মার্কিন ভাষা বিজ্ঞানীর তথ্য প্রকাশ: বান্দরবানে রেংমিটচা ভাষার আবিষ্কার

10928576_808915932512259_1410162350_n 

স্টাফ রিপোর্টার :

বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের হারিয়ে যাওয়া রেংমিটচা ভাষার মানুষের সন্ধান খুঁজে পেয়েছেন ডেবিড এ. পিটারসন নামের এক মার্কিন ভাষা বিজ্ঞানী।

দীর্ঘ ১০ বছর অনুসন্ধান চালিয়ে রেংমিটচা ভাষায় কথা বলেন এমন প্রথমে ৫ জন পরে আরো ২০জন কে খুঁজে বের করেছেন ডেবিড পিটারসন। এরা নিজেদেরকে ‘ম্রো’ জাতি হিসেবে পরিচয় দিলেও তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন রেংমিটচা ভাষায়।

রবিবার সকালে বান্দরবান প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেবিড পিটারসন এ তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে রেংমিটচা ভাষাভাষি ২ জন পুরুষ ও ২ জন নারীকে সাংবাদিকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তার এ গবেষণা কাজে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন।

ডেবিড পিটারসন জানান, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দুর্গম তৈনফা মৌজায় এই ভাষায় কথা বলেন এমন ৬৫ জনের তথ্য তিনি পেয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত ৩০জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

১৯৬০ সালে জার্মান নাগরিক মি. লোফলার কর্তৃক প্রকাশিত রেংমিটচা ভাষার উপর জার্মান ভাষায় একটি জার্নাল নিবন্ধন প্রকাশ করেন। রেংমিটচা ভাষা সম্পর্কীত তথ্য পেয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় এই ভাষাভাষি মানুষ অনুসন্ধান এবং রেংমিটচা ভাষার উপর গবেষণা শুরু করেন ডেবিড পিটারসন। অবশেষে ১৬ বছরের পরিশ্রমে তিনি রেংমিটচা ভাষাভাষি ৩০ জনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রেকর্ড করতে সক্ষম হন।

তিনি জানান, প্রথম দিকে রেংমিটচা ভাষাভাষিদের ‘খুমি’ জাতি বলে মনে করা হলেও শেষ পর্যন্ত জানা গেলো ভিন্ন ভাষায় কথা বললেও প্রকৃত অর্থে তারা ‘ম্রো’ জাতিরই অন্তর্ভুক্ত। ইতিমধ্যে তিনি রেংমিটচা ভাষার একটি অস্থায়ী বর্ণমালার ফর্ম তৈরি করেছেন। তবে রেংমিটচা ভাষার বর্ণমালা কোন ধরণের হবে তার দায়িত্ব রেংমিটচা ভাষাভাষিদের উপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ। ‘ম্রো’ জনগোষ্ঠি বর্তমানে ‘ক্রামা’ বর্ণমালা ব্যবহার করছেন। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই রেংমিটচা বর্ণমালা নিয়ে ‘ম্রো’ জনগোষ্ঠির সাথে যেন কোন বিতর্ক তৈরি না হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আলীকদম উপজেলার তৈনফা মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) রেং পুং ম্রো বলেন, তিনি ‘ম্রো’ জাতির একজন সদস্য হলেও তার ভাষা ম্রো নয়। তার আদি ভাষা রেংমিটচা। কালের পরিবর্তনে পরিবার পরিজনদের সাথে তিনি ম্রো ভাষায় কথা বলেন।

রেং পুং ম্রো জানান, শত শত বছর আগে ম্রোরা রেংমিটচা ভাষায় কথা বলতেন। কালের পরিক্রমায় এই ভাষা ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হতে থাকে। এরপরও তৈনফা এলাকার ম্রো জনগোষ্ঠির বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও রক্ষা করে চলেছেন নিজেদের রেংমিটচা ভাষা।

তিনি জানান, বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় অনুসন্ধান চালালে রেংমিটচা ভাষাভাষি আরো মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে।

ডেবিড পিটারসনের কাজে সহায়তাকারী ও বর্তমানে ইউএনডিপি কর্মকর্তা লেলুং খুমি জানান, ২০১০ সালে তিনি তৈনফা মৌজা হেডম্যান রেং পুং ম্রোসহ অনেকের সাথে আলাপ করে দেখেছেন, তারা যে ভাষায় কথা বলেন, তার সাথে ম্রো কিংবা খুমি ভাষার কোন মিল নেই।

তিনি অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে জানান, পঞ্চাশোর্ধ বয়সীরাই কেবলমাত্র রেংমিটচা ভাষা জানেন। নিজ ভাষায় কথা বলা থেকে সরতে সরতে এর পরের দু-প্রজন্ম এখন আর নিজ মাতৃভাষা জানেন না। তারা সবাই ম্রো ভাষায় কথা বলেন।

১৯৮৩ সালে মেনলে ম্রো প্রবর্তন করেন ক্রামা ধর্ম। ধর্ম প্রচারের জন্যে একই সাথে তিনি উদ্ভাবন করেন নিজস্ব বর্ণমালা। ‘ম্রো’ জাতির বিপুল অংশ ক্রামা ধর্মে দীক্ষা লাভ করেন। কেবল ক্রামা ধর্মাবলম্বীরাই নয়, ম্রো ভাষা ব্যবহারকারীদের সবাই ভাষা প্রকাশের বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন ক্রামা বর্ণমালা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন