সচল হলো টেকনাফ বন্দর : একদিনেই প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়

fec-image

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দুই দিনের কর্মবিরতির ঘোষণা থাকলেও প্রথম দিন রবিবার (২৯ জানুয়ারি) দুটি বিল অব এন্ট্রি বিপরীতে মাছ ডেলিভারি হয়েছে। এবং পরদিন সোমবার ৪১টি বিল অব এন্ট্রি”র বিপরীতে ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে শুল্ক বিভাগ। তা ছাড়া পুরো সচল হয়েছে টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিগুলো। নোঙর করে রাখা পণ্যভর্তি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ থেকে মালামাল আনলোড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে বন্দর সংশ্লিষ্টরা বিরাজমান সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে বাংলাদেশের টেকনাফ ও মিয়ানমারের মংডু কেন্দ্রিক সীমান্ত বাণিজ্য সচল রাখার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনফের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অবসরপ্রাপ্ত মেজর ছৈয়দ আনছার মো. কাউছার। তিনি জানান, ‘রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে বন্দরে পণ্য খালাস নিয়ে ঝামেলা তৈরি হলেও সোমবার থেকে পুরোদমে সচল হয়েছে টেকনাফ বন্দর।’

টেকনাফ স্থলবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দুই দিনব্যাপী কর্মবিরতি রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকালে শুরু হলেও বিকালে জিনাত এন্টারপ্রাইজ ও এশিয়া এন্টারপ্রাইজের মাছের দুটি চালান খালাস হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ স্থল বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) জসিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, ‘রবিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে দুটি বিল অব এন্ট্রির আমদানিকৃত মাছ বন্দর ছেড়েছে। আর আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ২২টি পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্দর ত্যাগ করেছে।

এসব ট্রাকে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুঁটকি, আচার, আদাসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সারাদেশে কর্মবিরতি চললেও টেকনাফ স্থলবন্দর কিন্তু ব্যতিক্রম। দিনের বেলায় বন্দরের অভ্যান্ত পণ্য লোড-আনলোড চলে আর সন্ধ্যার থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দর ছাড়ে। সোমবারও ৩৫টির বেশি ট্রাক আমদানি করা পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রওনা হয়েছে বলে একটি নির্ভরশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পণ্য পরিবহনের জন্য লোড -আনলোড চলছে। শ্রমিকেরা কর্মচঞ্চল হয়ে কাজ করছে। বন্দরের সামনে সড়কের পাশের দোকানপাটে লোকজনের আনাগোনা নিত্যদিনের মত রয়েছে। তবে বন্দরের প্রধান ফটকে একটি ব্যানার টাঙানো। সেখানে লেখা রয়েছে—সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি চলছে।

বন্দরের জেটিগুলোও সচল হয়ে আছে। নাফ নদীতে নোঙর করে আছে পণ্যভর্তি ৩০টির বেশি কার্গো ট্রলার ও জাহাজ। এসব ট্রলার ও জাহাজে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন ধরণের কাঠ, হিমায়িত মাছ, আদা, শুকনা সুপারি, শুঁটকি, নারকেল, আচারসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য নিয়ে এসেছে। সেই সব পণ্য আনলোড করা হচ্ছে। স্থলবন্দরে বিশাল এলাকাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের কাঠের স্তূপ রয়েছে। সেখানেও শ্রমিকরা কাজ করছেন।

বন্দরের শ্রমিকনেতা আজগর মাঝি বলেন, বর্তমানে স্থলবন্দরের জেটিতে ৩২টি কার্গো ট্রলার ও জাহাজভর্তি মালামাল রয়েছে। এসব মালামাল ওঠানামার কাজে ৫/৬ শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন।

স্থলবন্দরের কাস্টমস সুপার লুৎফুল হক বলেন, “সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মবিরতি পালন কালীন সময়ও রবিবার (২৯ জানুয়ারি) মাত্র ৩০ লাখ টাকার মত রাজস্ব আদায় হলেও সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ৪১টি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে শুধু টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে।

এর আগে মিয়ানমার থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রলার আটকের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছে টেকনাফ স্থল বন্দর ব্যবসায়ীরা। ধর্মঘটের কারণে রোববার সকাল থেকে মিয়ানমার থেকে জলপথে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ থেকে মালামাল ওঠানামা বন্ধ ছিল। জানা যায়, গত গত বৃহস্পতিবার ২৬ জানুয়ারি সকালে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রলারে অবৈধ চোরাচালানের খবরে টেকনাফ ২ বিজিবির একটি টহলদল একটি ট্রলার জব্দ করেন। এসময় পালিয়ে যাওয়া মাঝিমাল্লা ৪ জনকে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশে কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় থানায় হস্তান্তর করে তাদের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

তিনি আরো জানান, এসময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ট্রলারে থাকা ৫৭৪ বস্তা সুপারি ও ৮০টি কপি একটি ট্রলার আটক করে মামলা দিয়ে পণ্যসহ ট্রলারটি টেকনাফ শুল্ক গুদামে জমা দেয়া হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, “সম্প্রতি ৪ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে থানায় সোপর্দ করে মামলা দায়ের করেছে বিজিবি।”

এদিকে এ ঘটনাকে অন্যায় দাবি করে ব্যবসায়ী ও আমদানি প্রতিষ্ঠানসহ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন টেকনাফে কর্মবিরতি শুরু করে। পরে ওই দিন (রবিবার) বিকেলে স্থলবন্দরে উপজেলা প্রশাসন, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ স্থলবন্দর কতৃপক্ষের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, স্থলবন্দর জিএম অ্যাডমিন এন্ড সিকিউরিটি (অব.) মেজর ছৈয়দ আনছার মোহাম্মদ কাউছার, বন্দর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) জসিম উদ্দিন চৌধুরী , সিএন্ডএফ এসোসিয়েসন সভাপতি আমিনুর রহমান ওরফে আবদুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক এহতেসামুল হক বাহাদুর প্রমুখ।

বৈঠকের শেষে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, স্থল বন্দরের কর্ম বিরতির খবর পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করে ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি বিষয় নিয়ে কথা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ভবিষ্যতে এ ধরণের আর কোন ঘটনা না হয় ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করেন।

এব্যাপারে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বন্দরে একটি চক্র নানান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের কারণে সৃষ্ট সমস্যায় সরকার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মবিরতি চলছে উল্লেখ করে টেকনাফ স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান, ‌’রবিবার সকাল থেকে কোন পণ্য উঠানামা হয়নি। পঁচনশীল জাতীয় পণ্য খালাসে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, বন্দর, রাজস্ব
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন