থানচিতে দিন দিন বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত
বান্দরবানে থানচিতে ম্যালেরিয়া প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে। চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। দুর্গম বড় মদক এলাকার গত রোববার ৮ বছরে এক মেয়ে জুম ঘরে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া খবর পেয়েছে। এছাড়াও তলপেটে ব্যাথা, ভাইরাস জ্বর, ডায়রিয়া, টাইফয়েট, শিশুদের নিউমুনিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা ব্যাপী পাহাড়ে বিভিন্ন পাড়াগুলিতে সকল বয়সী মানুষ রোগে ভুগছে । হাটবাজারে বিভিন্ন ফার্মেসির দোকানে ঔষদের জন্য ভীর জমাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আক্রান্ত হওয়া সচেতন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে সু- চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছে অনেকে । প্রতিদিনই বাড়ছে এ রোগের সংখ্যা। উপজেলার স্বল্প সংখ্যক ফার্মেসিগুলোয় প্যারাসিটামল, নাপা, অ্যান্টিবায়োটিক–জাতীয় ওষুধের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত অনেকে বড় মদক থেকে থানচি সদরে আসতে যানবহন ভাড়ার অভাবে আসতে চায়না। অপরদিকে জুমের কাজ ফেলে হাসপাতালের আসতে অনীহা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গত ৬ দিনে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে ১১ জন ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা পেয়ে ২ জন বাড়িতে ফিরে গেছে। বাকি রোগিগুলি চিকিৎসাধীন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের পাহাড়ে বিভিন্ন পাহাড়ি পাড়াগুলিতে নানা বয়সী মানুষের তলপেটের ব্যথা, ভাইরাস জ্বর, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, শিশুদের নিমুনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । সচেতন রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন । অসচেতন ও যোগাযোগ বিছিন্ন এলাকার রোগিরা স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে সেবন করছেন ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টা সরেজমিনে গেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডিউটিরত সিনিয়র নার্স উর্মি তংচংঙ্গা বলেন, জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আজ ৬ তারিখ পর্যন্ত ম্যালেরিয়া ১১ জন, ডায়রিয়া ৫ জন, ভাইরাস জ্বরের ৮ জন, তলপেটে ব্যথা জনিত ১ জনসহ নানান রোগে মোট ১০ জন ভর্তি হয়েছে। দুই জন আজ সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে বাকিরা চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রেমাক্রী ইউনিয়নের ১, ২, ৩নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী মেম্বার উম্যাচিং মারমা বলেন, রেমাক্রী ও তিন্দু ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া ৫/৬ জন জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া যাবে কিন্তু কেউ কেউ সাধারণ ঔষধ খেয়ে ভালো হয়ে যায়, কেউ কেউ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে, না পারলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন চিকিৎসা নিতে। আমার বড় মেয়ে জ্বর হয়ে আজ ৯ দিন গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি হয়েছে এখনও ভালো হয়নি। চিকিৎসা চলমান রাখা হয়েছে। ম্যালেরিয়া কিনা কিছু জানা যায়নি।
কর্তব্যরত চিকিৎসক আরএমও ডা. সিহাম বলেন, পাহাড়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের ভাইরাস জ্বর, তলপেটে যন্ত্রণা, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক । সময়ের প্রয়োজনে তাদের যত্রতত্র ঘোরাঘুরি না করা ভালো। ঘরে বিশ্রামে থাকার দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার পাশাপাশি তরলজাতীয় খাবার ও বিভিন্ন ফলমূল খাওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, গত বছরের তুলনা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত বাড়ছে, তবে ডায়রিয়া কমছে। কিন্তু পাহাড়ে ম্যালেরিয়া অসম্পূর্ণ, ম্যালেরিয়া সময়মতো ঔষধ সেবন করলে সুস্থ হয়। ডিগিইয়ার ম্যালেরিয়া রোগীকে অবশ্যই ইনজেকশান ও স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় ঔষধ সরবরাহ করেছি। এছাড়াও ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বিজিবির মাধ্যমেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঔষধ সরবরাহ করে থাকি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে বিনামূল্যে ঔষধসহ চিকিৎসা দিয়ে থাকি।