বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : শহরে ৭টি আশ্রয় কেন্দ্র: সহায়তার হাত বাড়িয়েছে সেনাবাহিনী

kk

স্টাফ রিপোর্টার:
টানা চারদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান-চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়কের বাজালিয়া,দৌরিয়ারহাট ও আমতলী এলাকা ও বালাঘাটার পুলুপাড়া বেইলি ব্রীজ তলিয়ে যাওয়ায় বুধবার সকাল থেকে বান্দরবান জেলা সদর সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গত ৪৮ ঘণ্টায় ২০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ফলে বুধবার সকাল থেকে সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে, টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম ও বান্দরবান-কক্সবাজার সড়কের বান্দরবান-কেরানির হাটের বেশির ভাগই প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজও।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল করছে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে। তবে বেইলি সেতু ডুবে যাওয়ায় নৌকানির্ভর হয়েই পারাপার হতে হচ্ছে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে।

জেলা শহরের অদুরে কালাঘাটা-রোয়াংছড়ি সীমানায় বানের পানিতে সেতু তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রোয়াংছড়ি উপজেলার সঙ্গে।

তকক

মাঝারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জেলায় ব্যাপক এলাকা বন্যায় তলিয়ে গেছে। গত সোমবার ভোর রাতেই তালিয়ে গেছে লামা উপজেলা সদরের নিচু এলাকার শত শত ঘরবাড়ি।

পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা ও পপ্রল বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। পবিত্র ইদুল ফিতরের আনন্দ ম্লান হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার রাতে পৌর শহরের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বুধবার সকাল থেকে নতুন করে আরো কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকার গৃহহারা পরিবারগুলো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে এসব কেন্দ্রে অন্তত ৩৮৭টি পরিবার অবস্থান করছে। অন্যদিকে উজানে প্রবল বৃষ্টির কারণে শঙ্খ ও মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়েছে।

বান্দরবান শহর এবং লামা উপজেলা সদরে ১২টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন ও পৌরকর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বান্দরবান শহরে ৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৩৮৭ পরিবারের ১২৪৭ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

এর মধ্যে আল ফারুক ইনস্টিটিউটে ২০০ পরিবারে ৭০০ সদস্য, শহর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৩ পরিবারের ৩০০ সদস্য, আলম ভিশন প্রাইমারী স্কুলে ২১ পরিবারের ৭৫ সদস্য, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৩ পরিবারের ১২৫ সদস্য, সড়ক ও জনপথ বিভাগে ১৫ পরিবারে ৭৫ সদস্য, মধ্যম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ পরিবারের ৯০ সদস্য আশ্রয় নিয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসন তাদের মধ্যে খাদ্য শস্য বিতরণ করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান সেনা রিজিয়ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত সদস্যদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে।

সেনাসূত্র জানিয়েছে, আশ্রয়প্রার্থিরা যতদিন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করবে সেনাবাহিনী তাদের এসব সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। সোনবাহিনী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানদের অসুবিধা বিবেচনা করে তাদের জন্য রান্না খাবার বিতরণের কথাও বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র (এসআরডিআই) গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার পর্যন্ত ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। গতকাল এর পরিমাণ ছিল ১০০ মিলিমিটার।

প্রবল বর্ষণজনিত কারণে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ মসজিদ ভিত্তিক অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

তবে জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, চালসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কাজ শুরু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন