শাহপরীরদ্বীপে র‌্যাবের তৎপরতায় তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারীরা পালাচ্ছে

মানবপাচার

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:
থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গলে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশী ও মিয়ানমার অভিবাসীদের গণকবর আবিস্কৃত হওয়ার পর টেকনাফে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাঁড়াশী অভিযান শুরু হলে ক্রসফায়ারে ৩ শীর্ষ মানব পাচারকারী নিহত হয়। এরপর চিহ্নিত মানব পাচারকারীরা সাগর পথে পালাতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, কাটাবনিয়া ও কচুবনিয়া এলাকার শীর্ষ মানব পাচাকারীরা আটক অথবা ক্রসফায়ার এড়াতে একটি বড় ট্রলারে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নিয়েছে। শীর্ষ মানব পাচারকারী নজির ডাকাতের নেতৃত্বে গুড়া মিয়ার মালিকানাধীন উক্ত ট্রলারে পাচারের গডফাদার হামিদ, গুড়া মিয়া, আব্দুল্লাহ তাদের বিশ্বস্ত বেশ কয়েকজন সহযোগীসহ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এলাকাবাসীর অনেকে জানিয়েছে এরা শুক্রবার রাতে উখিয়ার সোনারপাড়া এলাকা দিয়ে সড়ক পথে চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গেছে। মোঃ ইসলাম বাঘু মিয়ানমারে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গা ঢাকা দিয়েছে শাহপরীরদ্বীপের ফিরুজ, পোয়া মাঝি, কাটাবনিয়া-কচুবনিয়ার আইয়াজ, কেয়ায়েত উল্লাহ, জাবের, ডাইলা, মোজাহের মিয়া, মৌলভী বশির, তৈয়ুব, শামসু, ফরিদ মাঝি, নজিরের পিতা রকিম মাঝি ভাই আজম উল্লাহ, চাচা আব্দু গফুর, ক্রসফায়ারে নিহত জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর, শওকত, হারিয়াখালীর সাদ্দাম, ভুট্টা, আমান, শাহজাহানসহ শীর্ষ পাচারকারীরা। এছাড়া শাহপরীরদ্বীপ দিয়েও অনেক পাচারকারী প্রাণভয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

অপরদিকে মানব পাচার বন্ধে এবার টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে অস্থায়ী ক্যাম্প করে অবস্থান নিয়েছে র‌্যাব ৭ এর একটি টীম। র‌্যাব টিমটি শনিবার মানব পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে পরিচিত এবং সর্বপ্রথম মানব পাচার শুরু হওয়া টেকনাফের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও নাফনদী বেষ্টিত শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় অবস্থান নেয়। জানা গেছে, প্রায় ৩০ সদস্যের র‌্যাব টীম শনিবার সকালে শাহপরীরদ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ায় পর থেকে চিহ্নিত মানব পাচারকারীরা গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে। শাহপরীরদ্বীপে র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপিত হলে মানব পাচার স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প ইনচার্জ মেজর মোঃ জিয়াউর রহমান অবশ্য জানান, মানব পাচারের অন্যতম প্রধান রুট শাহপরীরদ্বীপ। কক্সবাজার র‌্যাব ক্যাম্প থেকে শাহপরীরদ্বীপে তৎপরতা চালানো কঠিন তাই এই রুট দিয়ে মানব পাচার প্রতিরোধে এই এলাকায় র‌্যাব এর একটি টীম অবস্থান নিয়েছে।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডে একের পর এক সাগর পথে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি ও মিয়ানমার নাগরিকদের গণকবর আবিস্কৃত হওয়ার পর টেকনাফসহ সারাদেশে তোলপাড় চলছে। টেকনাফের গ্রামে গ্রামে নিখোঁজ মালয়েশিয়াগামীদের পরিবারে কান্নার রুল চলছে। অপরদিকে গণকবর আবিস্কৃত হওয়ার পর থেকে দালালরা আতঙ্কের মধ্যে থাকলেও শুক্রবার ভোরে টেকনাফ থানা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ধলু হোসেন, জাহাঙ্গীর ও জাফর নামে ৩ শীর্ষ মানব পাচারকারী নিহত হওয়ার পর থেকে চিহ্নিত দালালরা গাঢাকা দিতে শুরু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন