বাংলাদেশ- মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক পাইলট প্রকল্পের পরিবার যাচাই-বাছাই চলছে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সাক্ষাৎকার: এসব আলোচনায় জড়িত নয় ইউএনএইচসিআর

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের সমাজবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অং মিয়ো'র নেতৃত্বে ১৭ সদস্য এখনো টেকনাফ

টেকনাফে চলমান রোহিঙ্গা পরিবার যাচাই-বাছাই কর্মকাণ্ড চলছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এ কাজ এগিয়ে নিলেও ইউএনএইচসিআর এসব আলোচনায় জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন।

জানা যায়, বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তালিকা যাচাই-বাছাই করছে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম। বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে মিয়ানমারের ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সমাজবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অং মিয়ো’র নেতৃত্বে টেকনাফ স্থল বন্দর রেস্ট হাউজে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এর আগে বুধবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশের টেকনাফ-মংডু ট্রানজিট জেটি হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমারের ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম। এরপর সকাল ১১টার দিকে টেকনাফের স্থল বন্দরের রেস্ট হাউজে পৌঁছেন তারা। এদের মধ্যে টেকনিক্যাল টিমের ১৭ সদস্য রয়ে যান।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল টেকনাফ আসেন।
এ পর্যন্ত (১৯ মার্চ) ১৩২টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৩৬৮ লোকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে প্রতিনিধি দলটি। সার্বিক নিরাপত্তার মাধ্যমে বাসে করে ক্যাম্পের বসবাসকারী রোহিঙ্গাকে টেকনাফ স্থল বন্দরের ভেতরে রেস্টহাউজের পেন্ডেলে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে প্রতিটি পরিবারের লোকজনকে ডেকে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করা হচ্ছে । এসব কাজে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধিসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকেন।

তবে এই কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত নেই বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি রবিবার (১৯ মার্চ) একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে।
তা হলো এই, “জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক পাইলট প্রকল্পে শরণার্থীদের একটি দলের সাথে দেখা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে সফর সম্পর্কে অবগত। ইউএনএইচসিআর এসব আলোচনায় জড়িত নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইউএনএইচসিআরের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। ইউএনএইচসিআর-এর মূল্যায়নে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয়। একই সময়ে, আমরা পুনর্ব্যক্ত করি যে প্রতিটি শরণার্থীর একটি জ্ঞাত পছন্দের ভিত্তিতে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে, তবে কোনও শরণার্থীকে তা করতে বাধ্য করা উচিত নয়। বর্তমান সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

প্রত্যাবাসনের অধিকার সংরক্ষণের প্রচেষ্টার সমর্থনে, ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আলোচনা ও সংলাপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে যাতে শরণার্থীরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি সচেতন পছন্দ করতে পারে এবং তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক শরণার্থী পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে পরিস্থিতির অনুমতি পেলেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশা করেন।

আগস্ট ২০১৭ এর ঘটনার পর, শরণার্থীরা যখন তা করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রশাসনিক বাধাগুলি তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে শরণার্থীদের মিয়ানমারে পূর্বের বাসস্থানটি দ্রুত যাচাই করার জন্য মিয়ানমারকে ধারাবাহিকভাবে উৎসাহিত করেছে।

তাই ইউএনএইচসিআর সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যা সমস্ত শরণার্থীদের যাচাইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে পারে। এর মধ্যে সাম্প্রতিককালে কারিগরি যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য লজিস্টিক সহায়তা প্রদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সাথে কাজ চালিয়ে যাবে, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সম্পূর্ণরূপে অবহিত এবং স্বেচ্ছামূলক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, যখন তারা তা করতে চান তখন তাদের ফিরে যাওয়ার অধিকার বজায় রাখে।

ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। বাংলাদেশে, ইউএনএইচসিআর শরণার্থীদের শেষ প্রত্যাবর্তন এবং মিয়ানমারে টেকসই পুনঃএকত্রীকরণের সুবিধার্থে তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২৩ যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা সম্প্রতি চালু করা হয়েছে এবং ইউএনএইচসিআর এই আবেদনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত জোরালো সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে যা বর্তমানে ১০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউএনএইচসিআর, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন