লামার হ্লাসাইং মারমা পিতার হেফাজতে যেতে অস্বীকার করায় আদালতের নির্দেশে শশুরের হেফাজতে, স্বামী কারাগারে

ততকব্‌া

স্টাফ রিপোর্টার:

অপহরণের ১০দিন পর লামা উপজেলায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন সাপেরগারা গ্রামের হ্লাসাইং মারমা (১৩) কে ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার এর সহায়তায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত ২৪ মে রাতে নিজ বাড়ি থেকে বাঙালী প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায় মেয়েটি। পালিয়ে কক্সবাজার গিয়ে মেয়েটি ধর্মান্তরিত হয়ে প্রেমিককে বিয়ে করে। হ্লাসাইং মারমা হারাকাজা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। এঘটনায় মেয়েটির বাবা লামা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৪মে মঙ্গলবার বিকালে হ্লাসাই মারমা দাদির বাড়িতে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী মিজানুর রহমান, পিতাঃ সৈয়দ আহমদ তার ৫/৬ জন বন্ধু-বান্ধব সহ মেয়েটিকে অপহরণ করে। পরেরদিন বুধবার সকালে মেয়েটি বাড়িতে ফিরে না আসলে শুরু হয় খোঁজ। সকাল ৮টার দিকে মেয়েটির কাছ থেকে তার বড় বোনের ফোনে কল আসে। এসময় মেয়েটি বলে তাকে একদল বাঙালি ছেলে আটকে রেখেছে। কিন্তু অনেক খোঁজার পরেও না পাওয়ায় ২৬মে বৃহস্পতিবার মেয়ের বাবা বাদী হয়ে লামা থানায় অপহরণের মামলা করে।


আরো পড়ুন:

অপহরণ নয় ভালবেসে পালিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে প্রেমিককে বিয়ে করেছেন হ্লাসাইং মারমা


 

অপহরণের মামলা করায় ও স্থানীয় সাংবাদিকরা সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি করলে টনক নড়ে প্রশাসনের। উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফাঁসিয়াখালী চেয়ারম্যান। এদিকে মারমা তরুণী অপহরণের ঘটনায় ন্যায় বিচার পেতে ও তরুণী উদ্ধারে কয়েকটি উপজাতি সংগঠন মানববন্ধন, স্মারকরিপি প্রদান ও প্রতিবাদ সভা করে। সবদিক দিকে চাপ দেয়া হলে অবশেষে ২রা জুন ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার মিজান ও হ্লাসাইং মারমাকে নিয়ে লামা থানায় হাজির হয়।

এদিকে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়েটি জানায়, সে ভালবেসে প্রেমিক মিজানের হাত ধরে ঘর থেকে পালিযেছে এবং কক্সবাজার গিয়ে আদালতের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে প্রেমিক মিজানকে বিয়ে করেছে।

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত,কক্সবাজার-এ এফিডেভিট মূলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন হ্লাচো মারমা। পিতা: অংছা প্রু মারমা, মাতা: এনু মারমা, সাং- সাপেরগাড়া, ইউনিয়ন: ৩নং ফাঁসিয়াখালী, উপজেলা: লামা, জেলা: বান্দরবান পার্বত্য জেলা, বয়স: ২০বৎসর, পেশা: গৃহীনি, জাতীয়তা: বাংলাদেশী।

এফিডেভিটে উল্লেখ করেন, ‘আমি বিভিন্ন মুসলিম লোকজনের সাথে মেলা-মেশার সুবাদে এবং একজন সচেতন মহিলা হিসেবে ইসলাম ধর্মের গুণাগুন, দুনিয়া, আখেরাত, দোযখ, বেহেস্ত ও মানুষের সঠিক মূল্যবোধ,মানবতা ইত্যাদি সংক্রান্তে জেনে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ও অনুরক্ত হইয়া অদ্য ২৬/০৫/২০১৬ইং তারিখ সকাল ১০ঘটিকায় ইসলামী শরিয়াতের বিধান মোতাবেক পাঁচ কলেমা পড়ে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলাম এবং আমার পূর্বের বৌদ্ধ ধর্ম ও নিজপূর্ব নাম হ্লাচো মারমা ত্যাগ করিলাম।

অদ্য হইতে আমি একজন মুসলমান হিসেবে আমার নাম মোছাম্মৎ জন্নাতুল ফেরদৌস হিসেবে পরিচিত হইব এবং একজন সাবালক, সচেতন, বিবেকবান রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে স্বইচ্ছায়, স্বজ্ঞানে কাহারো বিনা বাধায়,বিনাপরোচনায় আমার উক্ত বৌদ্ধ ধর্ম পরিত্যাগ পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়া ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করিব’।

অপরদিকে একইদিন বিকেলে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে (কাজী অফিসে) গিয়ে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সরকারি নিকাহনামা মূলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সাপেরগাড়া, ইউনিয়ন: ৩নং ফাঁসিয়াখালী, উপজেলা: লামা, জেলা: বান্দরবান এলাকার মৃত ছৈয়দ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে একই এলাকার ইসলামধর্ম গ্রহণকারী জান্নাতুল ফেরদৌস এর।

মেয়েটি থানায় এই জানায়, সে স্ব-ইচ্ছায় ছেলেটির সাথে গিয়েছে। তাকে অপহরণ করেনি। সে এখন মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে মিজানকে বিবাহ করেছে। এছাড়া সে নিজেকে সাবালিকা দাবী করে বলে জন্মনিবন্ধন মতে তার বয়স ২৩ বছর।

এবিষয়ে মেয়ের বাবা অংছাপ্রু মারমা বলেন, আমার মেয়ের জন্মনিবন্ধনটা ভুল হয়েছিল। সে ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলের প্রত্যায়ন পত্র ও ৫ম শ্রেণীর পিএসসি সার্টিফিকেট মতে তার বয়স ১৩ বছর। সে নাবালিকা।

এদিকে ২মে বৃহস্পতিবার মেয়েটিকে লামা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেয়া হলে আদালত মেয়েটির বক্তব্য গ্রহণ করে। সে নিজেকে সাবালিকা দাবি করে মিজানের স্ত্রী বলে জানায়।

মেয়েটির পিতা মেয়েকে তার হেফাজতে নেয়ার দাবী করলে মেয়েটি তা অস্বীকার করে স্বামী ও শশুরের জিম্মায় থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

 আদালত ছেলেটিকে জেল হাজতে প্রেরণ করে ও মেয়েকে তার মত অনুসারে তার শুশুর (সৈয়দ আহমদ) বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন