তাইন্দং সহিংসতায় তদন্ত কমিটির কাছে জামায়াতের সম্পৃক্ততা দাবী করেছে পাহাড়ীরা

taiendang

গত ৩ আগস্ট ২০১৩ খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দঙে পাহাড়ী- বাঙালী সংঘর্ষের এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩৫টি উপজাতীয় বাড়ি, ৩টি বাঙালী বাড়ি ও ২টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। ঘটনা তদন্তে খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ করিম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের( উপসচিব) নেতৃত্বে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।  কমিটি গত ৩ সেপ্টেম্বর তার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়। গোপনীয় মার্কিং করা এই তদন্ত প্রতিবেদনটি পার্বত্যনিউজের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনে শুধু তাইন্দঙের ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণই শুধু নয় পার্বত্য রাজনীতির নানা দিকে উঠে এসেছে। ফলে তা জানার আগ্রহ পার্বত্যবাসী তথা দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিকের।  এ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পার্বত্যনিউজের ধারাবাহিক স্পেশাল রিপোর্ট- ‘তাইন্দং সহিংসতা: কি আছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে।’

নিজস্ব প্রতিবেদক :

(দুই)

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে গত ৩ আগস্ট সৃষ্ট সহিংসতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে এক সময়ের জেএসএস নেতা দেবব্রত চাকমা। এ ঘটনায় ঢাকায় বসে জামায়াত নেতা এয়াকুব আলী চৌধুরী ও আলকাছ আল মামুন নেতৃত্ব দিয়েছে বলেও সরকারী তদন্তকালে দাবী করেছেন তিনি।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. মোজাম্মেল হক এর নেতৃত্বে গঠিত এক সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমন চমকপ্রদ তথ্য।

তদন্তকালে ঘটনা নিয়ে দেয়া বক্তব্যে দেবব্রত চাকমা ২০০৯ সালের ১৫ অগস্ট সৃষ্ট ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, সেসময় মাটিরাঙ্গার ২৪টি পাহাড়ী পাড়া নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তদন্তকালে তিনি বলেন, ৩ আগষ্টের ঘটনার সাথে কেউ কেউ বিএনপি-আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার কথা বললেও এ ঘটনায় জামায়াতের প্রভাব ছিল। জামায়াত নেতা এয়াকুব আলী চৌধুরী ও আলকাছ আল মামুন ঢাকা বসে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাইন্দংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল দাবী করে তিনি বলেন, জেলা বিএনপির নেতারা ঘটনা সম্পর্কে জানত না।

তাইন্দং সহিংসতায় তদন্তকালে দেয়া লিখিত বক্তব্যে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম সহিংসতার সাথে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ তার অনুগত কর্মীদের জড়িত থাকার কথা বললেও তাইন্দং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মেম্বার মো: হানিফ মিয়া রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোন অভিযোগ করেননি তার দেয়া লিখিত বক্তব্যে।

এদিকে দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে চলা তদন্তকালে তাইন্দংয়ের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে, ঘটনার সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইংগিত রয়েছে বলেও মনে করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি মনে করেন সরকারের মেয়াদের শুরুতে এবং শেষ দিকে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক সুবিধাভোগী লোক পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। ৩ আগস্টে তাইন্দং সহিংসতায় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ছিল বলেও মনে করেন তিনি।

তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৭ দিন ধরে চলা নির্বাহী তদন্তে ২৭ জনের লিখিত স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এর মধ্যে ১২ জন পাহাড়ী এবং ১৫জন বাঙ্গালী। বাঙ্গালী ১৫জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১১জন সরাসরি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, ৩জন বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে এবং দুইজন স্বাক্ষী সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয় বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। অন্যদিকে ১২জন পাহাড়ী স্বাক্ষীর মধ্যে ৫জন সরাসরি স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছে।

৩ আগষ্টের তাইন্দং সহিংসতায় কেউ কেউ জামায়াতের প্রভাব আবার কেউ কেউ স্থানীয় বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা হলেও জামায়াতের কোন নেতাকর্মীকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়নি। আবার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ মুল পরিকল্পনাকারী হলে সেখানে কেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের মামলায় অভিযুক্ত করা হলো তাও পরিস্কার করা হয়নি স্থানীয় কারো বক্তব্যে। তাহলে কি আওয়ামীলীগ সমর্থকরা কারো প্রতিহিংসার শিকার এমন প্রশ্ন স্থানীয় অনেকেরই।

সার্বিকভাবে রিপোর্টের মন্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তদন্ত কর্মকর্তা সরকারদলীয় লোকদের একপেশে বক্তব্যকেই আমলে নিয়েছেন। জেলে বন্দী অভিযুক্ত মূল আসামীদের কোনো বক্তব্য তার এই তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসেনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন