ভূমি কমিশন আইন বাস্তবায়িত হলে পার্বত্যাঞ্চলের বাঙ্গালীরা রোহিঙ্গাদের মতো উদ্বাস্তু হবে

Bandarban pic-18.38.2016.

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন (সংশোধনী-১৬) আইন বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম নাগরিকের মতো উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর নেতারা। শুক্রবার সন্ধ্যায় বান্দরবান বাজারস্থ বেসরকারী একটি রেষ্টুরেন্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের অধিকার আদায়ের ৫টি সংগঠন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

পার্বত্য গণপরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব আইনজীবী পারভেজ তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইন কার্যকর হলে পার্বত্যাঞ্চলের বাঙ্গালীরা ভূমি হারাবে। বাড়বে সংঘাত, ঝড়বে রক্ত, হারাবে প্রাণ।

তিনিা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন জুম্মল্যান্ডে পরিণত হবে। ভূমি কমিশন সংশোধনী সর্ম্পকে বাঙ্গালীরা এখনো অন্ধকারে আছেন। জানলে আন্দোলন আরো বেগবান হতো। পার্বত্যাঞ্চলে বাঙ্গালীদের ভূমি রক্ষা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রক্তপাত, সংঘর্ষ বন্ধে কমিশন আইনের সংশোধনী-২০১৬ বাতিল করার দাবী জানান সংবাদ সম্মেলনে।

পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আব্দুল আওয়াল বলেন, জেএসএস সভাপতি জ্যোতিরেন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি। তিনি এখনো বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করেননি। তিনি কিভাবে বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদা সম্পন্ন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারকে ফাঁদে ফেলে জুম্মুল্যান্ড বাস্তবায়ন করতে ভূমি কমিশন আইন সংশোধনী ২০১৬ পাহাড় থেকে বাঙ্গালীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের প্রথম সফলতা পেয়েছেন সন্তু লারমা।

নেতৃবৃন্দ আরও জানান, ভূমি কমিশন সংশোধনী আইনের ধারা-৬ ক্ষমতাবলে পার্বত্যাঞ্চলের বাঙ্গালীদের বন্দোবস্তী বাতিল বা দখলকৃত ভূমি হতে উচ্ছেদ হতে হবে। এছাড়া ৬(গ) ধারা বলে সরকারী সংস্থা বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত ভূমি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প কারখানার ভূমি বন্দোবস্তি বাতিল করতে পারবে কমিশন। ১৬ ধারা মতে এ কমিশন আদেশ আদালতের মত কার্যকরী ও চূড়ান্ত। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপীলের কোনো সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠানে সর্বদলীয় পার্বত্য বাঙালী ঐক্যজোটের নামে বিতরণ করা লিফলেটে বলা হয়েছে, শুধু বাঙালী নয়, ভূমি কমিশন আইন-২০০১ এর ৬ ধারায় ‘প্রযোজ্য আইনের অধীনে অধিগ্রহণকৃত ভূমি এবং রক্ষিত(রিজার্ভ) বনাঞ্চল, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প
এলাকা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এই উপধারা প্রযোজ্য হবে না’ এর পরিবর্তে সংশোধনীতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত ভূমি এবং বসত বাড়িসহ জলেভাসা ভূমি, টিলা ও এলাকার ক্ষেত্রে এই উপধারা প্রযোজ্য হইবে না’ যুক্ত হওয়ার ফলে সার্কেল চিফ বা হেডম্যানদের সম্মতি ব্যতিত অধিগ্রহণকৃত বা বন্দোবস্তকৃত সকল জমি অবৈধ হয়ে পড়বে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০ ভাগ ভূমিতে অবস্থিত রিজার্ভ ফরেস্ট, সরকারী শিল্প কারখানা, সেনানিবাস, বিজিবি, পুলিশ ব্যারাক, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ভূমি অফিস, আদালতসহ সকল প্রকার সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি বন্দোবস্তি অবৈধ বলে প্রমাণিত হবে।

১১ ধারা মতে কমিশন নিজেদের খেয়াল খুশী মত বিচার করতে পারবে। ১৯ ধারা মতে কমিশনের আদেশ না মানলে জরিমানাসহ ১ মাসের জেল। ৫ সদস্যের মধ্য ৩জন পাহাড়ী। ভূমি কমিশনে বাঙ্গালীদের কোন প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। তাই বাঙ্গালীদের প্রতিনিধিতত্ব না থাকায় নিজেদের খেয়াল খুশী মত বিচার করে যা আদেশ দিবেন, তাই মানতে বাধ্য হবে বাঙ্গালীরা।

আর  পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন (সংশোধনী-১৬) আইন বাস্তবায়িত হলে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালীদের পরিণতি হবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মত। ভূমি থেকে উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্ব হারাবে পাহাড়ের বাঙ্গালীরা।

পার্বত্য নাগরিক পরিষদের জেলা শাখা সভাপতি আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাড. ইব্রাহিম মনির, পার্বত্য গণপরিষদের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আবু হেনা, জেলা পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম, সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক’সহ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন