পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যশস্য কেলেংকারী তদন্তে দুদকের অনুসন্ধান

courruption-220x118

জমির উদ্দিন:

অনিয়ম দূর্নীতি, খাদ্যশস্য নয় ছয় করার অপরাধ তদন্তে দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল বান্দরবানে তদন্ত শেষে চট্রগ্রাম ফিরেছেন। গত সোমবার চট্রগ্রাম দূর্নীতি দমন কমিশন এর পরিচালক মেজর ইমরানের নেতৃত্বে একটি দল বান্দরবান সফরে এসে তদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিন পার্বত্য জেলায় বিশেষ বরাদ্দের খাদ্যশস্য কেলেংকারী ঘটনার তদন্তে মাঠে নেমেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে বান্দরবানের আর্থ-সামাজিক ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনের প্রস্তাবিত প্রকল্পের নামে ২০১২-১৩ অর্থ সালে বর্ষা ও শুস্ক মৌসুমে বিশেষ বরাদ্দের প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জেলা আ’লীগের এক নেতা কর্তৃক আত্মসাতের ঘটনাও তদন্ত করছে দূর্নীতি দমন কমিশন। অপরদিকে বাঙ্গামাটিস্থ কেপিএম’র ৮লাখ ৯১হাজার ৩৪২টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কর্মকর্তাসহ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রায় ৫’শ মে: টন খাদ্যশস্য আত্মসাতের প্রমান পেয়েছে দুদক। এসব খাদ্যশস্য আত্মসাতের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। এছাড়াও বান্দরবানে বিশেষ বরাদ্দের প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগ দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র নজরে এসেছে বলে সূত্রে জানায়। ইতিমধ্যে দুদকের একটি অনুসন্ধ্যান দল এসব খাদ্যশস্যের আত্মসাতের ঘটনার তদন্তে শুরু করেছে বলে জানান, দুদকের রাঙ্গামাটিস্থ জেলা শাখার কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে এসব খাদ্যশস্য আত্মসাতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এদিকে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাঙ্গামাটি শাখার উপসহকারী পরিচালক ও মামলার বাদী রিয়াজ উদ্দিন জানান, কেপিএম বাগান পাল্পউড’র ২লাখ ৮০হাজার ৪’শ ৭৫টাকার আত্মসাতের ঘটনায় সাবেক উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক (বর্তমান সিসি’র মাদবকুন্ড চট্টগ্রামের) অতিরিক্ত প্রকৌশলী ইদ্রিশ আজগর, কেপিএম’র সাবেক মহা ব্যবস্থাপক মানিক আলয় বড়ুয়া ও ঠিকারদার জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৪৭সনের দূর্নীতি দমন আইনের সেশন-৪০৯, ১০৯ ৫(২) ধারায় মামলা নং-১৭ ও মামলা নং-৩ কাপ্তাই থানায় ১৭আগস্ট দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়াও চন্দ্রঘোনার মের্সাস শারমিন এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে এবং মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের কেপিএম’র ২লাখ ৭৬হাজার ৮’শ ৯৪টাকা এবং ৩লাখ ৩৪হাজার ৯’শ ৭৩টাকার আত্মসাতের ঘটনায় ১৯৪৭সনের দূর্নীতি দমন আইনের সেশন-৪০৯, ১০৯ ৫(২) ধারায় কেপিএম’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক মানিক আলয় বড়–য়া ও ঠিকারদার জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরো ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ি উপজেলা খাদ্যশস্য আত্মসাতের বিষয়টি দুদকের তদন্ত শুরু করেছে। বান্দরবানসহ অন্যান্য এলাকার খাদ্যশস্য আত্মসাতের ঘটনাটি তদন্তপূর্বক মামলা করবে দুদক। এবিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাঙ্গামাটি শাখার পরিচালক শহিদুল্লা হক এ প্রতিবেদককে জানান, কেপিএম’র টাকার ঘটনায় এনিয়ে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যশস্য আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত করছে অনুসন্ধ্যান দল।

এদিকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত বান্দরবানের ৪হাজার টন খাদ্যশস্য লুটপাট ও আত্মসাতের অভিযোগে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও সহচর একেএম জাহাঙ্গীর বিরুদ্ধে গত ২২জুলাই বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিককে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদগুলো দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র নজরে আসলে দ্রুত অনুসন্ধান শুরু করে দুদক টিম। অনুসন্ধ্যানে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পার্বত্য শান্তিচুক্তির আইন অমান্য ও নিয়ম বর্হিভুতভাবে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে গোপনে তার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত বান্দরবান জেলা আ’লীগের সহসভাপতি কে.এম. জাহাঙ্গীর মাধ্যমে দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ-মহিলা) ও ইউপি চেয়ারম্যানদের এলাকায় আর্থ-সামাজিক ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনের প্রস্তাবিত প্রকল্পের নামে ২০১২-১৩অর্থ সালে বর্ষা ও শুস্ক মৌসুমে বিশেষ বরাদ্দের আওতায় কয়েক দফায় প্রায় ৪হাজার খাদ্যশষ্য বরাদ্দ দেয়।

এসুযোগ কাজে লাগিয়ে কে.এম. জাহাঙ্গীর পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে জনপ্রতিনিধিদের জিম্মি করে নামস্থ স্বল্প অর্থ দিয়ে ডিও লেটারে স্বাক্ষর নিয়ে খাদ্যশষ্যগুলো জেলা বাহিরের বিক্রি করে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যায় বলে অভিযোগ করেন খোদ উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা। তারা জানান, টাকা না পাওয়ায় গৃহিত প্রকল্পের একটি কাজও পুরোপরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এতে বান্দরবান জেলা পরিষদ, উপজেলা ও ইউপি পর্যায়ে গৃহিত অধিকাংশ উন্নয়ন কাজ ফাইল বন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৪হাজার টন খাদ্যশস্যের প্রায় ৯ কোটি টাকা পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ও কে.এম. জাহাঙ্গীর আত্মসাৎ করেছে। এদিকে অনুসন্ধানে খাদ্যশস্যগুলো গোপনে বিক্রি করার সত্যতাও পাওয়ায় যায়। খাদ্যশস্য ক্রয়কারী বান্দরবান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সামশুল আলমের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিমন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পকে কাজে লাগিয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবির চালিয়ে বান্দরবানের জনপ্রতিনিধিদের উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে কয়েক দফায় প্রায় ৪হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বরাদ্দ আনেন জাহাঙ্গীর। তিনি এসব খাদ্যশস্য থেকে ৬৫লাখ টাকায় ৪০০টন খাদ্যশস্য ক্রয় করেন বলে জানান। রুমা উপজেলা আ’লীগ নেতা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈবং মারমা অভিযোগ করেন, ২০১২-১৩অর্থ সালের তিনি প্রায় ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পার্বত্য মন্ত্রণালয় প্রাপ্ত ১০০টন খাদ্যশস্য জাহাঙ্গীর তাকে জিম্মি করে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে আত্মসাৎ করেছে। একই অভিযোগ জানান, থানছি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অলসেন ত্রিপুরা, থানছি রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা, বান্দরবান সদরের কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান সানুপ্র“ মারমাসহ একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানগণ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন