সস্তায় এনার্জি বাল্ব বিক্রির নামে প্রতারণা

01-2-copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বেশি আলো আর বিদ্যুৎ খচরও  কম  হওয়ায় সাধারণ বাল্ব’র পরিবর্তে লোকজন ঝুকছে এনার্জি বাল্ব’র দিকে। তবে সাধারণ বাল্ব’র তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় অনেকের ইচ্ছে থাকলেও কিনতে পারছেনা এনার্জি বাল্ব।

আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে কিছু অসাধু সিন্ডিকেট। তারা শহর ও গ্রামে টমটম এবং সিএনজি নিয়ে রীতিমত মাইকিং করে বিক্রি করছে স্বল্পমূল্যের নিন্মমানের এনার্জি বাল্ব। তারা লোকজনকে প্রলোভন দিচ্ছে ৩শ টাকা দামের এনার্জি বাল্ব বিক্রি করছে মাত্র ১শ টাকায়। সাথে ৬ মাসের গেরান্টি কার্ডও থাকছে। সস্তা পেয়ে অনেকে এ নিম্নমানের এনার্জি বাল্ব ক্রয় করছে। আর এসব বাল্ব ক’দিন যেতে না যেতেই আলো কমে যায়, টিউব কালো হয়ে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায়। আর গেরান্টিকার্ড দেওয়া সেই ভ্রাম্যমান এনার্জি বাল্ব বিক্রিতাকেও পাওয়া যায় না। এছাড়া অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এসব ভ্রাম্যমান বিক্রেতার কাছ থেকে কমদামী বাল্ব কিনে দামী বাল্ব’র সাথে চালিয়ে দিচ্ছে। আর চরম ভাবে প্রতারিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী লোকজন ও সংশ্লিষ্টরা।

শহরের বেশ কিছু ইলেক্ট্রনিক্স’র দোকান ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কোম্পানি’র ৩০-৩২ ওয়ার্ডের এনার্জি বাল্ব বিক্রি করছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। ২০-১৫ ওয়ার্ডের বাল্ব বিক্রি করছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। এসব বাল্বে  বিদ্যুৎ খরচ কম ও টিকে বেশি দিন। সাথে থাকে ১বছরের গেরান্টিকার্ড।

অন্যদিকে দেখা যায়, শহর ও গ্রামে টমটম এবং সিএনজি নিয়ে মাইকিং করে বিক্রি করছে ১শ টাকা দামের এনার্জি  বাল্ব। তারাও ৬মাসের গেরান্টিও দিচ্ছে। যদিও তাদের  দেওয়া  গেরান্টিকার্ড আর ইলেক্ট্রনিক্স’র  দোকানে দেওয়া গেরান্টিকার্ডের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। যেখানে থাকেনা সিলভার বা গোল্ডেন রঙের স্টিকার। তারা মাইকিং করার সময় বলে, ৩শ  টাকা  দামের এনার্জি বাল্ব বিক্রি করছে মাত্র  ১শ  টাকায়। সুযোগ  স্বল্প  সময়ের জন্য।

খবর নিয়ে জানা যায়, এসব ভ্রাম্যমান এনার্জি  বাল্ব বিক্রেতারা ৬মাস তো দুরের কথা এক এলাকায় ১ সপ্তাহের বেশি থাকে না। যার ফলে বাল্ব নষ্ট হয়ে গেলেও আর ওই গেরান্টি কার্ড আর কাজে লাগেনা। এছাড়াও সব গেরান্টিকার্ড নিয়েও লোক মুখে নানা কথা রয়েছে। তারা বলছে ওই কার্ড গুলো কম্পিউটার থেকে  ছাপানো হয়েছে।

সস্তা এ বাল্ব গুলোর ফলাফল খুবই খারাপ বলে জানান ভোক্তভূগীরা। তারা বলছে, এসব বাল্বে কয়েক দিনের মধ্যেই আস্তে আস্তে আলো কমে যায়। টিউব কালো হয়ে যায় এবং চুড়ান্ত ভাবে ১-২ সপ্তাহের বেশি টিকেনা।

শহরের বাহার ছড়ার নাছির আহম্মদ নামে এক যুবক জানান, তিনি সস্তা পেয়ে ভ্রাম্যমান এনার্জি বাল্ব ক্রেতা থেকে  ৪টি বাল্ব নিয়েছে। এ ৪টিবাল্ব’ই নষ্ট হয়ে গিয়েছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। এ সব নষ্ট হওয়ার আগে আস্তে আস্তে আলো কমে যায়। টিউব কালো হয়ে যায়। পরে  দোকান  থেকে  আসল এনার্জি বাল্ব কিনে রক্ষা পায়।

শহরের খুরুশকুল সড়কের ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল বিক্রির প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স’র মালিক আহসান উদ্দিন আহমদ জানান, এসব অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে শুধু লোকজন ঠকছে না পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বিক্রি কমে গেছে এ নিম্নমানের এনার্জি বাল্ব’র কারণে। এ সিন্ডিকেট ছাড়াও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা ভ্রাম্যমান বিক্রেতা থেকে বাল্ব ক্রয় করে ভাল ও বেশি দামের বাল্ব’র সাথে মিলিয়ে বিক্রি করছে। এতে ঠকছে ক্রেতারা। আর তাদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরাও বদনামের ভাগি হচ্ছে।

এ নিম্নমানের বাল্ব কোথা থেকে আনে এমন প্রশ্নে এনার্জি বাল্বের একটি  কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার মো. রহিম জানান, এসব মাল আসে চায়না থেকে। তারা ভালমালের জন্য ভাল দাম। আর নিম্নমানের বাল্ব’র জন্য নিম্নদামে বিক্রি করছে। এছাড়া এ নিম্নমানের বাল্ব আসে দালালদের মাধ্যমে সরকারের কর ফাঁকিদিয়ে।

আইটি বিশেষজ্ঞ সুমন সর্মা জানান, কমদাম দেখে এসব নিম্নমানের লাইট ক্রয় করার কোন অর্থ নেই। এসব বাল্বে আলো কম এবং দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই একটু দাম বেশি হলেও ভাল এনার্জি  বাল্ব ক্রয় করা উচিত। যাতে করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় এবং আলোও ভাল পায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন