টেকনাফে নিয়ন্ত্রণহীন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলো : বিপাকে স্থানীয়রা
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ :
নিয়ন্ত্রহীন হয়ে পড়েছে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে বিপাকে পড়েছে স্থানীয়রা। উখিয়া-টেকনাফে যে সমস্ত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে তাদের সম্প্রতি সময়ের কার্যকলাপে এই ধারণা করছেন বিশ্লেষক মহল।
সরকার বিরোধী সহিংসতায় অর্থের বিনিময়ে ক্যাম্প গুলোর রোহিঙ্গারা অংশ নিতে পারে বলেও মনে করে তারা। বোদ্ধাদের রোহিঙ্গাদের প্রতি সন্দেহের তীর ছুঁড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে শরর্ণার্থীরা ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে অবাধ বিচরণ করার মতো সুযোগ থাকার কারণে। উখিয়া টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অনেকটা অপ্রতিরুদ্ধ। ক্যাম্পের থেকে যখন ইচ্ছে বের হতে পারে বাংলাদেশে আশ্রিত এসব ভিনদেশী নাগরিক। আর এ কারণে যেকোন কাজে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা যাচ্ছে অর্থের বিনিময়ে।
এমতাবস্থায় দেশের চলমান অস্থিরতায় রোহিঙ্গাদের যে কোন সহিংসতামুলক কর্মকাণ্ডে অল্প পারিশ্রমিকে সন্তুষ্ট রোহিঙ্গাদের ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একাধিক সূত্র মতে, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু এবং ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়াসহ জেলার বৌদ্ধ মন্দিরে হামলায় রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার রয়েছে মর্মে খবর বেরিয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এছাড়াও ১৫ ফ্রেব্রুয়ারী কক্সবাজার শহরে জামায়াত শিবিরের সহিংসতায় তিন জনের মৃত্যু হয় পুলিশ- জামায়াত সংঘর্ষে। আর এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। এ সহিংসতায় অংশগ্রহনের অভিযোগে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এছাড়া বিভিন্ন সয়ম টেকনাফের লেদা, নয়াপড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বেশ কয়েকবার পরিত্যক্ত অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বিজিবি পুলিশ। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প গলোতে খুন খারাবির ঘটনাও ঘটে অনেক সময়। তবুও থেমে তারা এখনো অপারাধ করে আসছে ভয়ঙ্কর রোহিঙ্গারা।
স্থানীয়রা বলছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণে যেনতেন ভাবে রোহিঙ্গারা নিজেদের পরিচালিত করছেন। ক্যাম্পের চারদিকে দীর্ঘদিন সীমানা প্রাচীর না থাকার কারণে তারা অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারছে যখন তখন।
জানা যায়, উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর থেকে দিন দিন নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে প্রশাসন। মানবিক বিপর্যস্তের অজুহাতে টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রিত বার্মাইয়ারা এখন প্রতিদিন অপরাধ জগতে ঢুকে পড়ছে।
এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে স্থানীয় লোকালয়ে অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা দেয়া। বলা হচ্ছে পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে আছে দীর্ঘদিন থেকে টেকনাফ শরণার্থী শিবিরগুলো। মিয়ানমার থেকে নানা কারণে বিতাড়িত এসব রোহিঙ্গারা অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাসের জায়গা হিসেবে ক্যাম্প স্থাপন করে নিয়ম বেঁধে দেয়া হলেও সেখানে যা ইচ্ছে তাই করছে এসব ভিনদেশীরা। আশ্রিত হিসেবে তাদের জীবনযাত্রায় সীমাবদ্ধতার কোন কিছুই মানছেনা রোহিঙ্গারা।
অভিযোগ আছে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রত্যক্ষ মদদে নানা অপরাধ কর্মকান্ডের প্রাক্টিস করে থাকে। এছাড়া অস্ত্র বানানো, মার্শাল আর্টসহ বিভিন্ন অপকর্মের পশরা বসায় তারা সেখানে। সব চেয়ে মারাত্বক ও ঝূঁকিপূর্ণতা হচ্ছে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে যে কোন সময় আসা যাওয়া করতে পারে। এভাবে যখন তখন যেখানে সেখানে আসা যাওয়ার ফলে তারা ইচ্ছামত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং পুনর্বাসিত হচ্ছে।
তাছাড়া সেখানে সন্দেহভাজন অপরচিত মানুষের আনা গোনা চলে প্রতিদিন। দীর্ঘদিন থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গাইড ওয়াল বা কাঁটা তাঁরের বেড়া না থাকার কারণে তাদের এই অবাধ বিচরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অরক্ষিত এমনকি প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারী না থাকার কারণে এখানে নানা ঘটনার সূত্রপাত ঘটছে। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গারা ব্যবহার হচ্ছে রাজনীতিতে।
নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ জালাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, কোন রোহিঙ্গা যদি কোথাও জরুরী কাজে যেতে চায় তবে তাকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ক্যাম্পের চারিদিকে কোন গাইড ওয়াল বা কাটাতাঁরের বেড়া না থাকায় কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
টেকনাফের নায়াপাড়া, মোছনি, লেদা পৃথক ৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। যেখানে প্রায় লক্ষাধিক মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসায় মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দেয় ওই সব ক্যাম্পে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সেবা দিয়ে আসছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। এরপরও আরো বেশি সুযোগ সুবিধার জন্য রোহিঙ্গারা বাইরে বের হয়ে নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে টাকার বিনিময়।
তড়িতভাবে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতার মধ্যে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন এখানকার সচেতন মানুষেরা।