সরকার ও বিজিবি সুনাম নষ্ট করতে এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে- রাঙামাটির ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বললেন ব্রি. জে. হাবিবুল করিম

Human chain pic-1

স্টাফ রিপোর্টার:

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ব্রি. জে. হাবিবুল করিম জানিয়েছেন, রাঙামাটির আসবাবপত্র ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি বিজিবির উপর যে অভিযোগ তা সর্বৈব মিথ্যা। সরকার ও বিজিবি সুনাম নষ্ট করতে একটি মহলের উষ্কানীতে এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, উনারা চাইছেন আমরা যাতে এই আটক অভিযান আর ভবিষ্যতে পরিচালনা না করি সেজন্য এসব করে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে।

 তিনি আরো বলেন, তারা কি করে না করে আমরা সব জানি। কয়েক ডজন ফার্নিচার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ধুয়া তুলে এই ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা ২ লক্ষ সিএফটি সেগুন কাঠ বছরে পাচার করে।  একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে এসব করে কিছু হবে না। কাদের ইন্ধনে তারা সরকারকে বিব্রত করতে চাইছে আমরা তাও জানি। তাদের অতীত কর্মকাণ্ডও আমরা জানি।

‘বিজিবি কর্তৃক অনুমোদিত আসবাবপত্র আটকের’ অভিযোগ এনে রাঙামাটির আসবাবপত্র ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনের প্রেক্ষিতে বিজিবি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার ব্রি. জে. হাবিবুল করিমের কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি পার্বত্যনিউজকে উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা সেকল জিনিসপত্র ধরেছি সেগুলো বন বিভাগের লোকদের উপস্থিতিতে যৌথ অপারেশনের মাধ্যমে ধরেছি। বনবিভাগ মালামালগুলো পরীক্ষা করেছে। তারা অবৈধ মালামাল পেয়েছে। ফলে তারা মালামালগুলো সিজ করেছে। আমাদের কাছে কোনো কিছু নেই।

তিনি আরো বলেন, তারা বলেছিলো একটি গাড়ীতে ৭-৮ লাখ টাকার মালামাল পরিবহণ করে থাকে। তাদের দুইটি গাড়ী ছিলো এর মধ্যে একটি ছিলো মিনি ট্রাক, আরেকটি ছিলো কাভার্ড ভ্যান। আমরা আটক করে বন বিভাগের কাছে যে মালামাল দিয়েছি তাতে বন বিভাগের হিসাবে সিজার ভ্যালু ছিলো ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। অথচ তারা বলছে আমরা নাকি ১৩ লক্ষ টাকার মালামাল গায়েব করে দিয়েছি। মাল আটক করা হয়েছে ৮ তারিখ দিবাগত রাতে। ৯ তারিখ বিকালের মধ্যে সিজার লিস্ট করে জমা দিয়েছে। বনবিভাগ মামলা করেছে। কাজেই মাল কোথায় আছে সহজেই বোঝা যায়। অথচ তারা বলছে মাল গায়েব করেছে বিজিবি। বন বিভাগও তো মামলা করেছে। মালামাল সিজার হয়ে পড়ে আছে । গায়েব করলাম কোথায়?

ব্রি. হাবিবুল বলেন, ২২ লক্ষ টাকার মালামাল আমরা জমা দিয়েছি। সমিতি নেতৃবৃন্দ বলছে, আমরা নাকি ১৩ লক্ষ টাকার মালামাল গায়েব করে দিয়েছি। তাহলে তো মোট মালামালের দাম হয় ৩৫ লক্ষ টাকা । প্রশ্ন হচ্ছে, দুইটি ট্রাকে কি করে ৩৫ লক্ষ টাকার মালামাল বহন করা যায়? সমিতি যেসব নামে এই অনুমতিগুলো নিয়েছেন বন বিভাগের ভাষায় এগুলোর কোনো বৈধতা নেই। তারা যেসব লোকজনের নামে এসব অনুমতি নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নেই। বেশিরভাগ সময় তারা একই পারমিটকে তিনটা ফটোকপি করে এডভোকেটকে দিয়ে সত্যায়িত তিনজনকে দিয়ে তিনদিক দিয়ে কাঠ পাচার করে। তাদের যখন ধরা হয় তখন তাদের কাছে কেন আসল পারমিট থাকে না?

বিজিবি কমান্ডার বলেন, আগামী সপ্তাহে আমরা বন বিভাগ, জেলা প্রশাসনসহ একসাথে বসবো। যাতে বৈধ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারে সেটা আমরা দেখবো। তবে কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বিজিবির বিরুদ্ধে ১১লক্ষ টাকার বৈধ আসবাবপত্র লুট ও ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ এনে অভিযোগে রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেছে আসবাবপত্র ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সংগঠনটির উদ্যোগে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কয়েক হাজার আসবাবপত্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।

এ অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি আসবাবপত্র ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পেয়ারু, ৭নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন, শ্রমিক নেতা রবিউল আলম ও ওমর ফারুক।

বক্তারা অবিলম্বে ‘লুটকৃত’ মালামাল ফেরত ও জড়িত বিজিবি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে বিচারের জন্য ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন ওই সংগঠনের নেতারা। অন্যথায় কঠোর কর্মসুচির হুশিয়ারি দেন তারা।

সমাবেশের আগে পৌরসভা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে মিলিত হয়।

উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ আগে রাঙামাটি থেকে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্রবাহী দুটি ট্রাকে চট্টগ্রামের খুলশি এলাকায় পৌঁছালে চট্টগ্রাম বিজিবি আসবাবপত্রসহ গাড়িটি তল্লাশির নামে আটক করে নিয়ে যায় বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন