টমটমের ভারে অস্থির পর্যটন শহর

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কর্তৃপক্ষের দায়সারা মনোভাবের কারণে অননুমোদিত টমটমের ভারে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে কক্সবাজার শহর। এসব টমটমের বেশির ভাগ চালক অদক্ষ এবং কিশোর বয়সের। একারণে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। টমটম দুর্ঘটনায় এই পর্যন্ত অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর পরেও টমটম নিয়ন্ত্রণে তেমন কোন সঠিক পদক্ষেপ নিতে চোখে পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন স্বাক্ষীগোপালের ভূমিকায় থাকায় পর্যটন শহরে দিনের পর দিন টমটমের দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণার ইতি ঘটছে না। শেষ হচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা ও যানযট।

বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে হিমছড়ি এলাকায় কক্সবাজার সৈকত দেখতে এসে এক নারী পর্যটককে লাশ হয়ে ফিরতে হলো। টমটম ও মাইক্রোবাসের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে এতে বেশ কয়জন আহত হয়। নিহত হয় নারী পর্যটক। নিহত নারী পর্যটক ঢাকা শাহজলাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর শুল্ক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার আহসানুল কবিরের স্ত্রী শাম্মী খানম তানিয়া (২৭) বলে জানাগেছে। তানিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বিভাগের মার্স্টাসের ছাত্রী।

গত বছর শহরের বাজারঘাটা ও কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে টমটমের সাথে গলায় ওড়না পেছিয়ে দুই ছাত্রী পৃথকভাবে প্রাণ হারান, এর আগে সিটি কলেজের সামনে এফডিসির এক কর্মকর্তার স্ত্রী টমটমের সাথে ওড়না পেছিয়ে প্রাণ হারান। আওয়ামী লীগ নেতা ও কমিনিউটি পুলিশের সভাপতিও এই শহরের টমটমের ধাক্কায় প্রাণ হারাণ। সাধারণ মানুষের অগোচরে অনেক মানুষ আহত ও নিহতের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে ৩ হাজার টমটমের দাবি করে আসলেও বিভিন্ন সূত্রমতে প্রতিদিন চলছে এই শহরে আনুমানিক ৭ হাজার টমটম। এখনও পর্যন্ত এই টমটমের (ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক) বিআরটিএ থেকে কোন অনুমোদন নেই। পৌরসভা থেকে তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানিক নাম্বার দিয়ে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে তারা। অভিযোগ আছে প্রতি টমটমের নাম্বারের বিনিময়ে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। মেয়র কাউন্সিলরসহ পৌরসভার বেশ কিছু কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে বলে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজার পৌর টমটম মালিক চালক ঐক্য পরিষদ সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, অপরিকল্পিত নগরায়নের পাশপাশি কক্সবাজার পৌরসভার যানজটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সবার আগে দায়ী করবো পৌর কর্তৃপক্ষকে। তাদের দায়সারা কারণে এসব হচ্ছে। এখানে যাচ্ছে তা হচ্ছে যেন দেখার কেউ নেই। আমরা টমটম মালিক পক্ষের লোকজন হলেও আমরা নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থ সবার আগে।

এক শ্রেণির অসাধু ট্রাফিক এ টমটমকে নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে। কোন টমটম ধরলে ছাড়া পায় ২২শ টাকায়। ট্রাফিক পুলিশ তাদের অনৈতিক চাওয়া পূরণ না করলে মামলাসহ টমটম জব্দের ভয় দেখায়। এইভাবে আইন প্রয়োগকারীদের কর্তৃক অবৈধ টমটম চালকরা ছাড় পাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনাও হ্রাস পাচ্ছে না। একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে শহরের সড়ক ও উপ-সড়কে।

সম্প্রতি কক্সবাজারের ঝিলংজা ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে হামলার ঘটনায় এক টমটম চালকের করুন মৃত্যু হয়েছে। একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত টমটম চালকের নাম আব্দু রহিম (১৫)। তিনি স্থানীয় দক্ষিণ মুহুরি পাড়া এলাকার শেকায়েত উল্লাহর পুত্র। এটিও টমটম দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতবড় ঘটনা ঘটেছে। এখনই এই টমটম বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধান্ত না নিলে আগামীতে আরো ভয়ংঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এই জনপদের মানুষকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন