পার্বত্য অঞ্চলে শাসনের নামে চলছে অপশাসন : সন্তু লারমা

পার্বত্য চুক্তি হয়েছে স্বশাসনের জন্য- ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়

OLYMPUS DIGITAL CAMERA

স্টাফ রিপোর্টার:

পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা বলেন, আজকে পার্বত্য অঞ্চলে শাসনের নামে চলছে অপশাসন। এখানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এক ধরনের অপারেশন চালানো হয়। এ অঞ্চলে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা চলছে. যেখানে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আজকে যারা জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে চিন্তা-ভাবনা করছে, তারা এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিস্মরণীয় নেতা মানবেন্দ্র লারমার ৭৬তম জন্মদিন পালন উপলক্ষে এম.এন. লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা শুধু পাহাড়ের নেতা ছিলেন না, তিনি বিশ্ববাসীর নেতা ছিলেন। তিনি সবসময় শোষণ, নিপীড়ন বিপক্ষে কথা বলেছেন। মানবেন্দ্র লারমার বৈপ্লবিক জীবন সকল বিপ্লবী মানুষের অধিকারের সাথে মিছে গেছে। তিনি শোষণ, নিপীড়নের বিপক্ষে কথা বলতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, মানবেন্দ্র লারমা সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা আর পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজ ব্যবস্থা এক নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমাজের অধিকার আদায়ের কথা তিনি যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। ১৯৭০ সালে আন্দোলনে তিনি স্বাধীকার আন্দোলন তথা স্ব- শাসনের কথা বলেছেন। জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিলো বর্তমানে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, এম.এন লারমা চার দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। আজকে শান্তি চুক্তি সেই আন্দোলনের ফসল। চুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিন্তু দুঃখের ব্যপার, চুক্তির ১৮বছর হলেও আমরা আমাদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
তিনি ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়ে বলেন, জুম্ম জাতির কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি উদ্ধারে ব্যস্ত। স্বীয় জাতির আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে তারা কেন্দ্রীয সরকারের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আঁতাত করছে। তারা জাতির কলঙ্ক। তাদের হুঁশিয়ার করতে চাই। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে জুম্ম জনগণকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শাসনের নামে চলছে দুঃশাসন। দেশে যে অরাজকতা, দুর্নীতি চলছে আমরা তা মানতে পারি না। আজকে শাসক গোষ্ঠীর এক শ্রেণী চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, এম.এন লারমা পার্বত্য অঞ্চলকে যেভাবে দেখতে চেয়েছেন বর্তমান শাসন ব্যবস্থার সাথে তার কোন মিল নেই। সরকার ঔপনেশিক কায়দায় শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন।
এম.এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহবায়ক বিজয় কেতন চাকমার সভাপতিত্বে ,এম.এন লারমা স্মৃতি পাঠগারের সাধারণ সম্পাদক নান্টু ত্রিপুরা এবং জনসংহতি সমিতির যুব ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ত্রিজিনাথ চাকমার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায়, ২৯৯নং আসনের সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাধুবী লতা চাকমা, ফেনীর সোনা গাজী সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিপন চাকমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি শান্তিকে কেন্দ্র করে হয়নি। শান্তির অধিকার সবার আছে। এ জন্য চুক্তি করতে হয় না। এটিকে সরকার শান্তি চুক্তি বলছে। যে চুক্তি হয়েছে তার নাম পার্বত্য চুক্তি। এই চুক্তি হয়েছে স্ব শাসনের জন্য। কিন্তু সরকার খুব সাবধানতার সঙ্গে এগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
রাঙামাটি সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী ২০১৩ অনেক আগে সংসদে পাস হওয়ার কথা বললেও এই বিলটি এখনও সংসদে উত্থাপন করতে পারেনি। উষাতন বলেন প্রধানমন্ত্রীর উপরে প্রধানমন্ত্রী আছে। তাদের বিরোধিতার কারণে বিলটি সংসদে উত্থাপন হতে পারছে না।
উল্লেখ্য ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার মহাপুরম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর বিভেদপর্ন্থীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এমএন লারমার জন্মদিবস উপলক্ষে গতকাল দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন, রচনা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বক্তব্য শেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন