রোমেল চাকমার মৃত্যু, লাশ দাহ ও অজানা কথা

ZZZZZ

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে দুইটি ট্রাকে আগুন দেবার ঘটনায় অভিযুক্ত মূল হোতা রমেল চাকমা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ দুপুরে মারা যায়। তিনি ৬ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, ২৩ জানুয়ারি রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় চাঁদার দাবিতে মালভর্তি ট্রাকে আগুন দেবার  ঘটনার সাথে জড়িত এবং মূল মদদ দাতা ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র কর্মী রমেল চাকমাকে ৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে নানিয়ারচর টিএন্ডটি বাজার এলাকা থেকে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আটক করা হয়। স্থানীয়দের থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে তদন্তের মাধ্যমে নানিয়ারচরে দুটি ট্রাকে আগুন দেবার মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামী রমেল চাকমাকে আটক করা হয়েছিল।

নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক সূত্র পার্বত্যনিউজকে জানান, রোমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী আটক করতে গেলে সে পাহাড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় পাহাড় থেকে রাস্তার উপর পড়ে যায়। সেসময় রাস্তায় চলমান সিএনজি থ্রি হুইলারের সাথে তার মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এদিকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রমেল চাকমা ট্রাকে অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তর পরবর্তী কালে, রমেল চাকমা শারীরিক অসুস্থতার কথা জানালে পুলিশ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

ZZZZZZZZZZZ

এরপর থেকে, ১৯ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমেলের আত্নীয়-স্বজন এবং ইউপিডিএফ ও পিসিপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতা/সদস্যরা তার সাথে নিয়মিতভাবে সাক্ষাৎ করেন।

পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভর্তির ১৩ দিন পর তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যু পরবর্তী ময়না তদন্ত শেষে রমেল চাকমার মরদেহ ২০ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে তার পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোবৎসরে ইউপিডিএফ রোমেলের বাবা মাকে সরিয়ে ফেলায় নিরাপত্তা বাহিনী তার বাবা মাকে খুঁজে পায়নি। এতে রোমেলের লাশ তার পিতামাতার কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ফলে রোমেলের লাশ গ্রহণ করেন তার মামা কুনেন্দ্র চাকমা।

এরপর রমেলের পরিবারের সদস্যরা পুলিশ সহকারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে নানিয়ারচর পূর্বহাতিমারায় তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আনুমানিক রাত ৮ টায় মরদেহ বুড়িঘাট এলাকায় পৌঁছালে প্রতিকূল আবহাওয়া ও রাতে লাশ না দাফনের সংস্কারের কারনে, তার পরিবারের সদস্যরা মরদেহ বুড়িঘাট এলাকায় উক্ত ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার বাবুলের দোকানে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

অতঃপর, ২১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখ সকালে তারা লাশটি রমেলের গ্রামের বাড়ি পূর্বহাতিমারায় নিয়ে গিয়ে দুপুরে তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতে ধর্মীয় রীতি-নীতি ও নিয়ম অনুযায়ী দাহ সম্পন্ন করে। লাশ দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় হেডম্যান পাইসা প্রু মার্মা, নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ, মহিলা মেম্বর নেকজান বেগম, ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার মফিজুল ইসলাম, ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার অংশুপ্রু মার্মা, ধর্মগুরু নাইন্দাগা (ভান্তে), রোনেলের মামা কুনেন্দ্র চাকমা। কাজেই রোমেল চাকমার লাশ পরিবারের কাছ থেকে ছিনতাই পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা।

18110558_10154644317198111_1440286651_n

ইউপিডিএফ সমর্থিত ৩নং বুড়িঘাট চেয়ারম্যান প্রমোদ খীসা জানিয়েছেন, বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রমেল মারা যায়। পরে পুলিশ হেফাজতে লাশটি বুড়িঘাটে রাত আটটায় পৌঁছায়। তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল।

এ বিষয়ে ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন,  “রাতে বৃষ্টি থাকার কারনে লাশটি আর গ্রামে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি পূর্বহাতিমারায় নিয়ে গিয়ে দুপুরে তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতে চাকমা প্রথা অনুযায়ী লাশ দাহ করা হয়।”

একই প্রসংগে নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে রমেল চাকমার লাশ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে তার পরিবারের সদস্যরা লাশ বুড়িঘাট পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু প্রচুর বৃষ্টি থাকার কারনে ঐদিন তার গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত লাশ পৌঁছাতে পারিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা মরদেহ বুড়িঘাট এলাকায় উক্ত ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার বাবুলের দোকানে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, গত ২১ এপ্রিল নানিয়ারচর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আজগর আলী, নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ, স্থানীয় গণ্যমান্য বাক্তিবর্গ এবং রমেল চাকমার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রমেলের গ্রামের বাড়ি পূর্বহাতিমারায় ধর্মীয় রীতি-নীতি ও প্রথা অনুযায়ী তার লাশ দাহ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “রোমেল চাকমার মৃত্যু, লাশ দাহ ও অজানা কথা”

  1. কত আর মিথ্যা খবর ছাপাইবা? যত মিথ্যা খবর ছড়ান না কেন কি সত্য তা সবাই জানে।সিনেমার মত গল্প বানাতে গিয়ে ত বেশি ধরা পরতেচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন