বাইশারীতে রোহিঙ্গাদের দিয়ে চলছে রোহিঙ্গা শুমারি

বাইশারী প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে রোহিঙ্গাদের দিয়ে চলছে রোহিঙ্গা শুমারির কাজ। এতে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশীরা রোহিঙ্গাদের তালিকায় আর রোহিঙ্গারা যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশীদের তালিকায়। এ অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।

স্থানীয়রা বলেছেন, এ গণনা হল ‘বিড়ালকে শুটকি পাহারা দেওয়ার’ মত ঘটনা। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, গণনাকারীরা মোটা অংকের উৎকোচও নিচ্ছে একাজে সহযোগীতা করার জন্য।

বাইশারী ইউনিয়নের বাসিন্দা ওসমান ফকির, বাংলা হেডম্যান জাকির হোসেন, জাকের আহমদ, ব্যবসায়ী রমজান আলমসহ অনেকে সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গা দিয়ে রোহিঙ্গা শুমারী এই মানে আর কতটুকু সচ্ছতা জবাবদিহিতা থাকতে পারে?

গত ৩১শে মে ও ১ লা জুন বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ১০টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ২ দিনের দায়সারা প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামান রোহিঙ্গা শুমারীর জন্য। গণনাকারীদের প্রশিক্ষক হিসাবে ও দুই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার রাশেদুর রহমান সে নিজেই এসব বিষয়ে অবগত নন বলে জানান অনেকেই। সেই নিজেই অদক্ষ বলে দাবি করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক গণনাকারী।

গত ৩ জুন থেকে শুরু হয় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাতে রোহিঙ্গা শুমারী। এই উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার রয়েছেন রাশেদুর রহমান। তিনি থাকেন অনেক গোপনে অপরিচিত কাউকে নিজের পরিচয় দিতে রাজী নন সে। সাংবাদিক নাম শুনলেতো আর কোন কথাই নেই। তিনি গণনাকারীদের বলে দিয়েছেন সাংবাদিক থেকে সাবধান থাকতে।

বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা মো. শফি, মো. আলী, তুফান আলী পাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, নাজের হোসাইন, নারিচবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. আমিন, শামশুল আলমসহ আরো অনেকে জানান, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন এবং অনেকবার ভোটও প্রয়োগ করেছেন। তাছাড়া তাদের বাব দাদা সকলেই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক।

তারা আরো বলেন, তাদের বাব দাদারা ব্রিটিশ আমল থেকে এদেশে বসবাস কলে আসলেও এখন রোহিঙ্গা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত। আর যারা প্রকৃত মায়ানমার দেশের নাগরিক তাকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশী হিসেবে। এ নিয়ে রীতিমত চলছে ঝগড়া বিবাদ। কিন্তু পার্শ্ববর্তী উপজেলায় বার্মার নাম শুনা মাত্রই খাতায় এন্ট্রি হলেও নাইক্ষ্যংছড়িতে চলছে এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মানছেনা সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুারোর নিয়ম কানুন।

তথ্য সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে যে ভাবে গণনা করা হয়েছে এবার তার ধারাবাহিকতা মাত্র। আগের বারের গণনাকারী জালাল আহমদ বলেছেন, সে সঠিক ভাবে রোহিঙ্গাদের তালিকা ভূক্ত করায় তাকে এবার নিয়োগ দেওয়া হয় নাই।

রোহিঙ্গা দিয়ে রোহিঙ্গা গণনার বিষয়ে জেলা পরিসংখ্যান কর্তকর্তার টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের তথ্য না দেওয়ার জন্য উপরের নির্দেশ রয়েছেন বলে তিনি জানান। সেই সাথে এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন ।

তিনি আরো বলেন, ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে গণনাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম কোম্পানী সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা রোহিঙ্গা শুমারী নয়। এটা হল বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা। তবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন