপাটের ঘটনা নয়। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হানা দিয়েছিল। ব্যক্তিগত কাজে আমি স্ব-পরিবারে কক্সবাজার অবস্থান করায় আল্লাহর রহমতে প্রাণে বেঁচে গেছি।

তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বে গ্রাম আদালত চলাকালে দুষ্কৃতিকারীরা দিনদুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে হামলা করেছিল। অন্যদিকে, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট দিনদুপুরে আমার স্বামী নাসির উদ্দিন নোবেলকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা করি। পুলিশের দেয়া চার্জশিট মনপুত না হওয়ায় আইনজীবীর মাধ্যমে ৩ দিন শুনানির পরে আদালত নারাজি গ্রহণ করেন। এসব ঘটনার জের ধরেই আমাকে হত্যার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।

এদিকে, চেয়ারম্যানের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ফেসবুকে জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। চেয়ারম্যান ফারহানা মুন্নার স্ট্যাটাসে মহিউদ্দিন সুজন নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল নাকি, স্বামী হারা এক নারী, তার উপর একজন জনপ্রতিনিধি, এদেশে আর কার নিরাপত্তা আছে, প্রশাসন এইভাবে ঘুমন্ত।

চেয়ারম্যানের স্ট্যাটাসে কয়েকশত ব্যক্তি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে অভিমত প্রকাশ করেন।

একইভাবে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টোসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না বলেন, ঘটনার সময়ে স্ব-পরিবারে আমি কক্সবাজার ছিলাম। ভোরে ফোন করে বাড়ি থেকে জানানো হয় এ হামলা ও লুটপাঠের ঘটনাটি। এ ঘটনায় শনিবার রাতে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে থানায় একটি এজাহার দেওয়া হয়েছে

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, রাতে ইউপি চেয়ারম্যান নিজে থানায় এসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা হামলা করেছে তাদের শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনতে পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত: গত ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে দিন দুপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় ইউপি চেয়ারম্যান ফাহানা আফরিন মুন্নার স্বামী যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন নোবেল। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যা এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন নোবেল এর মৃত্যুর পর গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ফারহানা আফরিন মুন্না।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন