রামুবাসীর অভিশাপ হাইটুপীর ভাঙন!

ramu bonna 01 copy
নিজস্ব প্রতিনিধি:
রামুবাসীর অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফকিরাবাজার-জাদিপাড়া সড়কের হাইটুপী ভুতপাড়ার ভাঙ্গন। শুধু বন্যা নয়, এ ভাঙনের কারণে বাঁকখালী নদীতে পানি একটু বাড়লেই এখন প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার অন্তত ৪০ গ্রাম। এ ভাঙনের কারণে এখন নতুন করে হুমকির মুখে চৌমুহনী বাস স্টেশনসহ উপজেলা পরিষদ, রামু থানাসহ অর্ধ শতাধিক স্থাপনা। গত জুনের শেষে দিকে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় সপ্তাহব্যাপী পানিবন্দী থাকার পর হঠাৎ করে আবার টানা বন্যা দেখা দেওয়ায় মহা দুর্ভোগে পড়ে দুর্গত এলাকার মানুষ। এটি এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য “মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই দুর্গত মানুষ এখন ত্রাণ নয়,লাগাতার এ মহাদুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চায়।

টানা বর্ষণে হাইটুপী ভাঙন দিয়ে বাঁকখালীর উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলের পানি ঢুকে পড়ায় আটদিন ধরে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুলের বৃহত্তর মেরংলোয়া, আমতলিয়া পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, শ্রীমুরা, নাছিরা পাড়া, জারাইলতলি, নয়া পাড়া, মোহাম্মদ পুরা, শাহমদের পাড়া, আশকরখিল, নোনাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ডুবে আছে। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষের পেটে ভাত নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, নির্ঘুম রাত কাটে অসংখ্য মানুষের। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ।

অব্যাহত বর্ষণের কারণে ফসলি জমির পাশাপাশি মাছের ঘের, পুকুরগুলি তলিয়ে আছে এবং ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে রামুর কচ্ছপিয়ার শেষ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে চাকমারকুল শেষ সীমানা পর্যন্ত ৩৪ কিঃ মিঃ বাঁকখালীর দু’তীরে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে পানি আর পানি একাকার হয়ে গেছে। উঁচু জায়গা না থাকায় লাশ দাফন করতে হচ্ছে দূরবর্তী কোন গ্রামে। ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকার রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, হাট-বাজার, অফিস-আদালত, ঘর-বাড়ি, মাছের খামার, পুকুর, ফসলী জমি ও নিচু এলাকার মাঠঘাট। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবাদি ফসলের জমি, গাছ-পালা, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পার্শ্ব সড়ক ও সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। ডুবে গেছে শত শত একর বীজতলা। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় তলিয়ে যাওয়া ধানের ক্ষতির আশংকা করছে কৃষকরা।

শনিবার (১ আগষ্ট) বিকেলে উপজেলার মোহাম্মদ পুরা গ্রামের মাওলানা নুরুল হক জানান পুরো এলাকায় ডুবে থাকায় তার ৭ মাসের শিশু মোঃ সোহাগের মৃতদেহ দাফন নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েন তিনি। পরে অনেক কষ্ট করে শিশু সোাহাগের মৃতদেহ নৌকায় বহন করে দূর গ্রামে গিয়ে কবর স্থানে দাফন করেন বলে জানান।

চাকমারকুল শ্রীমুরা গ্রামের নুরুল আমিন মেম্বার জানান, হাইটুপী ভাঙনে বন্যার পানিতে চাকমারকুল শ্রীমুরা, নাছিরা পাড়া, শাহমদের পাড়া, জারাইতলি মোহাম্মদ এলাকার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তিনি জানান, এতে এসব গ্রামের নিচু এলাকার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। উপজেলার ৬টি স্কুলে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। শতাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। বিস্তীর্ণ জমিতে পানি জমে ধানের চারা ডুবে গেছে।

ভূত পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জানান, প্রতিবছর বর্ষা এলেই ফকিরা বাজার জাদিপাড়া সড়কটির কয়েকটিস্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্ঠি হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের বন্যায় নতুন করে বিধ্বস্থ হয় সড়কের ভুতপাড়া অংশটি। এরপর এ ভাঙ্গন সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি থেকে দফায় দফায় মোটা অংকের বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ বছর একইস্থানে বিশাল অংশ আবার বিধ্বস্ত হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ,প্রতি বছর এ ভাঙ্গন সংস্কারে মোটা অংকের বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়মের বর্ষা সরকারী বরাদ্দ পানিতে ভেসে যায়। পরে মানুষের অবর্ণণীয় দুঃখকে পূজি করে ভাঙ্গন ঠেকানোর নামে শুরু হয় লুটপাটের বাণিজ্য।

সুশাসনের জন্য জন্য নাগরিক সুজন রামুর সভাপতি ও মেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা মাষ্টার মো. আলম জানান, ভুতপাড়ার ভাঙন এখন রামুবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। বন্যার পানি বা পাহাড়ী ঢল নয়, একটু ভারি বৃষ্টি হলেই এখন বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

ভুতপাড়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, কারো বাড়ি-ঘরে চুলো জ্বলছেনা। তাই খাবারের জন্য হাহাকার তো আছেই। তবুও বলবো,আমরা ত্রাণ চাইনা,খাবার চাইনা, জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ চাই। এবং সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়,সেনাবাহিনীর তত্তাবধানে সিসি ব্লকসহ বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হউক।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান, টানা বন্যায় এই অঞ্চলের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তিনি আরও বলেন জরুরী ভিত্তিতে হাইটুপী ভাঙন মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন