রুমায় দেড় হাজার লোক নিরাপদ খাবার পানি সংকটে ভুগছে

????????????????????????????????????

রুমা প্রতিনিধি:

বান্দরবানের রুমা উপজেলার সদরে গভীর নলকূপ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিপাত শেষ হতে না হতেই খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। রুমা বাজার আশপাশের আরো কয়েকটি পাড়াসহ প্রায় সাড়ে চারশ পরিবারের দেড় হাজার লোকের নিরাপদ পানি সংকটে ভুগছে।

এ প্রতিবেদক সোমবার (৭নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, লুংছড়ি পাড়াস্থ মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (মা.ও.এ) ভবন সংলগ্ন একটি রিংওয়েলে পানি নিতে এসে লোকজন ভীর জমিয়েছে। সবাই কিশোরী ও প্রাপ্ত বয়স্ক নারী। এগিয়ে যেতেই কথা হয় এ পাড়ার প্রধান শৈহ্লাউ মারমা কারবারির সঙ্গে। তিনি বলেন, এপাড়ায় ৪৫পরিবার লোকজনের বসবাস। একটি মাত্র সচল রিংওয়েল। ইডেনরোড ও বাজারের লোকজনও পানি নিতে আসেন এ রিংওয়েল থেকে। এজন্য সকাল-বিকেল এখানে প্রায় সময় মানুষ ভীর জমায়েত লেগেই থাকে বলে জানালেন তিনি।

স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, বাজারের পার্শ্ববর্তী আশ্রম পাড়া, লেমুঝিড়ি পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, এডেন রোড পাড়া, নতুন গীর্জা পাড়া, লুংঝিরি পাড়া, মুসলিম পাড়া, লাইরুনপি পাড়া, ঘোনা পাড়া ও ইউপি এলাকার বাসিন্দারা খাবার পানি সংকটে ভোগেন। বর্ষা শেষ হতে না হতেই উপজেলা সদরে বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দেয়।

আশ্রম পাড়ার লোকজন জানায় বর্ষা শেষ হলে পানির জন্য একমাত্র ভরসা নাইক্যক ঝিরি। এই ঝিরিতে শুস্ক মৌসুমে পানি উৎস কবে যায়। অথচ তখন এখানে পানি চাহিদা বেশি থাকে। এ ঝিরি থেকে আশ্রম ও বড়ুয়া পাড়ার লোকজন ছাড়াও জাইঅন পাড়াবাসীরাও জিএফএস পাইপের মাধ্যমে পানি নিয়ে থাকে। কিছু অসৎ লোক ঝিরির এপার-ওপার নানান অজুহাতে গাছ কর্তন করে নিয়ে যায়। তাছাড়া পানি চাহিদার কথা চিন্তা নাকরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে ঘর নির্মাণের কথা বলে পাথরও উত্তোলণ করছে। এসব কারণে ঝিরির আশপাশে গাছ কর্তন ও পাথর উত্তোলণে পানি উৎসের প্রবাহ কমে যায়। এদিকে আশ্রম পাড়া, জাইঅন ও বড়ুয়া পাড়াবাসীর লোকজন পানির জন্য একমাত্র নির্ভরশীল এই নাইক্যক্ ঝিরির প্রাকৃতিক পানি উৎসের উপর। এতে স্বল্পের পানি উৎস থেকে পানি সংগ্রহের চাপ বাড়ায় স্থানীয় লোকজন পানি সংকটে পড়তে হয় বলে জানা গেছে। তবে গত অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি)‘র আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে নাইক্যক ঝিরির আশ্রম পাড়াঘাটে পানি সংরক্ষেনের জন্য ট্যাংক নির্মিত হলেও স্থানীয়দের  কোনো উপকারে আসছে না।

 লাইরুনপি পাড়া প্রধান সমখুব বম কারবারি জানান, পানি সরবরাহের জিএফএস পাইপ লাইন প্রায় একবছর আগে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। তা পাড়াবাসীর উদ্যোগে বহুবার মেরামত করা হলেও বর্ষা মৌসুমে অতিবর্ষনে প্রবল স্রোতের তোড়ে অধিকাংশ পাইপ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। ফলে এখন  পানি আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এঅবস্থায় বর্ষা শেষ হতে, না হতেই পানি সংকট তীব্রতর হতে চলেছে। পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে বর্তমানে সবচেয়ে নারীরাই বেশি কষ্ট শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পারেম লুসাই।

স্থানীয় নারায়ন চন্দ্র দাশ বলেন, মাত্র একটি রিংওয়েল থেকে লেবুঝিড়ি পাড়ার ৪০টি পরিবারের লোকজন খাবার পানি সংগ্রহ করায় এতে বেশি চাপ পড়ে। এজন্য গ্রীষ্ম সময় মাঝে মধ্যে রিংওয়েল থেকে পানি না পেলে পাড়াবাসীর পানি সংকটে পড়তে হয়।

বাজারে সাতকানিয়া রেষ্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক সৈকত দাশ বলেন, দোকানে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। গ্রাহকদের খাবার পানি একটি প্রাকৃতিক ঝরনা থেকে মজুরি দিয়ে আনিয়ে দৈনন্দিন পানি চাহিদা পূরণ করতে হয়। এটা খুবই ব্যয় বহুল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গীর্জা পাড়ায় ক‘টি রিংওয়েলের মধ্যে সচল মাত্র একটি। এখান থেকে ইডেন রোডসহ বাজারের লোকজনও পানি সংগ্রহ করছে। এতে শুস্ক মৌসুমে পানি লেয়ার কমে গেলে পানি সংকটে পড়ে যায় স্থানীয়রা। অচল রিংওয়েলগুলো সচল করা গেলে এডেন রোড-গীর্জা পাড়ার লোকজন খাবার পানি সংকট দুর হবে বলে জানালেন এডেন রোডের বাসিন্দা রোজিনা বম।

 এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা বলেন, নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে প্রায় এককোটি টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগের বাস্তবায়নে মিনি ফিল্টারিং পানি সরবরাহের প্রকল্পের কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে পানি সংকট আর থাকবেনা। তবে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা উপসহকারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান অসুস্থার কথা জানিয়ে ফোন কেটে দেন। ফলে কাজটি কবে নাগাদ শেষ হবে তা জানা যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন