ভোগান্তিতে ১২ হাজার মানুষ

চকরিয়ায় ঘূর্ণিঝড় হামুনে ধসে গেছে মানিকপুর সেতু, ৭ দিন ধরে বন্ধ যাতায়াত

fec-image

★ সেতু ধসে যাওযার কারণে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যে বিক্রির করতে না পেরে নষ্ট ★ যাতায়াতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তি

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে ও ভারী বর্ষণে ধসে পড়েছে কক্সবাজার চকরিয়ার কাকারা-মানিকপুর সড়কের ফাইতং খালের ওপর নির্মিত প্রায় ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে গত সাতদিন ধরে চরম দুর্ভোগে পড়ছে মানিকপুর ও তার পাশ্ববর্তী এলাকার অন্তত ১২ হাজার জনগোষ্ঠী। ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবের পরে ওইদিন রাতে সেতুটি ধসে পড়ে। এসময় খালের সাথে লাগোয়া সড়কের ৫০-৬০ ফুট ধসে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

সরেজমিন জানা গেছে, উপজেলার কাকারা-মানিকপুর সড়ক দিয়ে ওই এলাকার অন্তত ৮-১০টি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত করে আসছিল। পাশাপাশি মানিকপুর ইউনিয়নের পাশ্বোক্ত ফাইতং এলাকার অন্তত দুটি গ্রামের প্রায় ৩ হাজার জনগোষ্ঠী এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। ফাইতং খালের সংযোগ সেতুর বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় গত সাতদিন ধরে ওই সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ফলে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর ও পাশের উপজেলা লামার সাথে চকরিয়া উপজেলা সদরের গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যে কারণে ওই এলাকার অন্তত ১২ হাজার মানুষ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মানিকপুর এলাকার অধিকাংশ লোকজন কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সেতুটি ধসে যাওযার কারণে অনেক দরিদ্র কৃষক তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজি ও তরিতরকারি সঠিক সময়ে বাজারজাত বা বিক্রি করতে না পারায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যার কারণে প্রান্তিক চাষিরা চরম হতশায় পড়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা চালু করা না হলে চকরিয়ার মানিকপুর ও লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের একটি অংশের কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী বন্ধ থাকবে। তাতে কৃষিপ্রধান ওই এলাকটির উৎপাদিত সবজিসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনে কৃষকদের বড়ধরনের ক্ষতির পরিণত ভোগ করতে হবে। এদিকে, সেতুটি ধসে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘূর্ণিঝড় হামুনের পরের দিন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী শাফায়াত ফারুক চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে ধসে যাওয়া সেতুর বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেন। এ সময় সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম ও স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সুরাজপুর মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে হামুনের তাণ্ডবের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এসময় কাকারা মানিকপুর সড়কের ফাইতং খালে বন্যার পানির প্রবল স্রোত বেড়ে গিয়ে একপর্যায়ে সেতুটি এপ্রোচের মাটি সরে গিয়ে ওইদিন রাতে সেতুটি ধসে পড়ে। ফাইতং খালের সংযোগ সেতুর বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় গত একসপ্তাহ ধরে ওই সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ফলে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর ও পাশ্বোক্ত লামার সাথে চকরিয়া সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যে কারণে ওই এলাকার প্রায় ১২ হাজার মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, মানুষের যাতায়াতের জন্য ও গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে একটি অস্থায়ী ব্রিজ স্থাপন করার সিন্ধান্ত নিয়েছি। অস্থায়ী ব্রিজের বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ করতে একটু সময় হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ধসে পড়া সেতুটি পুনর্নির্মাণে প্রশাসনের দায়িত্বশীল দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী সাফায়াত ফারুক চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে ধসে পড়া সেতুটি সমীক্ষা করে এলজিইডির পক্ষথেকে একটি প্রতিবেদন কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী চকরিয়ার ধসে পড়া এলাকায় নতুন একটি সেতু নির্মাণের বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, নতুন করে সেতু নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প উপায়ে মানুষের যাতায়াত নিশ্চিত করতে অস্থায়ী একটি ব্রিজের কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান জানান, খুব শিঘ্রই ভেঙ্গে যাওয়া সেতুটি নতুনরূপে স্থাপন করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তার জন্য কিছু দিন সময়ও লাগতে পারে। ইতোমধ্যে সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সেতু নির্মাণে অর্থবরাদ্দ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দিয়ে যাতে মানুষের চলাচল নিশ্চিত করা যায় সেজন্য আমরা দুয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়, চকরিয়া, হামুন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন