মাটিরাঙ্গার ২৪টি গুচ্ছগ্রামে নববর্ষের ছোঁয়া লাগেনি, নেই উৎসবের আমেজ

11147991_806765676084388_988989815_o

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
ত্রিপুরা-চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম সামাজিক উৎসব বৈসাবীকে ঘিরে পুরো খাগড়াছড়ি জেলা যখন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। চারদিকে হৈ-হৈ কাণ্ড আর রৈ-রৈ ব্যাপার তখন পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার ২৪টি অ-উপজাতিয় গুচ্ছগ্রামে চলছে হা-হা-কা-র। বাংলা নববর্ষের ছোঁয়া লাগেনি এসব গ্রচ্ছগ্রামে বসবারত পরিবারগুলোতে। উৎসবের আমেজও দেখা যায়নি কোথাও। সর্বত্র শুধু অভাব আর অভাব।

পুরাতনকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণে এখানকার শীর্ষ জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তি থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা যখন আনন্দ-উৎসবে ব্যস্ত সময় পার করছে ঠিক তখন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে অ-উপজাতিয় গ্রচ্ছগ্রাম গুলোতে। বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে ঘুরে দেখা গেছে নববর্ষের প্রথম দিনে অনেকেরই চুলোয় আগুন জ্বলে নি। পান্তা ইলিশ তো দূরের কথা গরম ভাতও জোটেনি অনেকের ভাগ্যে। তাদের কাছে নববর্ষ যেন প্রতিদিনের মতোই একটি দিন। গুচ্ছগ্রামগুলোতে অভাবের ক্ষত চিহ্ন যেন সবকিছুকে ম্লান করে দিচ্ছে।

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় কতিপয় সুবিধাবাদী মহলের হটকারী সিদ্ধান্তের মাশুল দিচ্ছে মাটিরাঙ্গায় ২৪টি অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত ৯ হাজার ২শ’ ৬২টি কার্ডধারী পরিবার। মহলটির হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে বাংলা নববর্ষের ছোঁয়া লাগেনি এসব গ্রচ্ছগ্রামে বসবারত পরিবারগুলোতে। এনিয়ে ইতিমধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কার্ডধারী পরিবারগুলোতে।

গ্রচ্ছগ্রামবাসীদের অনেকেই শ্রমজীবী। একদিকে দীর্ঘদিন গুচ্ছগ্রামের রেশন বন্ধ থাকায় পরিবারগুলোতে চলছে অভাব-অনটন। অন্যের জমিতে শ্রম দিতে না পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বৈসাবী উৎসবের জন্য কোটি টাকা ব্যয় করলেও মাটিরাঙ্গার ২৪টি অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত ৯ হাজার ২শ’ ৬২টি কার্ডধারী তাদের ন্যায্য পাওনাটুকু থেকেও বঞ্চিত রয়েছে। তাদের কাছে আনন্দ ছিল শুধুই চোখের জল। গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ডধারীরা মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদেরকে দেখার যেন কেউ নেই।

11131902_804635159630773_318877163_o

‘মাটিরাঙ্গা রেশন আদায় সংগ্রাম পরিষদ’ আহবায়ক মো: হাফেজ পাটোয়ারী বলেন, রেশনের দাবীতে একাধিকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একাধিক স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। গুচ্ছগ্রামের হাজার হাজার কার্ডধারী অনাহারে- অর্ধাহারে জীবন যাপন করলেও অন্যরা ঠিকই বৈসাবীর আনন্দে মাতোয়ারা। যেখানেই গেছি সেখানেই আমাদেরকে শুধু আশ্বাসের বাণী শোনানো হচ্ছে।

মাটিরাঙ্গার আলুটিলা গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ডধারী মো: আবদুল ওহাব বলেন, আমাদের আবার কিসের নববর্ষ। নববর্ষ তো পালন করছে গরিবের টাকায় যারা দালান বানিয়েছে তারা। রেশন না পেয়ে আমরা স্ত্রী-পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি’ এমন ক্ষোভের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন অভাবের সাথে লড়াই করে কোন রকমে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের অভাবের কথা জানিয়ে মাটিরাঙ্গার ধলিয়া গুচ্ছগ্রামের মো: বাবুল মিয়া বলেন, সুবিধাবাদিদের কারণে কষ্ট করছে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। নিয়ম মেনে গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হলেও অতিলোভী এসব নেতাদের হটকারী সিদ্ধান্তের মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ির অন্যান্য উপজেলায় রেশন বিতরণ করা হলেও মাটিরাঙ্গায় গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট থাকায় এবং হাইকোর্ট থেকে রেশন বিতরণে স্থগিতাদেশ থাকায় জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার ২৪টি গ্রচ্ছগ্রামে রেশন বিতরণ স্থগিত রয়েছে। আর এর ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ২৪টি অ-উপজাতিয় গুচ্ছগ্রামের ৯ হাজার ২শ’ ৬২টি কার্ডধারী পরিবার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন