নির্বিচারে কাটা হচ্ছে রির্জাভ ও সামাজিক বনাঞ্চলের পাহাড়, বাড়ছে বসতি

dav

চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পরপর হিড়িক পড়েছে সরকারি বনাঞ্চলের দখলে নেয়া পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীন চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বনবিটের রির্জাভ ও সামাজিক বনায়নের জায়গায় চলছে এ অবৈধ কার্যক্রম। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন পাহাড় কেটে সমতল করে সেখানে গড়ে তুলছে নতুন নতুন অবৈধ বসতি। গত একমাস ধরে উপজেলার একাধিক পয়েন্টে এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও বনবিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর এব্যাপারে পালন করছে নীরব দর্শকের ভুমিকা। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারনে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড় কাটার এসব স্থানে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে পরিবেশ সচেতন মহল।

অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় কাটায় জড়িতরা স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব অপর্কম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে পাহাড় কেটে জায়গা সমতল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা প্লট আকারে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শেষে বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে বেশি পাহাড় কাটার ঘটনা চলছে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জে। রেঞ্জের অধীন চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ি বনবিটের লম্বাতলী এলাকায় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট শুধুমাত্র পাহাড় কেটে বনবিভাগের জায়গার শ্রেনী পরিবর্তন করে তা প্লট আকারে বিক্রির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাদের কবল থেকে বাদ যাচ্ছেনা সামাজিক বানায়নের মাধ্যমে সৃজনকৃত ২০০৫-০৬ সালের বাফার জোন বাগান পর্যন্ত। অভিযুক্তরা শ্রমিক দিয়ে বনভূমির পাহাড় কেটে সেখান থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে মাটি কেটে বিক্রি করছে বাইরে। বিশেষ করে উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২০০৫-০৬ সালের সৃজনকৃত সামাজিক বনায়নের ২নম্বর গ্রুপের উপকারভোগী খুটাখালী ইউনিয়নের পূর্ব নয়াপাড়ার ফকির আলমের স্ত্রী রওশন আরা বেগমের নামীয় প্লটটি প্রকাশ্যে কেটে জমি তৈরী করছে এলাকার প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম প্রকাশ কয়লা রফিক ।

অভিযোগ উঠেছে, এভাবে বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বনবিটের অধীন এলাকায় প্রভাবশালী ভুমিদস্যু চক্র বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন পাহাড় কেটে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি বিক্রি করছে আশপাশের ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণ কাজে। আবার কেটে নেয়া ওই জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন অবৈধ বসতি। পরিবেশ সচিতন মহলের দাবি, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিন তদন্ত করলে পাহাড় কাটার ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে পাবেন।

ফুলছড়ি বনবিটের খুটাখালী ইউনিয়নের ২০০৫-০৬ সালের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী রওশন আরা বেগম অভিযোগ করে জানান, এলাকার প্রভাবশালী রফিকুল ইসলাম প্রকাশ কয়লা রফিক কিছুদিন আগে জোরপুর্বক তার প্লটে হানা দিয়ে সামাজিক বনায়নের পাহাড় কেটে মাটি লুটে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড় কেটে শ্রেনী পরিবর্তন করে তা প্লট আকারে বিক্রি করে দিচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় বনবিভাগকে একাধিকবার জানালে তারা কোন ধরণের ব্যবস্থ গ্রহন করেনি। তিনি দাবি করেন বনবিট কর্মকর্তার সাথে অভিযুক্তদের সুসম্পর্ক থাকার কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেনা স্থানীয় বনবিভাগ।

জানতে চাইলে বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মোকাম্মেল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বনায়ন নেয়ার পর থেকে মুলত উপভোগীরা বনবিভাগকে কোন রকমের সহযোগিতা করেন না। তাই ভুমিদুস্যুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, তারপরও বনবিভাগের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন