হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: নিহত ১ আহত ৪: অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ক্রিকেটার সাকিব
উখিয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধি: (আপডেইট)
কক্সবাজারের উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ১ জন নিহত ও ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৬ই সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ইনানী সী-পার্ল হোটেলে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে হেলিকপ্টারটি দূর্ঘটনায় পতিত হয়।
নিহতের নাম শাহ আলম বলে জানা গেছে। তিনি বেসরকারী একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মকর্তা। আহতরা হলেন হেলিকপ্টারের পাইলট উইং কমান্ডার শফিক, সহকারী পাইলট শরীফুল ইসলাম সহ অপর দুই জন যাত্রীকে কক্সবাজারের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে বলে উখিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল মালেক মিয়া জানান।
এ দূর্ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি বহন করছিলেন তাকে। তাকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার কয়েক মিনিট পরই এই দূর্ঘটনা। ঈগল বি এজেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নিতে সাকিব ওই হেলিকপ্টারে কক্সবাজারে গেছেন।
কক্সবাজার ফায়ার ডিফেন্স সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো: আবদুল মালেক জানিয়েছেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার স্যুটিং করতে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় মেঘনা এভিয়েশনের একটি প্রাইভেট হেলিকপ্টার যোগে ইনানীর সী-পার্ল হোটেলে আসে। সাকিবকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে হেলিকপ্টারটি সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকতে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কক্সবাজার ক্যাম্পের সি.পি.ও বজলুর রশিদ সহ ফায়ার সার্ভিসের একদল উদ্ধার কর্মী দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ গ্রহণ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর সোনারপাড়া গ্রামের নৌকার মাঝি মো: আবছার (৫৫) ও পোনা সংগ্রহকারী আবুল বশর (২০) জানান সকাল সাড়ে নয়টার দিকে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে সমুদ্র সৈকতে পড়ে যায়। বিকট শব্দ শুনে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদেরকে উদ্ধার করে উখিয়া ও কক্সবাজারে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। তারা আরো জানান, এসময় হেলিকপ্টরের মধ্যে পাইলট সহ ৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পান।
এদিকে খবর পেয়ে নৌবাহিনীর প্রধান রিয়াল এ্যডমিরাল নিজামসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাঈন উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান জনগণের সহযোগীতায় কোষ্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও বি.জি.বি সদস্যরা দূর্ঘটনায় কবলিত হেলিকপ্টারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সাগরের পানি থেকে উদ্ধার করেছেন।
কক্সবাজার বিমান বন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত জানিয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ইনানীর একটি পাঁচ তারকা মানের হোটেলে নামিয়ে ফেরার পথে উখিয়ার সোনার পাড়া রেজুখালের ব্রীজ সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতে বিধ্বস্ত হয়।
বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি সেকান্দার আবু জাফর হিরো জানান, সকালে সাকিবকে হোটেলে নামিয়ে দেওয়া হয়। ফেরার পথে তাদের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারী শরিফুল ও শাহ আলম (৩৫) হেলিকপ্টারটিতে ওঠেন। এ সময় পাইলট নিচ দিয়ে হেলিকপ্টারটি চালিয়ে নিচ্ছিলেন।
ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম সাকিবের খোঁজ নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। গণমাধ্যমকে তিনি জানান সাকিব তাকে বলেছেন, ‘‘আমি নিরাপদে আছি। কোনো অসুবিধা নেই। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি’’।
এদিকে সাকিবের সঙ্গে কক্সবাজারে শুটিং করতে যাওয়া নাফিজ আহমেদ মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমরা নিরাপদেই ল্যান্ড করেছি। আমাদের নামিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আরও কজন যাত্রী নিয়ে হেলিকপ্টারটি ফিরে যাচ্ছিল। হেলিকপ্টারের পাখা তখনো বন্ধই হয়নি। শুধু আমাদের নামিয়েছে আর ওদের তুলে নিয়েছে। এরপর কিছু দূর গিয়ে ইনানি সৈকতেই হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।’
স্বাভাবিকভাবেই সাকিব কেমন আছেন এ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রবল উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নাফিজ আশ্বস্ত করেছেন, ‘আমরা সবাই নিরাপদেই আছি। ফিরে যাওয়ার পথে ঘটনাটি ঘটেছে। এর আগেই আমরা নেমে যাই। যত দূর জানি, হেলিকপ্টারের পাইলট আর তাঁর পাশে বসা যাত্রীই বেশি আঘাত পেয়েছেন। পাশে বসে ছিলেন শাহ আলম ভাই। তিনি মারা গেছেন। আর পাইলটকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তিনজন আহত হয়েছেন এই ঘটনায়।’
এদিকে দরজা খুলে সেলফি তুলতে ও ভিডিও করতে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ‘S2-AIB, R-66’ নামে হেলিকপ্টারটি- পার্বত্যনিউজকে এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের।
দুর্ঘটনায় আহত পাইলট শফিকুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি জানান, হেলিকপ্টার সাকিব আল হাসানকে ইনানিতে নামিয়ে দিয়েই ফেরার পথে পাইলটের কথা অমান্য করে নিহত শাহ আলমসহ অন্যরা হেলিকপ্টারের দরজা খুলে ছবি তুলছিল ও ভিডিও করছিল। এসময় বাতাসের তারতম্যে ভারসাম্য হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টারটি।
এদিকে উখিয়া সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল মালেক মিয়া জানান, বর্তমানে উখিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি রয়েছে। মেঘনা অ্যাভিয়েশনের লোকজন এলেই শনিবার সকালে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।