রাঙামাটিতে আরাকান আর্মির আটক নেতা রেনিন সোয়েকে ৫দিনের রিমান্ড

125624

স্টাফ রিপোর্টার:

বহুল আলোচিত আরাকান আর্মির আটক নেতা ডা. রেনিন সোয়েকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত সাড়ে ৩টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে রাঙামাটির রাজস্থলীর উপজেলা ইসলামপুর আদর্শ নতুন পাড়ার একটি নির্মাণাধীন মসজিদ থেকে তাকে আটক করা হয়।

আটকের পর বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ আরাকন আর্মির নেতা ডা. রেনিন সোয়েকে আদালতে হাজির করে তার বিরুদ্ধে ১০দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। তবে রাঙামাটি জজ আদালতের অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সাবরিনা আলী’র শুনানী শেষে ৫দিনে রিমান্ড আদেশ প্রদান করেন। রাঙামাটি আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মোমিনুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাস দমন আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে দশদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানী শেষে আদালত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

rennin

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার থানার ওসি ওয়াহিদ উল্লাহ সরকার জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাত প্রায় সাড়ে তিন টায় দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বর্ডার গাড বাংলাদেশ বিজিবির মেজর শাব্বির আহমেদ, মেজর কামাল পাশা ও রাজস্থলী থানার পুলিশসহ যৌথ অভিযান চালিয়ে ইসলামপুরের একটি নির্মানাধীন মসজিদ আত্মগোপন করে থাকা অভিযুক্ত মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মীর নেতা রেনিন সুয়ে মারমাকে আটক করা হয়েছে। এসময় তল্লাশী চালিয়ে তার কাছ থেকে ৫০টি ৫০০ টাকার নোটের ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের পার্সপোট, একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার,  ২টি মোবাইল সেট, তিনটি ক্রেডিট কার্ড আর একটি ব্যাগে ব্যবহৃত পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।

ডা. রেনিন সোয়ে মারমা রাজস্থলী থানায় পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলার এজহারভুক্ত আসামী।

রাজস্থলী থানা সুত্রে জানা যায়, রেনিনসু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রাজস্থলীর গাইন্দ্যা ইউনিয়ন থেকে নাগরিক সনদ ও জন্ম সনদ নিয়েছেন বলে জানান।  আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে রাজস্থলীস্থ তার বিলাসবহুল বাড়িটি চিহ্নিত হওয়ার পর সেখান থেকে অভিযান পরিচালনার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে রেনিন সোয়ে সটকে পড়েছিলেন। এরপর তিনি প্রথমে মায়ানমার ও পরে ভারতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ভারতের দিল্লীতে তিনি থাকতেন এবং সেখান থেকে তিনি তার বাহিনীর কর্মকান্ড পরিচালনা করেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন।

রেনিন সোয়ে 1

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট বান্দরবানের থানচির তিন্দু ও আন্দারমানিক এলাকায় আরাকান আর্মির জন্য ক্রয়কৃত দুই দফায় ১৩টি ঘোড়া আটক করে বিজিবি। এ ঘটনার জের ধরে ২৭ আগস্ট সকালে বড় মদকের দোলিয়ান পাড়া বিজিবি ক্যাম্পে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি (এ, এ) সদস্যরা হামলা চালায়। এতে জাকির হোসেন ও আহম্মদ গনি আহত হন। বিজিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলি এবং মর্টারশেল ছোঁড়েন। বিমান বাহিনীর ৫টি হেলিকপ্টার ও জঙ্গী বিমান এ হামলায় ব্যবহৃত হয়। পরে সেনাবাহিনী ও বিজিবির তীব্র প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে।

এ ঘটনার পর আলোচনায় আসেন ডা. রেনিন সোয়ে। জানা যায়, রেনিন সোয়ে আরাকান আর্মির জন্য এই ঘোড়াগুলো ক্রয় করে বান্দরবানে পাঠিয়েছিলেন। একই দিন অর্থাৎ ২৭ আগস্ট গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল রাজস্থলীর কলেজ পাড়া এলাকার স্থানীয় রেনিন সোয়ের বাসায় অভিযান চালায়। এসময় তাকে আটক করা না গেলেও মিয়ানমারের নাগরিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগী অং ইউ ইয়াং রাখাইনকে আটক করে সেনাবাহিনীর দলটি। বাড়ীতে তল্লাশী চালিয়ে তিনটি আরাকান আর্মির পোশাক, পোশাক তৈরির ৩০ গজ কাপড়, তিনটি ল্যাপটপ, মোডেম, দুইটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি হেন্ডিক্যাম, দুইটি ঘোড়া, তিনটি মটরসাইকেল, মোবাইল ও পার্সপোট পাওয়া যায়।

ঐ দিন ডা রেনিন সোয়েসহ তার সহযোগি ও কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে রাজস্থলী থানায় সন্ত্রাস দমন আইন ও অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ঐ দুই মামলার পলাতক আসামী ছিলেন ডা. রেনিন সোয়ে। দীর্ঘ দেড় মাস পলাতক থাকার পর মঙ্গলবার ভোর রাতে পুলিশ ও বিজিরি হাতে রাজস্থলীতে আটক হন তিনি।

গত ১ দশক ধরে বাংলাদেশের রাজস্থলীতে নিজস্ব সৌরম্য বাড়ি নির্মাণ করে তাইতং পাড়ার এক মারমা তরুণীকে বিয়ে করে বসবাস করে আসছিলেন এবং সেখান থেকে আরাকান আর্মীর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন