তারাবনিয়ার ছরা জামে মসজিদ কমিটির সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

মসজিদ কমিটিতে ঢুকে অর্থ লুট করতে চায় ইয়াবা কারবারিচক্র!

fec-image

কক্সবাজার শহরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী তারাবনিয়ার ছরা জামে মসজিদের কমিটিতে ঢুকে অর্থ-সম্পদ লুটে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে জেলফেরত ইয়াবা কারবারিসহ চিহ্নিত একটি দখলবাজচক্র।

তারা ইতোমধ্যে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ নানা ধরণের অপপ্রচার, প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে। পত্রপত্রিকায় বানোয়াট বিজ্ঞপ্তি ছেপেছে। যাদের হাত ধরে মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে; এলাকায় মুসল্লির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে উদ্ভট বক্তব্য প্রচার করছে।
অপপ্রচারকারী কারা, তাদের চরিত্র সবার কাছে স্পষ্ট। তাদের দ্বারা এযাবতকালে এলাকা কিংবা মসজিদের উন্নয়নের কোন রেকর্ড নেই। আল্লাহর দুশমনেরাই আল্লাহর ঘর মসজিদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে।

শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে শহীদ তিতুমীর প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য দেন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মতোয়াল্লি মাস্টার মুহাম্মদ শফিকুল হক।

তিনি বলেন, মসজিদের অধীনে ১২৬টি দোকান রয়েছে। যার আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত অর্থ কমিটির নিকট সংরক্ষিত। তাতে অন্য কারো খবরদারি কিংবা অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেই। যার কাজ তার দ্বারাই পরিচালিত হয়। গঠনতন্ত্রের বাইরে কেউ যাই না।

মসজিদ কমিটি গঠন ও বৈধতার ইতিহাস উপস্থাপন করে মাস্টার মুহাম্মদ শফিকুল হক বলেন, তারাবনিয়ার ছরা মসজিদ কমিটি ৩২ বছর আগে তদানিন্তন কমিটি কর্তৃক রচিত ও অনুমোদিত সংবিধান মতে পরিচালিত। তখনকার সভাপতি মরহুম বদিউল আলম মাস্টা, (সাবেক পৌর কাউন্সিলর) উল্লেখিত সংবিধানটি রচনা করেন। অতপর মসজিদ কমিটির পাঁচ জন সদস্য তা যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় সংযোজন বিয়োজন করেন।

সংবিধানটি সাবেক মতোয়াল্লি মরহুম মনির আহমদের সভাপতিত্বে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। সংবিধানে ৬০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাধারণ কমিটি রয়েছে। প্রতি তিন বছর অন্তর সাধারণ কমিটির সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়। নির্বাহী কমিটির মেয়াদ অন্তপরবর্তী নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে একজন আহ্বায়ক ও দুই জন সদস্য থাকেন। এলাকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোটার ভিত্তিতে সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হয়। পদাধিকার বলে সভাপতিই মতোয়াল্লির দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সংবিধানের ভিত্তিতে প্রথম নির্বাচনে মরহুম মাস্টার বদিউল আলম সভাপতি ও মরহুম মমতাজ আহমদ মাস্টার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একই ধারাবাহিকতায় পরবর্তিতে নুরুল হক কন্ট্রাক্টর, মরহুম আবদুর রসিদ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও মুহাম্মদ শফিকুল হক মাষ্টার একাধিকবার সভাপতি নির্বাচিত হন এবং অদ্যাবধি মাষ্টার মুহাম্মদ শফিকুল হক সভাপতি পদে বহাল আছেন।

এছাড়া খণ্ডকালীন সময়ের জন্য মরহুম মো. মোসলেম, মো. ওমর মিয়া পেশকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে মরহুম আবুল হোসেন, মরহুম ইঞ্জিনিয়ার শফিউল্লাহ, মরহুম মো, শাহজাহান মাস্টার ও মরহুম ছুরত আলম দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আতিকুর রহমান (জেলা প্রশাসনের সাবেক কর্মচারী) একই পদে বহাল আছেন।

২০১৭ সালে মরহুম ছুরত আলম, আহ্বায়ক থাকাকালিন মাস্টার মুহাম্মদ শফিকুল হক সভাপতি ও আ.ম.ম হারুনুর রশিদ সাধারণ সম্পাদকের প্যানেল ও হাবিবুল্লাহ সভাপতি, আবদুল করিম সওদাগর সাধারণ সম্পাদক প্যানেলের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুহাম্মদ শফিকুল হক ও আ.ম.ম হারুন অর রশিদ প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হন। সুষ্টুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরও আবদুল করিম সওদাগর নির্বাচন বাতিল চেয়ে মাননীয় দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উপরোল্লিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় আবদুল করিম সওদাগর এর মামলাটি খারিজ করেন এবং নির্বাচিত কমিটিকে বহাল রাখেন আদালত।

বাস্তব সত্য হলো, মসজিদের অঢেল সম্পদ ও অর্থে লুলোপ দৃষ্টি পড়েছে কিছু কুচক্রি মহলের। তারা জোট বেধে মসজিদের কমিটি দখল করতে চায়। সেই পরিকল্পনা মতে বর্তমান কমিটিকে বিতর্কিত করতে নানামুখি ষড়যন্ত্র আঁকছে। সভা, সমাবেশ ডেকে বানোয়াট বক্তব্য দিয়েছে। অপপ্রচার চালাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল হক বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষ সব জানে ও বোঝে। ভুল তথ্যে কাউকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। মসজিদের সম্পদ ও অর্থে হাত দেয়া মানে আগুন স্পর্শ করা।

বর্তমান কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিন সদস্য বিশিষ্ট অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক কমিটি গঠিত হয়। আহ্বায়ক সুরত আলম অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করলে সাধারণ সভায় আতিকুর রহমানকে আহ্বায়ক, মফিজুর রহমান কোম্পানি ও লিয়াকত আলীকে সদস্য করে তত্ত্বাবধায়ক কমিটি গঠিত হয়।

তারা নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করলে আব্দুল খালেকসহ কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তি মসজিদের সদস্য হতে চাপ সৃষ্টি করেন। অথচ সংবিধান মতে কোন সদস্য বৃদ্ধির ক্ষমতা তত্তবাবধায়ক কমিটির নাই। এছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার কামাল কয়েক মাস পূর্বে জুমার নামাজে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মসজিদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করে। একজন মুসলমান হিসেবে যা মোটেও শোভনীয় নয়।

মসজিদ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সৈয়দের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম, আব্দুল মালেক, শামসুল আলম, জানে আলম, নজির আহমদ, নুরুল আলম, মোহাম্মদ ইসমাঈল, রাশেদুল হক রাসেল, মোহাম্মদ হাসান, মোহাম্মদ ফেরদাউস, আবুবকর ছিদ্দিক, মাহমুদুর রহমান ও মতিউর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, মসজিদ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন