প্রতিদিন লোকসান কয়েকশো কোটি টাকা

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভরা মৌসুমেও পর্যটক শুন্য পার্বত্যাঞ্চল ও কক্সবাজার

fec-image

হরতাল অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভরা মৌসুমেও পর্যটন খাতে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও পার্বত্যাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই পর্যটক নেই । এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা। জীবিকার সংকটে পড়েছেন বহু মানুষ। সেই সঙ্গে স্থানীয় অর্থনীতিতেও লেগেছে মন্দার ভাব।

গত ১৫ দিনের হরতাল ও অবরোধে পর্যটন এলাকা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির সাজেকে চলছে সুনসান নীরবতা। পর্যটন ঘিরে এখানে গড়ে ওঠা প্রায় ৩০০ হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টে চলছে পর্যটক খরা। তেমনি পর্যটক বহনকারী শতাধিক গাড়ির চাকাও প্রায় অচল। ফলে হোটেল-মোটেল ও গাড়ির পাঁচ সহস্রাধিক শ্রমিক, দোকান কর্মচারীর অলস সময় কাটছে।

হোটেল, মোটেল সূত্রে জানা গেছে, হরতাল ও অবরোধে পর্যটক শূন্যের কোটায় ঠেকেছে। ফলে খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখন অনেকটা জনমানবহীন।

অন্যদিকে রাঙামাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র সাজেক। এই দুই জেলায় প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। মাত্র ১৫ দিন আগেও যেখানে অগ্রিম বুকিং ছাড়া রাত কাটানো ছিল দায়। আর এখন অনেক কক্ষ খালি পড়ে আছে। ফলে হোটেল-মোটেলের কর্মচারী ও যানবাহন শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে মালিক পক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সাজেক নীল পাহাড়ি রিসোর্টের মার্কেটিং ও বুকিং ম্যানেজার মো. রাসেল জানান, রিসোর্টের ছয়টি কক্ষে ২৪ জন থাকতে পারেন। গতকাল সোমবার মাত্র দুটি কক্ষে আটজন ছিলেন।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া বলেন, বন্ধের দিনগুলোতে আগের চেয়ে কমেছে পর্যটক। এদিকে সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সহসভাপতি চাইথোয়াই অং চৌধুরী জয় বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাজেকের রুম বুকিং ৭০ শতাংশ কমে গেছে।

সরেজমিন সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটক শূন্য কক্সবাজার সৈকত। চারদিকে নীরবতা। ব্যস্ততা নেই সৈকতের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক-ওয়াটার বাইক চালক ও ঘোড়াওয়ালাদের। একই সঙ্গে বালিয়াড়িতে খালি পড়ে আছে কিটকটগুলো। সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। নভেম্বর-ডিসেম্বরে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে সাগর সৈকত। কিন্তু পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার সৈকত। এতে বিপাকে পড়েছে সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, ঘোড়াওয়ালা ও কিটকট ব্যবসায়ীরা।

সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার ইব্রাহীম বলেন, এবার পর্যটন মৌসুমে ভাল ব্যবসা হবে আশা করেছিলাম । কিন্তু এখন দেখি ভরা মৌসুমেও পর্যটক শূন্য। গেলো ৫ দিন সৈকতে আসছি আর যাচ্ছি কোন আয় হচ্ছে না। কারণ হরতাল ও অবরোধের কারণে সৈকত এখন পর্যটক শূন্য।

বিচ চালক রহিম উল্লাহ বলেন, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় হামুন, বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধের কারণে গেলো এক সপ্তাহ ধরে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার সৈকত। যার কারণে বিচ বাইক নিয়ে সৈকতে এসে বসে আছি। পর্যটক না থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না।

সৈকতের লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের আচার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গেলো এক সপ্তাহ আগেও প্রতিদিনই ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার আচার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন পর্যটক নেই বেচাবিক্রিও নেই। দোকান খুলে বসে আছি, সকাল থেকে এক টাকারও আচার বিক্রি করতে পারেনি।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে কক্সবাজারের পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় কক্সবাজার এখন পর্যটক শূন্য। যার ফলশ্রুতিতে কক্সবাজারের পর্যটনের সবখাতে প্রতিদিনই ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। সেলিম নেওয়াজ আরো বলেন, হরতাল ও অবরোধ এভাবে অব্যাহত থাকলে আমরা ব্যবসায়ীরা একদম শেষ হয়ে যাব। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন হরতাল ও অবরোধের মতো কোন কর্মসূচি যাতে আর না দেয়।

হোটেল-মোটেল জোনে হাজার হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীর এরকম পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে বেতনও তোলা যাবে না বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, পর্যটক, পার্বত্যাঞ্চল
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন