পারিবারিক কলহের জের ধরে রাঙামাটিতে বৈদ্যুতিক শর্ট দিয়ে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করেছে পাষণ্ড স্বামী

rangamatinews12august

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:

পারিবারিক কলহের জের ধরে রাঙামাটিতে নুরন্নাহার বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধৃকে বিদ্যুতের শর্ট দিয়ে হত্যা করেছে পাষণ্ড ঘাতক স্বামী বাচ্চু মিয়া। বাচ্চু মিয়া রাঙামাটি টেকনিক্যাল স্কুল টিটিসি”র ইলেকট্রিক বিষয়ক শিক্ষক বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১২ তারিখ দিবাগত রাতে স্বামী বাচ্চু মিয়া গৃহবধু নুরন্নাহারকে হত্যা করে সকাল ৬টায় রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে জানাজানি হলে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে এলাকাবাসী এসে ঘাতক স্বামী বাচ্চু মিয়াকে আটক করে রাঙামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের আমানতবাগ সিও অফিস এলাকায় স্বামী মারা যাওয়ার পরে নুরুন্নাহার প্রায় ১০-১২বছর আগে রাঙামাটি টেকনিক্যাল স্কুল টিটিসি”র ইলেকট্রিক বিষয়ক শিক্ষক বাচ্চু মিয়াকে বিয়ে করে। নুরুন্নাহারের প্রথম স্বামীর ঘরে দুটি মেয়ে আছে। তাদের মধ্যে ঝর্ণা বেগম(১৯) রাঙামাটি সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী আর দ্বিতীয় জন পান্না বেগম নবম শ্রেণীর ছাত্রী। দ্বিতীয় স্বামী বাচ্চু মিয়ার ঘরে নুরুন্নাহার বেগমের আরো দুটি সস্তান আছে। তার মধ্যে একজনের বয়স তিন বছর আরেকজনের বয়স ১বছরের কাছাকাছি।

নুরন্নাহারের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আলাপ করে জানা যায় , নুরন্নাহার বেগমের প্রথম স্বামী সরকারী চাকুরে হওয়ায় তার প্রথম স্বামীর পেনশনের সবটাকা দ্বিতীয় স্বামী বাচ্চু মিয়া বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার পর সে আবারো অন্যজনের সাথে পরকীয়া অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। বাচ্চু মিয়া বিভিন্ন জায়গায় আরো ৪টি বিয়ে করেছেন বলে জানান নুরুন্নাহার বেগমের আত্মীয়-স্বজনরা।

এ বিষয়গুলো নিয়ে নুরন্নাহার বেগম প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন অযুহাতে স্বামী বাচ্চুমিয়া তাকে আবারো অমানুষিক নির্যাতন ও অত্যাচার শুরু করে। অসহায় ৪টি সন্তানের কথা চিন্তা করে গৃহবধূ নুরুন্নাহার দীর্ঘদিন ধরে সবকিছু সহ্য করে যেত। পরবর্তীতে নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশঃ বেড়ে গেলে নুরন্নাহার বেগম নিরুপায় হয়ে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করলে কিছুদিন আগে বাচ্চু মিয়াকে জেলে পাঠায় আদালত। জেল থেকে ৬মাস পর বের হয়ে বাচ্চু মিয়া আবারো নুরন্নাহার বেগমের উপর নির্যাতন শুরু করে।

রাউজান থেকে আসা নিহত নুরন্নাহার বেগমের ফুফাতো ভাই মোঃ জাহিদ জানান, গত কয়েকদিন আগে থেকে তার বোন নুরন্নাহার বেগম বাচ্চু মিয়ার নির্যাতনের বিষয়টি জানিয়েছিলেন।এবিষয়ে ক্ষুদ্ধ জাহিদ বলেন সুপরিকল্পিতভাবে তার বোনকে হত্যা করেছে বাচ্চু মিয়া। জাহিদ বাচ্চু মিয়ার ফাসিরঁ দাবী করেন। নিহত নুরন্নাহার বেগমের ভাগিনি ফিরোজা বেগম, রানীরহাট থেকে আসা ননদ খুশী বেগম, আমানতবাগ সিও অফিস এলাকার পাশ্ববর্তী রাশেদা বেগম, নিহত নুরন্নাহার বেগমের প্রথম স্বামীর বড় বোন খদিজা বেগমসহ রাঙামাটি সদর হাসপাতালে উপস্থিত আরো অর্ধশতাধিক নারী বাচ্চু মিয়ার নির্মম নির্যাতনের বর্ননা দেন।

তারা বলেন, পবিত্র শবে কদরের রাতে ও নুরন্নাহারকে মারধোর করেছিল বাচ্চু মিয়া। এমনকি এবার ঈদের সময় ও নুরন্নাহার বেগম ও তার সন্তানদের কোন কাপড়-চোপড় দেয়নি বাচ্চু মিয়া এবং এবার নুরন্নাহার বেগম ও তার সন্তানদের ঈদ ছিল অনেকটা বেদনার। তারা সকলে অভিযোগ করে বলেছেন, বাচ্চু মিয়া বৈদ্যুতিক শর্ট দিয়ে নুরন্নাহার বেগমকে হত্যা করেছে। তারা বাচ্চু মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

গৃহবধৃ নুরন্নাহার বেগমের হত্যার বিষয়ে আটক বাচ্চু মিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তা সে অস্বীকার করে উল্টো নুরন্নাহার বেগম নিজে শর্ট লেগে মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানায়। হাসপাতালে উপস্থিত ঐ এলাকার আলোড়ন নারী সংস্থার সভাপতি নূরজাহান বেগম পারুল বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী বাচ্চু মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য তারা যা কিছু করার তা করবে বলে জানান তিনি।

নুরন্নাহার বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে রাঙামাটি সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: মং ক্য চিং বলেন, নুরন্নাহারকে সকালে ৬টায় যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন সে মৃত ছিল। অনেক আগেই নুরন্নাহার বেগমের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানান ডা. মং ক্য চিং। নিহত নুরন্নাহারের লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাঙামাটি সদর হাসপালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

রাঙামাটি কোতয়ালী থানার এস আই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাচ্চু মিয়াকে আটক করে কোতয়ালী থানায় রাখা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ হাতে আসলে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন