ত্রিমূখী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে শান্তিচুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি পালিত

10846620_730961070331516_1671152250_n (1)

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

ত্রিমূখী কর্মসূচি, গাড়ী ভাংচুর, বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা, পুলিশের সাথে হাতাহাতির মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার খাগড়াছড়িতে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৭-তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ‘র দিনব্যাপী নানা কর্মসুচি পালিত হলেও শান্তিচুক্তিকে কালোচুক্তি আখ্যায়িত করে চুক্তি বাতিলের দাবীতে খাগড়াছড়ি বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ ও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি খাগড়াছড়ির জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

দিবসটিকে ঘিরে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়নের যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরে বর্নাঢ্য আনন্দ র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয় । র‌্যালীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং হাজার হাজার উপজাতি-বাঙালি নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করে। র‌্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে করে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে হয়। সকাল ১১টার দিকে টাউনহল মিলনায়তনে শেষ সাংবাদিক জীতেন বড়–য়ার সঞ্চালনায় পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি জেলার সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করেন। এ চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে দু’ যুগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে। জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকীধারাগুলো বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তির স্বর্গরাজ্যে পরিনত হবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ভাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহবান জানান।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন-খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার কাজী শামসুল ইসলাম পিএসসি, নবাগত কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার স.ম মাহবুবুল আলম পিএসসি, বীর মুক্তিযোদ্ধা রণবিক্রম ত্রিপুরা, মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার রইস উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিম, পুলিশ সুপার শেখ মিজানুর রহমান, পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. চঞ্চুমনি চাক্মা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলম সহ প্রমূখ।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সিনি: সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রণবিক্রম ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ শান্তির যে সুবাতাস বইছে, তা বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ী-বাঙ্গালীর সম্প্রীতির বন্ধনের বিকল্প নাই।

সমাপণী বক্তব্যে পাজেপ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা বলেন, এই সরকারের আমলেই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী ইতোমধ্যে ৩৪টি বিভাগের মধ্যে ২৯টি বিভাগই পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয়েছে। বাকী বিভাগগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। দুপুরে লারমা স্কোয়ার হতে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে জিয়া স্কোয়ার এর সামনে পুলিশ বাঁদায় পড়ে। এসময় উত্তেজনার ছড়িয়ে পড়লে বিআরটিসি বাস, মাইক্রোসহ কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।

পরে সূর্যশিখা ক্লাব মাঠে প্রীতিময় চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি সুধাসিন্ধু খীসা, কেন্দ্রীয় নেতা সুধাকর ত্রিপুরা, বাতায়ন চাকমা, ভূপতি চাকমা ও সোহাগ চাকমা। অনুষ্ঠানের জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি ও সাবেক গেরিলা নেতা সুধাসিন্ধু খীসা অস্তিত্বের স্বার্থেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনকে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করা না হলে আরো রক্ত দিতে হবে পাহাড়ীদের। তিনি আদর্শগত বা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলারও আহবান জানিয়েছেন।

অপরদিকে, পার্বত্য চুক্তিকে কালোচুক্তি ও এ চুক্তি বাতিলের দাবী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি সাহাজল হোসেন সজল সম্পাদক এস এম মাসুম রানার নেতৃত্বে মিছিলটি চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে বের হয়ে শহরের দিকে আসতে চাইলে মহাজন পাড়া এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিকালে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রীতি ফুটবল খেলা ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লেজার শো অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন