মনিপুর বিষ্ফোরণে অভিযুক্ত ত্রিদেশীয় জঙ্গী নেটওয়ার্কের শীর্ষ হোতা আটক

fec-image

উত্তর-পূর্ব ভারতের মনিপুরে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। এনআইএর মধ্যে আটক ব্যক্তি বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তঃসীমান্ত জঙ্গী নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত যারা ভারতীয় বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারে একটি কুকি-চিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার করতে চায়।

ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চুরাচাঁদপুরের ফাইখোলুম জে মুনথা গ্রাম থেকে সেমিনলুন গাংটে(৫১) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। সে চুরাচাঁদপুরের ফাইখোলুম জে মুনথা গ্রামের পাওখোকাই গংটের ছেলে। মণিপুর পুলিশ জানিয়েছে, সে কোয়াকটা বোমা বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত।

গত ২১ জুন কোয়াকটায় সন্ধ্যা ৭ টার দিকে একটি এসইউভি বিস্ফোরণে তিন কিশোর আহত হয়। বিস্ফোরণে ব্রিজের একটি অংশ যেখানে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছিল সেটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিষ্ফোরণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হলে মামলাটির তদন্তভার এনআইএ’র কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তার স্ত্রী মাংশি সেমিনলুন দ্য হিন্দুকে বলেন, তার স্বামীকে ফুলজং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। “বর্তমান সহিংসতার আগে তিনি কোয়াক্তার একটি বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন। মে মাসে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর, তিনি চুরাচাঁদপুরের একটি গোডাউনে কাজ করছিলেন।

ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি তাদের ভেরিফাইড এক্স’র একটি পোস্টে দাবী করেছে, “সন্ত্রাসী অভিযুক্ত সেমিনলুন গ্যাংটে জাতিগত শোষণ করে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর জন্য মায়ানমার- এবং বাংলাদেশ-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্বের সাথে ষড়যন্ত্রে ভূমিকা রেখেছে।”

এনআইএর তদন্তে জানা গেছে, মায়ানমার এবং বাংলাদেশ ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ভারতের জঙ্গি নেতাদের একটি অংশের সাথে বিভিন্ন জাতিগত দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্যে সহিংসতার ঘটনায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। এর মাধ্যমে তারা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে তদন্তে বলা হয়েছে।

এই লক্ষ্যে, উল্লিখিত নেটওয়ার্ক অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য ধরণের সন্ত্রাসী হার্ডওয়্যার সংগ্রহের জন্য তহবিল সরবরাহ করছিল যা দিয়ে তারা সীমান্তের ওপার থেকে এবং সেইসাথে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে সক্রিয় অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির কাছ থেকে সংগ্রহ করা করছিল। এ সব অস্ত্রের মাধ্যমেই মণিপুরে বর্তমান জাতিগত দ্বন্দ্ব পরিচালিত হচ্ছে বলেও তদন্তে বলা হয়েছে।

তদন্তে আরো বলা হয়েছে, এই নেটওয়ার্ক কুকি-চিন-মিজো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত যা মায়ানমার ও বাংলাদেশে অবস্থিত অন্যান্য চিন-কুকি মিজো জঙ্গিদের সাথে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য ভারত, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন করে স্বতন্ত্র কুকি-চিন-মিজো উপজাতি অধ্যুষিত একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর উদ্দেশ্য সংগঠিত হয়েছে।

সংস্থাটির অভিযোগ, মিয়ানমার-ভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতারা এবং নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রতিপক্ষ জাতিগোষ্ঠীর উপর হামলা চালানোর জন্য তাদের শক্তি বাড়ানোর জন্য স্থল কর্মী, ক্যাডার এবং সহানুভূতিশীলদের নিয়োগ করছে।

উল্লিখিত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পর নয়াদিল্লিতে আনা হয়েছে এবং বিচার বিভাগীয় আদালতে হাজির করা হবে, এটি আরও জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, মামলার আরও তদন্ত চলছে।

স্মর্তব্য যে, এনআইএ এর আগে মনিপুরের বর্তমান জাতিগত অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর জন্য “সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির মায়ানমার ভিত্তিক নেতৃত্ব” দ্বারা একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত একটি মামলায় মোইরাংথেম আনন্দ সিং নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল।

উল্লেখ, ভারত আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, মনিপুরে মেইতেই-কুকি সহিংসতায় ভারতীয় সংহিসতাকারীদের সাথে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের অন্যান্য প্রদেশের কুকি-চিন-মিজো জনগোষ্ঠী একজোট হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন