মনিটরিংয়ের দাবি ভুক্তভোগীদের

মাংস বিক্রিতে মানছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা

fec-image

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া বাজারে মাংস বিক্রেতা মামতাজ’র কাছে গরুর মাংস কেজি কত জিজ্ঞেস করলে বলেন ৮০০ টাকা। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত দাম ৭৫০ টাকা। জানতে চাওয়া হয় বৈধতা নিশ্চিতে মাংসের গায়ে পৌরসভার সীল নাই কেন? তিনি বলেন, মাংসের গায়ে আগে সীল দেওয়া হলেও গত ১০-১৫ দিন যাবত দেওয়া হচ্ছেনা। গরুটি কোথায় জবাই করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন শহরের বাসটার্মিনালস্থ উপজেলা বাজারে।

যদিও শহরের বড় বাজার মাছ বাজারের পিছনে পৌরসভার নির্ধারিত জবাইখানায় পশু জবাইয়ের নির্দেশ রয়েছে। ওখানেই পৌরসভার দায়িত্বরত হুজুর পশু জাবাই শেষে বৈধতা নিশ্চিত করে মাংসের গায়ে সীল লাগিয়ে দেয়। পশুটি জবাইয়ের আগে চিকিৎসক দিয়ে পরিক্ষা করা হয়েছে কিনা তাও তিনি জানেননা।

একই বাজারের আরেক মাংস বিক্রেতা কালু সওদাগর জানান, তারা বিক্রিত পশুর মাংসের গায়ে পৌরসভার সীল দেয়না, নির্ধারিত জবাইখানায় পশুও জবাই করেনা এবং পশু জবাইয়ের আগে চিকিৎক দিয়ে পরিক্ষা করিয়ে নিতে হয় কিনা তা জানেনা। তারা এসব পশু জবাই করে আনে অন্য জায়গা থেকে।

তিনি আরো জানান, পৌরসভার এই নিময় মানতে গেলে পৌরকর বা চাঁদা দিতে হয়। পৌরকর না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নিয়মের বাহিরে পশু জবাই ও বিক্রি কতটা বৈধ? এতে ক্রেতা ঠকছে কিনা জানতে চাইলে ওনার কাছে এর কোন উত্তর নেই।

বড়বাজারের মাংসের দোকানে গিয়েও দেখা যায় নানা অনিয়ম। মাংসের গায়ে পৌরসভার সিল থাকলেও দামে রয়েছে পার্থক্য। বাজারে নেই মাংস বিক্রির মূল্য তালিকা।

বড় বাজারের মাংস বিক্রেতা জাফর আলম জানান, মাংস বিক্রিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্ধারিত দামে তারা পুষিয়ে উঠতে পারছেনা। এর পরেও ওই নির্ধারিত দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। মূল্য তালিকা কেন টাঙানো নেই এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আগে ছিল এখন ভুলে দেওয়া হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে টাঙ্গানো হবে।

শহরের বাহারছাড়া বাজার, বড় বাজার ও উপজেলা বাজারসহ বেশ কয়েকটি মাংসের দোকান ঘুরে এসব অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। গরুর মাংস কেজিতে সাড়ে ৭’শ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৮’শ থেকে ৯’শ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কৌশলে মাংসে চর্বি, হাড় আর ফ্রিজের মাংস দিয়ে ঠকানো হচ্ছে। ওজনেও কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জবাইকৃত পশুর মাংসের গায়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সীল দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানছেনা অনেক ব্যবসায়ী। বাজারে টাঙ্গানো নেই মাংস বিক্রির মূল্য তালিকা। নির্ধারিত জায়গায় হচ্ছেনা পশু জবাই। এছাড়া চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে পশু জবাই করা হচ্ছেনা।

কক্সবাজার প্রেসক্লাব সংলগ্ন রেস্তুরার মালিক জানান, বাহারছড়া বাজার থেকে হাড়ছাড়া গরুর মাংস কিনেছে ৯০০ টাকায়। একদিকে মাংসের দাম ছিল বেশি তার মধ্যে চর্বিযুক্ত মাংস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাংসের মানও ছিল খারাপ।

শহরের টেকপাড়ার আব্দুর রহমান নামে এক যুবক জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বৈধতা নিশ্চিত না হলে মাংসের মান নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসক দিয়ে পশু পরিক্ষা করে জবাই এবং পৌরসভার সীল বাধ্যতামূলক করা দরকার।

বাহারছড়ার রোকসানা আক্তার জানান, বাজারে মাংস কিনতে গিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়না ভাল মাংস পাব কিনা। কারণ বিক্রেতারা কৌশলে চর্বি, হাড় আর ফ্রিজের মাংস ডুকিয়ে দেয়। এছাড়া ওজনেও অনেক সময় কম থাকে। এসব মনিটরিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

এদিকে শহরের বড়বাজারে পৌরসভার নির্ধারিত জবাই খানার দায়িত্বে থাকা হুজুর রেজাউল করিম জানান, তিনি দীর্ঘ ১১ বছর যাবত পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত পশু জবাইকারী। নিয়ম অনুযায়ী পৌরসভার নির্ধারিত স্থান মাছবাজারের পিছনে জবাইখানায় পশু জবাই করতে হবে। জবাই শেষে মাংসের গায়ে পৌরসভার সীল দেওয়া হয়। আর এই সীলের মাধ্যমে ওই মাংস বিক্রির বৈধতা পায়।

বাহারছড়ার মাংসের বাজারে পৌরসভার সীল নাই কেন জানতে চাইলে বলেন, আগে বাহারছড়ার ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে চললেও কিছুদিন ধরে তারা নির্ধারিত জবাইখানায় গরু জবাই করেনা। যার ফলে তাদের পশুর মাংসে সীলও পড়েনা। এতে করে পশুর মাংস নিয়ে অনিশ্চিয়তা থেকেই যায়।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সারোয়ার সালাম জানান, পৌরসভার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই ও বিক্রি করতে হবে। কেউ চাইলে নিজের মত করে পশু জবাই বা বিক্রি করতে পারবেনা। সকল ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং এর মাধ্যমে সিন্ধান্ত হয়েছে মাংস বিক্রেতারা ইউনিফম বা নির্ধারীত ড্রেস পরিধান করে ব্যবসা করবে। এতে করে ক্রেতাদের বুঝতে সুবিধা হয়।

তিনি জানান, মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা। খাসির মাংস ধরা হয়েছে ১০০০ টাকা। পশু অবশ্যই জবাইখানায় জবাই করতে হবে এবং মাংসের গায়ে পৌরসভার সীল থাকতে হবে। মূল তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশনা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব মনিটরিং করা হবে। নিরাপদ মাংস নিশ্চিত করণে প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, বিক্রি, মাস
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন